চকরিয়ায় সেনাবাহিনীর কর্মকান্ডে মানুষের সাড়া

62

কক্সবাজারে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সেনাবাহিনীর সার্বিক কর্মকান্ডে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া মিলেছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা কার্যক্রম শুরু করে সেনা সদস্যরা। এরপর কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, কলাতলী এলাকা ও ফিশারিঘাট এলাকায় জনসচেতনতা কর্মকান্ডের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর তত্ত¡াবধানে জেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে শতাধিক দুস্থ ও খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষের মধ্যে চাল, ডাল, আলু, লবণ ও তেলসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী বিতরণ করেন তারা।
এ সময় ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার কক্সবাজার এরিয়া মেজর জেনারেল মো. মাঈন উল্লাহ চৌধুরী নেতৃত্বে সকালে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিতে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমদ, ২ পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আলীমুল আমীন, জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনসহ সামরিক এবং বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
করোনা ভাইরাস সংক্রনরোধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম শেষে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ সাগরপাড় সংলগ্ন আর্মি ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের জলতরঙ্গে অনুষ্ঠিত করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত কনফারেন্সে যোগদান করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার (কক্সবাজার এরিয়া) মেজর জেনারেল মো. মাঈন উল্লাহ চৌধুরী।
সভায় ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি’র নেতৃত্বে পরিচালিত জনসচেতনতামূলক কর্মকান্ডের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন স্থানে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অসহায় ও দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে বিচ্ছিন্নভাবে ত্রাণ বিতরণ কর্মকান্ড পরিচালনা করে তাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহŸান জানানো হয়।
কক্সবাজার ডিসি অফিসের সামনে জুতা সেলাই ও পলিশের কাজ করেন নির্মল শীল। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সরকারের নির্দেশনা মেনে গত ছয়দিন তিনি বাসায় থাকলেও জমানো টাকা ও খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের কথা চিন্তা করে কাজে বের হয়েছেন। জেলা প্রশাসন ও সেনা সদস্যদের ঝটিকা ত্রাণ বিতরণের সময় তিনিও এক প্যাকেট ত্রাণ পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে যান। অশ্রæসজল চোখে তিনি জানান, তার মতো হতদরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের এভাবে সহযোগিতা করলে তারা দুর্যোগ কেটে না যাওয়া পর্যন্ত আর বাইরে বেরোবে না।
একই অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেন রিকশা চালক মজনু আলী। তিন ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের একটি গ্রামে। শহরে রিকশা চালিয়ে ভালো আয়-রোজগারের জন্য একটি মেসে কষ্ট করে থাকেন। জমানো টাকা দিয়ে গত ৬-৭ দিন কেটে গেলেও পেটের তাগিদে বাধ্য হয়ে রিক্সা নিয়ে বের হয়েছেন শুক্রবার। কিন্তু আশানুরূপ যাত্রী না থাকায় যখন হতাশাবোধ করছিলেন তখনই এই ত্রাণ পেয়ে তার মুখে খুশির হাসি ফোটে। তিনি জানান, আগামি ১০ দিন তিনি আর বাসার বাইরে বের হবেন না।
‘আপনার সুস্থতাই আমাদের কাম্য’ এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২৪ মার্চ থেকে কক্সবাজার জেলা এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের আটটি উপজেলায় রামু সেনানিবাসের সদস্যরা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরিতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতার লক্ষ্যে দিন-রাত কাজ করে চলেছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় বিগত কয়েকদিন ধরে এই জনপদের অসচ্ছল, খেটে খাওয়া ও দরিদ্র মানুষদের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সাধারণ মানুষদের বাসায় অবস্থান নিশ্চিত করা, বিনা প্রয়োজনে বাইরে চলাচলরত ব্যক্তিদের ফুল দিয়ে ঘরে ফেরানোর উদ্যোগ গ্রহণ, শহর-গ্রামের বিভিন্ন স্থানে হাত ধোয়ার বেসিন স্থাপন এবং করোনা প্রতিরোধে নানা ধরণের সচেতনতামূলক কার্যক্রম বেগবান করার মধ্য দিয়ে রামু সেনানিবাসের সদস্যরা ইতোমধ্যে সব শ্রেণির মানুষের ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করেছেন। জনকল্যাণে সেনাবাহিনীর গৃহীত এ ধরণের কর্মকান্ড ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।