চট্টগ্রামে এবার রেকর্ড ছাড়িয়ে আমন আবাদ

68

করোনাকালের মধ্যেই চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলে আমনের আবাদ অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এবার সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার চারশ ৪৩ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কৃষকরা এখন আমান চাষাবাদের একবারে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। এরই মধ্যে আবাদের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আমন চাষ হচ্ছে। করোনাকালে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কায় কৃষকরা ধান চাষে মনোনিবেশ করছেন। ফলে এখন আর কোনও জমি পতিত থাকছে না। তাছাড়া, আমন চাষাবাদ সম্পূর্ণ প্রকৃতি নির্ভর। তাই খরচও তুলনামূলক কম। উন্নত বীজ আর সারের সাথে শ্রমিকের মজুরির পেছনেই খরচ সীমাবদ্ধ থাকে। সেচের বাড়তি খরচের প্রয়োজন হয় না। করোনাকালে অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামমুখী হওয়ায় এবার স্বাভাবিক মজুরিতে পর্যাপ্ত কৃষি শ্রমিকও পাওয়া গেছে। বীজ ও সারের সরবরাহ যেমন স্বাভাবিক রয়েছে, তেমনি প্রণোদনা হিসেবে সরকার দামও কমিয়েছে। দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চল দীর্ঘমেয়াদী বন্যায় আক্রান্ত হলেও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বড় কোনও বন্যা বা পাহাড়ি ঢলও হয়নি। সময়মত স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হওয়ায় জমিতে চাষাবাদের উপযোগী পানিরও কোনও সঙ্কট নেই। যথাসময়ে বীজতলা প্রস্তুত করে ধানের চারা রোপণ করা গেছে। অন্যবারের চেয়ে এবার হাইব্রিড ও উচ্চ ফলনশীল বা উফশী জাতের ধানের আবাদ বেশি হচ্ছে। মৌসুমের শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূল থাকলে আমনের ফলনও ভাল হবে বলেই আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। আবাদের একেবারে শেষসময়ে এসে এই অঞ্চলের আবাদি জমিতে তাই চাষীরা এখন দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন। কয়েকদিনের মধ্যেই আমন আবাদের কাজ শেষ হবে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মঞ্জুরুল হুদা পূর্বদেশকে বলেন, করোনাকলে এই অঞ্চলের কৃষি আরও সমৃদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য খাত হিসেবে হাজির হয়েছে। ধানের পাশাপাশি হরেক রকম ফল-ফসলের আবাদে ব্যস্ত এই এলাকার কৃষক। বিদেশফেরত প্রবাসীদের অনেকেও গ্রামের বাড়িতে এসে কৃষি এবং খামারের কাজে নিজেকে যুক্ত করেছেন। কৃষি বিভাগও তাদের সবধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। কৃষিতে রীতিমত বিপ্লব হচ্ছে, আর তাতে খাদ্যনিরাপত্তাও সুসংহত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলের আওতাধীন পাঁচ জেলা যথাক্রমে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষীপুরে ২০২০-২১ অর্থবছরে পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার চারশ’ ৪৩ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এরইমধ্যে তা অতিক্রম করেছে। এ অঞ্চলে আবহাওয়া অনকূল থাকলে এবার ধান উৎপাদনও ১৫ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে বলে আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
জেলা পর্যায়ে আমন আবাদের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম জেলায় এক লাখ ৮৪ হাজার পাঁচশ’ ৬০ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও এরইমধ্যে আবাদের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। কক্সবাজার জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৮২ হাজার হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার কিছু বেশি জমিতে। নোয়াখালীতে লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৫০ হাজার ৫৫ হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে এক লাখ ৫৪ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে। ফেনীতে ৬৮ হাজার চারশ ৩২ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আবাদ হয়েছে ৬৯ হাজার ছয়শ হেক্টর এবং ল²ীপুরে সাড়ে ৭৪ হাজার হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আবাদ হয়েছে ৭৮ হাজার আটশ ৯০ হেক্টর জমিতে। গত মৌসুমে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম জেলাতেই পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে সাত হাজার একশ পাঁচ হেক্টর বাড়িয়ে এক লাখ ৮২ হাজার ছয়শ ৯৪ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রার নির্ধারণ করা হয়েছিল। চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ায় ধানের উৎপাদনও চার লাখ ৮৯ হাজার একশ ৯৫ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যায়।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, অধিক ফলনের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় চট্টগ্রাম অঞ্চলে আবাদযোগ্য জমিতে চলতি আমন মৌসুমে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে। এর আলোকেই কৃষকরা জমিতে নানা জাতের ধান চাষ করছেন। জমির ধরণ অনুযায়ী বিভিন্ন জাতের হাইব্রিড ধানের পাশাপাশি স্থানীয় জাতের রাজাশাইল, কাজলশাইল, কালামোটা, চাক্কল, গিউস, বিন্নি, কালিজিরা ও বালাম ধানের আবাদ বেশি হয়েছে।