ঘোষণা ছাড়াই গণপরিবহন বন্ধ, নাকাল নগরবাসী

69

আগাম ঘোষণা ছাড়া গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গতকাল সোমবার সকালে ঘর থেকে বের হয়েই ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী এবং অফিসগামী মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন সবচেয়ে বেশি। বাস ব্যতিত যেসব লোকাল টেম্পু, ম্যাক্সিমা ও টিকটিকি চলাচল করেছে, সেগুলোর ভাড়াও ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি। পাঁচ টাকার ভাড়ার স্থলে আদায় হয়েছে ১৫ টাকা। এমনকি উঠানামা ভাড়া ছিল ১০ টাকা।
বিভিন্ন মোড়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষারত যাত্রীরা বলেন, প্রশাসনকে এ নিয়ে কঠোর হতে হবে। তা নাহলে পরবর্তীতে আরও বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন, এটা কোন সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নয়, মালিকরা আতঙ্কে থাকার ফলে গাড়ি বের করেনি। যার কারণে এ ভোগান্তি তৈরি হয়েছে।
গতকাল সোমবার সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন সড়কে বাস, মিনিবাস, হিউম্যান হলার না চললেও অল্পকিছু সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টেম্পু চলাচল করতে দেখা গেছে।
এদিকে চট্টগ্রাম নগরীতে গণপরিবহন মালিকদের সংগঠনগুলো হলো- সিটি বাস-মিনিবাস ও হিউম্যান হলার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপ, সিটি বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, চট্টলা পরিবহন, যাত্রীসেবা পরিবহন, মহানগর পরিবহন, কালুরঘাট মিনিবাস মালিক সমিতি ও লুসাই পরিবহন।
তবে তারা সাংগঠনিকভাবে কোন ধর্মঘট ডাকেননি বলে সাংবাদিকদের জানান। তারা বলেন, মালিকরা আতঙ্কে গাড়ি বের করেননি।
সকাল ১০টায় সরেজমিনে দেওয়ানহাট মোড়ে দেখা যায়, বারেকবিল্ডিং থেকে চকবাজারগামী যেসব ‘টিকটিকি’ চলাচল করে, সেগুলোতে ধাক্কাধাক্কি এবং বাঁদুড়ঝোলা হয়ে উঠতে দেখা গেছে। অন্যান্য সময় মহিলাদের বসার সুযোগ করে দিলেও গতকাল সেটি দেখা যায়নি। শেষ পর্যন্ত মহিলারা গাড়িতে উঠতে না পেরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রী সাদিয়া জাহান বলেন, আগে থেকে ধর্মঘটের কোন সংবাদ পাইনি, কোন সোশ্যাল মিডিয়া বা অনলাইন নিউজেও আসেনি। হঠাৎ করে ধর্মঘট ডাকা মানে আমাদের বিপদ ডেকে আনা। সকালে কলেজে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে কোন বাস পাচ্ছি না। অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষায় আছি।
মহসিন কলেজের ছাত্র আলফাজ উদ্দিন বলেন, ‘আজকে কলেজে আমার পরীক্ষা। জানি না কি হবে। আধাঘণ্টা পর পর একটা টিকটিকি আসলেও সেটিতে উঠার কোন সুযোগই নেই। রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে যাবো, সেরকম প্রস্তুতি নিয়েও বাসা থেকে বের হইনি’।
জিইসি মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাস স্টপেজের জায়গায় শত শত লোকজন গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কেউ কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে করতে হেঁটে গন্তব্যে গিয়েছেন।
আশরাফ নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, গাড়ির জন্য প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করলাম। শুধু শুধুই ভোগান্তি দেয়া হচ্ছে আমাদের। তাই দেওয়ানহাট হতে বহদ্দারহাটের উদ্দেশ্যে হাঁটা দিলাম।
শুধু দেওয়ানহাট বা জিইসি মোড় নয়, নগরীর প্রত্যেকটি মোড়ে একই দৃশ্য দেখা গেছে। নিউ মার্কেট, স্টেশন রোড, আন্দরকিল্লা, এনায়েত বাজার, কাজীর দেউরি, টাইগার পাস, আগ্রাবাদ এলাকায় যাত্রীরা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা গেছে বাসের জন্য। যদি কোনভাবে একটি গাড়ি আসেও তার ভাড়ার পরিমাণও অনেক বেশি নিচ্ছে অভিযোগ করেন অনেকে।
চাকরিজীবী আজম খান বলেন, প্রতিনিয়ত উঠানামা ভাড়া পাঁচ টাকা নিলেও আজকে (গতকাল) নিচ্ছে ১০ টাকা। গন্তব্য স্থানের ন্যূনতম ভাড়া যেখানে পাঁচ টাকা সেখানে আজকে নিচ্ছে ১৫ টাকা। অর্থাৎ গাড়ি চালকরা সুযোগে সদ ব্যবহার করছে।
ধর্মঘট প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর বাস মিনিবাস হিউম্যান হলার মালিক সমিতির সভাপতি প্রফেসর এসএম তৈয়ব পূর্বদেশকে বলেন, ধর্মঘটের বিষয়ে আমাদের কোন সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেই। তবে গতকাল মালিকরা ক্ষোভের কারণে গাড়ি বের করেনি বলে জানতে পেরেছি। আজকে (সোমবার) সন্ধ্যা থেকে গাড়ি চলাচল করার জন্য আমাদের সদস্যদের বলে দেওয়া হয়েছে। তারা গাড়ি বের করেছেন এবং এখন থেকে চলবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর বাস মিনিবাস হিউম্যান হলার মালিক সমিতি, যাত্রীসেবা পরিবহন, হিউম্যান হলার ওনার্স এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে আমরা পুনরায় বাস চলাচলে সিদ্ধান্তে আসি।
তিনি আরও বলেন, মহানগরের রাস্তাগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রশাসন যে কাজ করছে তা বানচাল করার জন্য একটি মহল এমন পরিস্থিতির রূপ দিয়েছে। আমরা চাই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক এবং জনদুর্ভোগ কমে যাক।
উল্লেখ্য, গত রবিবার নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে পরিচালিত বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানে ১০ নং রুটের চট্টমেট্রো জ ১১-০৪১১ নম্বরের বাসটি কালুরঘাট না গিয়ে চান্দগাঁও থানার সামনে থেকে ঘুরিয়ে দেয়। পরে বহদ্দারহাট মোড় থেকে গাড়িটি আটক করা হয়। আটককৃত বাসের ফিটনেসবিহীন থাকাতে বাস চালক, হেলপার এবং মালিককে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেন ম্যাজিস্ট্রেট। এরপর একইদিন রাত ৮টা থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়।