চকরিয়ায় প্রেমের বিরোধেই খুন হল স্কুলছাত্র

69

চকরিয়ায় ঈদের কেনাকাটা শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হয় আনাস ইব্রাহিম (১৭) নামে এক স্কুলছাত্র। এ ঘটনায় নিহতের পিতা মৌলানা নেচার আহামদ বাদি হয়ে গতকাল রবিবার দুপুরে চকরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় চকরিয়া পৌর এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হাশেম মাস্টারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. রুবেলকে প্রধান আসামি করে আরও ৫ জনের নাম উল্লেখ করে ৫ থেকে ৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এ মামলার এজহার নামীয় আসামি রিয়াজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত রিয়াজ উদ্দিন পালাকাটা হাশেম মাস্টারপাড়া এলাকার শামশুল হকের ছেলে।
এদিকে নিহত আনাস ইব্রাহিমের লাশ ময়না তদন্ত শেষে চকরিয়া থানা পুলিশ গতকাল রবিবার দুপুরে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এদিন বিকাল ৪টায় মগবাজার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম (কমিউনিটি সেন্টার মাঠ) মাঠে নিহত স্কুলছাত্র আনাস ইব্রাহিমের নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন নিহতের পিতা মৌলানা নেচার আহামদ। জানাযা নামাজ শেষে উপস্থিত লোকজন এই হত্যাকান্ডের মূলহোতা রুবেলসহ অন্যান্যদের গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মহাসড়কে দীর্ঘ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
এর আগে শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিহত স্কুলছাত্র আনাসের লাশ চকরিয়ায় থানায় এসে পৌঁছলে আনাসের সহপাঠি, স্থানীয় লোকজন ও দলীয় নেতাকর্মীরা চকরিয়া থানার সামনে বিক্ষোভ করে।
থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী সূূত্র জানায়, গত দেড়মাস পূর্বে প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে আনাস ইব্রাহিম ও তার প্রতিপক্ষ পালাকাটা হাশেম মাস্টারপাড়া এলাকার মো. রুবেলের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। এর কয়েকদিন পর স্থানীয় একটি ক্রিকেট খেলায় বিষয়টি নিয়ে আবারো বিরোধে জড়ায় দুইপক্ষ। একপর্যায়ে দুইপক্ষের মধ্যে হাতহাতি ও ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর গত একমাস ধরে তাদের মধ্যে আর দেখা সাক্ষাত হয়নি।
গত শনিবার রাত ১০টার দিকে চকরিয়া পৌর সদরের সুপার মার্কেটের সামনে দেখা হয় বিরোধীয় এই দুইপক্ষের। ঈদের কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরতে সুপার মার্কেটের সামনে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন আনাস ও তার বন্ধু মো. আবদুল্লাহ। এসময় হাশেম মাস্টারপাড়া এলাকার মো. রুবেলের নেতৃত্বে ৭ থেকে ৮জন দুর্বৃত্ত হঠাৎ আনাস ও তার বন্ধু আবদুল্লাহকে এলাপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। ছুরিকাঘাতে আনাসের নাড়িভ‚ড়ি বের হয়ে যায় এবং আবদুল্লাহ গুরুতর আহত হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন আনাস ও আবদুল্লাহকে উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। পরে চট্টগ্রামে নেওয়ার পথে চুনতি এলাকায় প্রাণ হারান আনাস। আবদুল্লাহকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে ছুরিকাঘাতের ঘটনার পর শনিবার রাতে চকরিয়া থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে চার যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করলেও রবিবার দুপুরে এজহার নামীয় আসামি রিয়াজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে অন্যদের ছেড়ে দেয়।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, শনিবার চকরিয়া পৌর সদরের সুপার মার্কেটের সামনে এক স্কুল ছাত্রকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় এজহার নামীয় আসামি রিয়াজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ মামলার প্রধান আসামি রুবেলসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।