চকরিয়ায় তামাকের আগ্রাসন

70

কক্সবাজারের চকরিয়ায় সংরক্ষিত বনভূমির খাসজমি ও মাতামুহুরীর দুই তীরে পরিবেশ ধ্বংসকারী তামাকের ভয়াবহ আগ্রাসন শুরু হয়েছে। চলতি মৌসুম থেকে তামাক আবাদে নিরুৎসাহিত করতে মাঠপর্যায়ের চাষিদের নিয়ে উপজেলা প্রশাসন র‌্যালি ও মানববন্ধসহ সচেতনতামূলক নানা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। কিন্তু তা কোন কাজে আসেনি।
জানা গেছে, তামাক কোম্পানিগুলোর প্রলোভনে বিগত বছরগুলোর ন্যায় এবছরও রেকর্ড পরিমাণ জমিতে তামাক আবাদ করেছেন চাষিরা। ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষি জমির পাশাপাশি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও মাতামুহুরী নদীর দুই তীরে খাস জমিতেও তামাক আবাদের ভয়াবহ আগ্রাসন শুরু হয়েছে।
সংরক্ষিত বনের ভেতর ও নদীর তীরে তামাক চাষের ব্যাপারে সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা বর্তমানে কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। এ ব্যাপারে প্রশাসনিক কোন পদক্ষেপই চোখে পড়ছে না।
অভিযোগ উঠেছে, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ঢাকা টোব্যাকো, আবুল খায়ের টোব্যাকো ও রাঙ্গুনিয়া সমিতিসহ অসংখ্য তামাক কোম্পানি চাষিদের তামাক পোড়ানোর সরঞ্জাম সরবরাহ ও অগ্রিম টাকা দেয়ার প্রলোভনে ফেলে পরিবেশ বিধ্বংসী তামাক চাষে নামিয়েছে। কৃষি জমিতে তামাক আবাদের ফলে চলতি মৌসূমে বোরোর আবাদ ও রবিশস্য উৎপাদনে ব্যাপক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে চকরিয়ার বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের বমু বনবিট ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের মানিকপুর বনবিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এবং মাতামুহুরী নদী তীরের বমু বিলছড়ি, সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, কৈয়ারবিল, বরইতলী, লক্ষ্যারচর, ফাঁসিয়াখালী, ডুলাহাজারা ও চিরিঙ্গা ইউনিয়নের অন্তত এক হাজার একর খাস জমিতে তামাকের আবাদ শুরু হয়েছে। বেশির ভাগ এলাকায় ইতোমধ্যে কৃষকদের রোপন করা তামাকের চারা বড় হতে শুরু করেছে। আগামী মাস দু’য়েকের মধ্যেই শুরু হবে তামাক পোড়ানোর কাজ। এ লক্ষ্যে বনাঞ্চলের আশপাশে ও লোকালয়ে আগেভাগে শতশত তামাক চুল্ল­ীর নির্মাণকাজও শুরু হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের অধীন বমু বনবিটের প্রায় দুই হাজার একর বনভূমি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষনের জন্য ২০০৫ সাল থেকে লামা বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে বনবিটটি লামা সদর রেঞ্জের নিয়ন্ত্রণাধীন। কয়েক বছর ধরে স্থানীয় কাঠ পাচারকারীচক্র তামাক পোড়ানোর জন্য নির্বিচারে বনজ সম্পদ উজাড়ের কারণে সংশ্লিষ্ট বনবিটের সংরক্ষিত পাহাড় এখন ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। এ ব্যাপারে বনবিভাগও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) চকরিয়া উপজেলা সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম শাহাবুদ্দিন বলেন, নাগরিক সচেতনায় প্রশাসনিকভাবে এত আয়োজনের পরও চকরিয়ায় সংরিক্ষত বনাঞ্চল সংলগ্ন দশটি ইউনিয়নের অন্তত ১২ হাজার একর জমিতে তামাকের আগ্রাসন চলছে। এর মধ্যে বনের কিছু অংশ এবং মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের খাস জমি দখল করে আরও অন্তত এক হাজার একর জমিতে তামাকের আবাদ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করচি।
চকরিয়া পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সাংবাদিক এমআর মাহমুদ বলেন, তামাক চাষকে নিরুৎসাহিত করতে কয়েকমাস আগে উপজেলা প্রশাসনের তৎপরতা চোখে পড়ে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও মাঠ পর্যায়ের চাষিদের নিয়ে সচেতনতামূলক র‌্যালি, মানববন্ধনসহ নানা কার্যক্রম চালানো হয়। কিন্ত প্রশাসনের এ উদ্যোগ কোন কাজে আসনি। যদি প্রশাসনিকভাবে তামাকের আবাদ ধ্বংস করা না হলে পরিবেশের বারোটা বাজবে।
চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দীন আরফাত বলেন, চলতি বছরও মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের খাস জমি দখল করে ব্যাপক হারে তামাকের আবাদ হচ্ছে বলে শুনেছি। কোন কোন এলাকায় খাসজমি দখল করে তামাকের চাষ হচ্ছে, সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে জানাতে সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাদের (তহসিলদার) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।