চকরিয়ায় যৌতুকের জন্য গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ

31

কক্সবাজারের চকরিয়ায় যৌতুকের জন্য নাছিমা আক্তার (১৯) নামে এক গৃহবধূকে গলাটিপে ও ওড়না প্যাঁচিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। হত্যার পর তাকে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বারান্দায় ফেলে রেখে গা ঢাকা দেয় তার স্বামী ও অন্যান্যরা। এ ঘটনার জন্য নিহত নাছিমা আক্তারের মা ও ভাইয়েরা স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে দায়ী করেছেন। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে খবর পেয়ে চকরিয়া থানা পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে নিহত নাছিমা আক্তারের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি শেষে তার লাশ ময়না তদন্তের জন্য গতকাল শুক্রবার বিকালে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির সময় লাশের গলায় আঘাতের চিহ্ন ছাড়া শরীরের কোথাও অন্যকোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে জানান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মফিজুর রহমান।
জানা গেছে, পার্বত্য লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইয়াংছা এলাকার মৃত নূরুজ্জামান চৌকিদারের মেয়ে নাসিমা আক্তারের (১৮) সাথে বিয়ে হয় চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াপাড়া এলাকার মৃত আহামদ ছোবহান মেম্বারের ছেলে টমটম (ইজিবাইক) চালক নুরুল আলমের (২৬)। দীর্ঘদিনের প্রেমের সূত্র ধরে উভয় পক্ষের পরিবারের সম্মতিতে ছয়মাস পূর্বে ৩ লাখ টাকা দেন মোহরানায় বিয়ে সম্পন্ন হয়। গতকাল শুক্রবার সকাল ১১ টার দিকে নিহত নাছিমা আক্তারের মা, ভাই-বোনসহ নিকট আত্মীয়রা হাসপাতালে এসে নাছিমা আক্তারের লাশ দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এসময় স্বজনদের কান্নায় সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। মেয়ের লাশ দেখে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা আনোয়ারা বেগম। নিহত বোনের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন বড়ভাই কুতুব উদ্দিন, বোন কুলছুমা বেগমসহ অন্যান্যরা। এসময় তারা বোনকে যৌতুকের জন্য তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন গলাটিপে ও ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করেছে দাবি করে তাদের শাস্তির দাবি জানান।
নিহত নাসিমা আক্তারের বড়ভাই কুতুব উদ্দিন বলেন, বিয়ের পর জানতে পারি তার বোনের জামাই একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি। ফলে বিয়ের কয়েক মাস পার হতে না হতেই যৌতুকের জন্য বোনের উপর চাপ সৃষ্টি করেন স্বামী নুরুল আলম ও তার পরিবারের লোকজন। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছে মারধরেরও শিকার হন নাসিমা আক্তার। বোনের উপর একের পর এক শারিরীক নির্যাতন ও সংসার ভাঙার কথা চিন্তা করে কুতুব উদ্দিন গত দুইমাস পূর্বে টমটম (ইজিবাইক) কেনার জন্য বোনের জামাই নুরুল আলমের হাতে ৪০ হাজার টাকা তুলে দেন। আগামী ১৩ নভেম্বর টমটম কেনার কিস্তি বাবদ আরো ২০ হাজার টাকা দেয়ার কথা ছিল তার। কুতুব উদ্দিন আরো বলেন, ধার্য তারিখের পূর্বেই ২০ হাজার টাকা পরিশোধের জন্য গত বৃহস্পতিবার রাতে স্বামী নুরুল আলম ও তার পরিবারের লোকজন কয়েক দফা মারধর করে তার বোন নাসিমা আাক্তারকে। এক পর্যায়ে নাসিমা আক্তার অজ্ঞান হয়ে পড়লে স্বামী নুরুল আলম তাকে গলায় ওড়না প্যাঁচিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়।
পরে শুক্রবার সকালে মুমূর্ষ অবস্থায় নাছিমা আক্তারকে তার স্বামী ও পরিবারের লোকজন চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে হাসপাতালের বারান্দায় নাছিমা আক্তার মৃত্যুবরণ করে। এর পরপরই গা ঢাকা দেয় স্বামী নুরুল আলমসহ অন্যান্যরা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিহতের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি শেষে তার লাশ ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
তবে নিহত নাছিমা আক্তারের স্বামী নুরুল আলমের বড়ভাই ও স্থানীয় ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল কবির বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে পারিবারিক তুচ্ছ বিষয় নিয়ে নাছিমা আক্তারের সাথে তার স্বামীর বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে নাছিমা আক্তার রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে গলায় ওড়না প্যাঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। পরে দরজা ভেঙে নাছিমা আক্তারকে উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পর হাসপাতালে বারান্দায় মারা যায় নাছিমা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শুক্রবার সকাল পৌনে নয়টার দিকে কয়েকজন যুবক এক মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। ওই সময় তাকে পরীক্ষা করে দেখা যায় হাসপাতালে পৌঁছানোর পূর্বেই তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি আরো বেশি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওই সময়ে হাসপাতালের অপর দায়িত্বরত চিকিৎসক তোফাজ্জল হোসেনকে খবর দেওয়া হয়। পরে তিনিও নিশ্চিত হন হাসপাতালে পৌঁছানোর পূর্বেই মারা যায় ওই মহিলা। ডা. মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, নিহত মহিলার গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। এটি হাত দিয়ে গলা টিপে ধরার অথবা ওড়না ও রশির আঘাতের চিহ্ন হতে পারে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে বিষয়টির ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, শুক্রবার সকালে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক মহিলার লাশ পড়ে থাকতে দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দেয়। পরে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মফিজুর রহমানকে পাঠানো হয়। সেখানে নিহতের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি শেষে ময়না তদন্তের জন্য তার লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ময়না তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে বিষয়টি হত্যা না আত্মহত্যা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে। ওসি আরও বলেন, এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।