চকরিয়ায় সওজ’র জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ

42

চকরিয়ার লক্ষ্যাচর ইউনিয়নে জিদ্দাবাজারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) জায়গা দখল করে অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়। সেখানে নতুন সড়ক প্রশস্তকরণে ভবনের অবৈধ অংশ ভাঙতে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে মালিক আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে।
এতে ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ইয়াংছা, সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা-মাঝের ফাঁড়ি, কৈয়াবিল ও বরইতলী শান্তিরবাজার পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণকাজ থমকে আছে গত একমাস ধরে।
সওজ’র জায়গা দখল করে নির্মাণ করা বিলাসবহুল বাড়ি রক্ষায় ভবন মালিক আবুল কাশেম বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। পাশাপাশি ভবন রক্ষায় মোটা অংকের টাকা দিয়ে সওজ কতৃপক্ষকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, ইয়াংছা থেকে সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা-মাঝের ফাঁড়ি, কৈয়াবিল ও বরইতলী ইউনিয়নের শান্তিরবাজার পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে টেন্ডার প্রদান করেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সমাপ্তির পর ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৬ ফুট প্রস্থ সড়কটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছেন একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। প্রায় ২০টন ওজনের গাড়ি চলাচলের উপযোগী নির্মাণাধীন সড়কটি ইয়াংছা থেকে চকরিয়ার জিদ্দা বাজার আরকান মহাসড়কের পূর্বপাশ পর্যন্ত সড়কের দুইপাশ ২৬ফুট পর্যন্ত প্রশস্থ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাটি ভরাটের কাজ প্রায় শেষ করেন। কিন্তু জিদ্দা বাজারের পশ্চিম পাশের সড়ক প্রশস্থকরণে গত একমাস আগে সওজ কতৃপক্ষকে নিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করতে গেলে তাদের বাঁধা দেন ভবনের মালিক আবুল কাশেম।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) জায়গা অবৈধ দখলে নিয়ে তিনি বিলাসবহুল বহুতল ভবন নির্মাণ করলেও তা ভাঙতে দিতে নারাজ মালিক। ফলে গত একমাস থেকে ওই এলাকায় থমকে আছে নতুন সড়ক নির্মাণকাজ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পেকুয়ার মগনামা ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল কাশেম জিদ্দাবাজার এলাকায় প্রায় কোটি টাকা দিয়ে এক খÐ জমি কিনেন। পরে ওই জমিতে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণের সময় সওজ’র সড়কের বেশকিছু অংশ নির্মাণাধীন ভবনে ঢুকিয়ে নেন। ওই সময় বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে নানা গুঞ্জন শুরু হলে বিষয়টি প্রভাবশালী মহলকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে নেন জমির মালিক আবুল কাশেম।
পরবর্তীতে সওজ’র জায়গা অবৈধ দখলে নিয়েই বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেন প্রভাবশালী আবুল কাশেম।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সড়কটি নির্মাণের আগে সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে পরিমাপ করে সওজ’র জমি চিহ্নিত করা হয়। ওই সময় সওজ’র জমি দখল করে গড়ে উঠা স্থাপনাসমুহ লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করে তা ভেঙে ফেলারও নির্দেশনা প্রদান করেন সওজ কতৃপক্ষ। কিন্ত সওজ’র ওই নির্দেশনায় কর্ণপাত করেননি ভবনের মালিকসহ অবৈধ দখলদাররা।
অবশেষে সওজের জমি উদ্ধারে গত ২২ ফেব্রূয়ারি জিদ্দাবাজার এলাকায় সড়কের দু’পাশে বেশকিছু অবৈধ স্থাপনায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় সওজ কতৃপক্ষ। পরে সওজ’র জমি দখল করে নির্মাণ করা ভবনের অবৈধ অংশ ভাঙতে গিয়ে আবুল কাশেম ও তার ভাড়াটে লাঠিয়াল বাহিনীর তোপের মুখে পড়েন সওজ’র লোকজন। অবশেষে বাধ্য হয়ে ফিরে আসেন তারা।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) চকরিয়া অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু এহেছান মো. আজিজুল হক বলেন, নতুন নির্মাণাধীন সড়কে আগের সড়কের বাইরে নতুন কোন জায়গা অধিগ্রহণ করা নাই। তারপরও যেহেতু সড়কটি প্রশস্থ করে ২৬ ফুট করা হচ্ছে, সেজন্য ভূমি আইন অনুসরণ করে বর্তমান সড়ক ১২ ফুটের বাইরে সড়কের দুইপাশে আরও ১৪ ফুট জায়গা অধিগ্রহণ করে দখলমুক্ত করা হবে। এক্ষেত্রে যত প্রভাবশালী ব্যক্তির বসতভিটা ও ভবন হোক না কেন, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
ভবন মালিক আবুল কাশেমের দাবি, তার নির্মাণ করা ভবনটি সওজ’র তেমন কোন উল্লেখযোগ্য জায়গায় পড়েনি। তবে সওজ’র সামান্য কিছু অংশ তার ভবনের মধ্যে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে সওজ’র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। সড়ক নির্মাণের সময় ভবনটি ভাঙতে হবে না বলে সওজ কতৃপক্ষ তাকে কথা দিয়েছেন।