চকরিয়া-লামা আলীকদম সড়কে যান চলাচল বন্ধ

91

বান্দরবানের লামা-আলীকদম-চকরিয়া সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছে। এতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে যান চলাচল বন্ধ করে এ কর্মবিরতি পালন করছেন সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।
সড়কে বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালুর খবরে হঠাৎ যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন তারা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীসহ সব যাত্রী। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ ছিল। সমস্যা সমাধান না হলে আজ শনিবারও কর্মবিরতি চলতে পারে বলে জানান পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা।
জানা গেছে, আলীকদম-লামা-চকরিয়া সড়কে বিআরটিসি বাস চালু করা হবে- এ খবর পেয়ে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গতকাল সকাল থেকে হঠাৎ যান চলাচল বন্ধ করে দেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এতে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে লামা-আলীকদম ও পাশের বমুবিলছড়ি এলাকার কয়েক হাজার ঘরমুখো মানুষ বেকায়দায় পড়েন। এছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত অনেকে সপরিবারে নববর্ষের ছুটি কাটাতে এসে চকরিয়ায় অটকা পড়েন। ফলে নববর্ষের আনন্দ উপভোগের আনন্দ মাটি হয়ে গেছে বলে তাদের অভিযোগ। আবার অনেকে সপরিবারে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে গেছেন।
স্থানীয় মো. হাসান, বিলাশ, রামং ত্রিপুরা, সেলিম উদ্দিন, খাতিজা বেগম ও ইকবাল সোবহান অভিযোগ করে বলেন, আলীকদম-লামা-চকরিয়া সড়কে পরিবহন শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে লামা-আলীকদম ও চকরিয়া উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। তারা যাত্রী সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা ইচ্ছেমত ভাড়া বৃদ্ধি, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহার সময় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করেন এবং বাস ও জিপগুলো স্টেশন ছাড়াও যেকোন স্থান থেকে অতিরিক্ত যাত্রী নিচ্ছেন এবং নামাচ্ছেন। এর প্রতিবাদ করলে জিপ-বাস মালিক ও চালকরা যাত্রীদের লাঞ্ছিত করেন।
এদিকে বাস চালক মো. বেলাল ও গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমরা ১৯৮৬ সাল থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লামা-আলীকদম উপজেলায় যাত্রীদের সেবা দিয়ে আসছি। এই সড়কে আমাদের চালক ও শ্রমিক ভাইদের রক্ত মিশে আছে। এতদিন কষ্ট করে আমরা সেবা দিয়ে আসছিলাম। বর্তমানে বিআরটিসি বাস চালুর উদ্যোগ মানে আমাদের পেটে লাথি মারা।
আলীকদম-লামা-চকরিয়া সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মো. জামশেদ উদ্দিন ও সড়ক পরিবহন শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কফিল উদ্দিন জানান, আলীকদমের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতিকে না জানিয়ে বিআরটিসির পরিবহন চালুর চেষ্টার প্রতিবাদে এই ধর্মঘটের ডাক দেন।
তিনি বলেন, আরকান সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক সমিতির চকরিয়া, লামা ও আলীকদম শাখার নেতৃবৃন্দকে ডিঙ্গিয়ে বিআরটিসির পরিবহন চালু করা সরকারের সাথে সম্পাদিত চুক্তির সম্পুর্ণ পরিপন্থী ও বেআইনি।
জন দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করতেই তিনি জানান, আমরা সমঝোতায় আসতে প্রস্তুত আছি। যারা আমাদের সাথে আলাপ-আলোচনা না করে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে বিআরটিসির গাড়ি চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন, তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।
এ বিষয়ে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দার বলেন, শ্রমিক ও মালিক সমিতিগুলোর কার্যালয় লামা-আলীকদমে নেই, সমস্যা সমাধানে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। লামা ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বাস মালিক ও শ্রমিক সমিতির নেতাদের সাথে আলোচনা চলছে। দ্রæত সড়ক চলাচল স্বাভাবিক হবে।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতি কর্তৃপক্ষের সাথে উপজেলা প্রশাসনের কোন জটিলতা নেই। তাদের জটিলতা আলীকদমের সাথে। তাই তারা চাইলে চকরিয়া-লামার মধ্যে পরিবহন চালু রাখতে পারেন। বিষযটি নিয়ে সকাল থেকেই সমন্বয় করে আসছি।