চট্টগ্রামের ১৬ আসনের ৫টিতে নতুন মুখ

50

রাহুল দাশ নয়ন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছে। গতকাল বিকালে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ২০টি আসনের মধ্যে ছয়টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি আসনে এসেছে নতুন মুখ। বাকি তিনটিতে অতীতে মনোনয়ন পাওয়া নেতারা পুনরায় মনোনয়ন পেয়েছেন। পরিবর্তিত হওয়া ছয়টি আসনসহ মোট আটটি আসনে মনোনয়ন পাওয়া নৌকার প্রার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। জোট ভাগাভাগি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে টেনশনে আছেন এই প্রার্থীরা। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া এবং দলের নেতা ও ব্যক্তিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবে বলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ঘোষণার পর টেনশন বেড়েছে আট প্রার্থীর।
গতকাল সকালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের সাথে মতবিনিময়কালে নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে নৌকার প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা অন্যান্য দলের কেউ প্রার্থী হলে তাকেও সহযোগী ও উৎসাহ দেওয়ার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
দলীয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে মাহাবুব উর রহমান রুহেল, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে মাহফুজুর রহমান মিতা, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড) আসনে এসএম আল মামুন, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে মোহাম্মদ আবদুস সালাম, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী) আসনে নোমান আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী) আসনে মহিবুল হাসান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং) আসনে মহিউদ্দিন বাচ্চু, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর) আসনে এম. আবদুল লতিফ, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে নজরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে সালাহ উদ্দীন আহমদ, কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার-৩ (সদর) আসনে সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার-৪ (টেকনাফ-উখিয়া) আসনে শাহীন আক্তার, খাগড়াছড়িতে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, রাঙ্গামাটিতে দিপংকর তালুকদার, বান্দরবানে বীর বাহাদুর উ শৈ সিং নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) পিতার আসনে মনোনয়ন প্রথমবারের মতো নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে মাহাবুব উর রহমান রুহেল। রুহেল মনোনয়ন পেলেও এ আসনে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) খাদিজাতুল আনোয়ার সনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলেও জোটের কাছে আসনটি ছেড়ে দিতে হয়েছিল। পরে তাঁকে সংরক্ষিত সংসদ সদস্য করা হয়। এবারও সনিকে মনোনয়ন দেয়া হলেও তিনি স্বস্তিতে নেই। এ আসনটি তরিকত ফেডারেশনের জোটগত আসন হওয়ায় আবারও আসনটি ছাড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড) আসনে সীতাকুন্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আল মামুন এবার প্রথমবারের মতো দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এ আসনের গেল দুইবারের দলীয় প্রার্থী দিদারুল আলম এবার স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে পারেন। চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এবার সেখানে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালাম নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। নৌকার মনোনয়ন পেয়েও স্বস্তিতে নেই হেভিওয়েট এই প্রার্থী। আসনটি নিয়ে ইতোমধ্যে জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ভাগিয়ে নিতে মরিয়া। যে কারণে প্রতীক বরাদ্দের আগে এ আসনে প্রার্থী হিসেবে সালাম বহাল থাকবেন কিনা তা নিয়ে সন্দিহান নেতাকর্মীরা।
হাটহাজারী আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী পূর্বদেশকে বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর ধরে সমঝোতার ভিত্তিতে সেখানে জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবার সালাম ভাই ডামি প্রার্থী হিসেবে মনোয়নন পায়নি। উনি নির্বাচন করবেন। যদিও আসনটি রাখা হবে নাকি ছাড় দেয়া হবে সেটি হাইকমান্ডের বিষয়। আমরা প্রত্যাশা করবো সালাম ভাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এ আসন থেকে নির্বাচিত করুক।’
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এ আসনের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। যে কারণে এ আসনে দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী ছেলে শারুন চৌধুরী ফেসবুকে তার পিতা নির্বাচন করবেন বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী মনোনয়ন পেলেও স্বস্তিতে নেই। এ আসনের মনোনয়ন বঞ্চিত সাতকানিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মোতালেব নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। যে কারণে সাংসদ নদভীর সাথে মোতালেবের প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ নির্বাচন হবে।
সাতকানিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি এম.এ মোতালেব বলেন, ‘একটি দেশের চাপের কারণে উনাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমাকে নির্বাচন করার জন্য পার্টির সাধারণ সম্পাদক রেজুলেশন করে নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই আমি নির্বাচন করবো।’
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এ আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়া মুজিবুর রহমান সিআইপি ইতোমধ্যে নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ভোটের মাঠে উৎসব করার ঘোষণা দিয়ে নেতাকর্মীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের কথা বলেছেন। আমি এমন বক্তব্যে উজ্জীবিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে নির্বাচনী মাঠেই আছি।’
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া) আসনের মনোনয়ন বঞ্চিত সংসদ সদস্য জাফর আলম মনোয়ন পাওয়া প্রার্থী সালাহ উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে তৎপর আছেন। তার অনুসারীরা বলছেন, ‘দলের নির্দেশনা পাওয়ার পর তিনি নির্বাচনে মাঠে আছে।’