ঘূর্ণিঝড় আইডা : সন্তানদেরকে উদ্ধারকারী নৌকায় ছুড়ে দিচ্ছেন মায়েরা

57

মোজাম্বিকের বেইরা শহরে ঘূর্ণিঝড় আইডার তান্ডবের পর সেখানকার বাড়ির ছাদ ও গাছের ওপরে আটকে পড়া শত শত মানুষকে উদ্ধারের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উদ্ধার কাজ চালাতে হচ্ছে তাদের। বুধবার উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, বন্যার কারণে গাছের ওপর আটকে পড়া নারীরা তাদের শিশু সন্তানদেরকে বাঁচাতে উদ্ধারকারী নৌকার দিকে ছুড়ে দিচ্ছেন। প্রায় মাথা সমান পানি থেকেও মানুষজনকে টেনে তোলা হচ্ছে। তবে বৃষ্টির কারণে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার তৎপরতা। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে। ১৪ মার্চ ১৭০ কিলোমিটার বেগে মোজাম্বিকের ওপর আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় আইডা। এরপর জিম্বাবুয়ে ও মালাবিতে আঘাত করে ঝড়টি। আইডার কারণে এখন পর্যন্ত মোজাম্বিকে ২০০ জনের প্রাণহানির খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেইরা এলাকা। রেডক্রসের তথ্য অনুযায়ী, বেইরা ও আশেপাশের এলাকার ৯০ শতাংশ ‘পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে’। প্লাবিত হয়েছে পুরো এলাকা। বন্যার পানি থেকে বাঁচতে অনেকে ছাদ ও গাছের ওপরে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে ছাদ ও গাছের মাথার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বন্যার পানি। তার মধ্যে চলছে বৃষ্টিপাত। পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগে আগে আটকে পড়াদের উদ্ধারে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা।
পানিতে অনেকখানি ডুবে যাওয়া একটি গাছের ওপর থেকে উদ্ধার হয়েছেন জোসিয়াস এলিয়াস নামের এক ব্যক্তি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে তিনি জানান, বেইরার কাছে অবস্থিত তার গ্রামটি পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। ‘ফিরে যাওয়ার কোনও কারণ নেই। আমাদের সব ঘর-বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে।’ বলেন জোসিয়াস।
বুধবারও বেইরা শহরে বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল। এতে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন উদ্ধারকারীরা। হেলিকপ্টার ও বিমানযোগে আটকে পড়াদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো হয়। আগেরদিন মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারের সহায়তা নিয়ে বেইরা থেকে ১৬৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকারী সংগঠন রেসকিউ সাউথ আফ্রিকা এর কর্মী ট্রাভিস ট্রোয়ার আল জাজিরাকে বলেন, ‘ধ্বংসের মাত্রা ব্যাপক। যতদূর চোখ যায়, শুধু পানি আর পানি দেখা যাচ্ছে। কোনও জমি দেখা যায় না। পানির মধ্য দিয়ে নৌকা চালিয়ে গেলে দেখা যায় গাছের ওপর মানুষ আটকে আছেন। পুরোপুরি বিপর্যয়পূর্ণ পরিস্থিতি।’
১৫ মার্চ চালানো এক উদ্ধার অভিযানের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নারীরা গাছের ওপর থেকে তাদের শিশু সন্তানদেরকে আমাদের নৌকার দিকে ছুড়ে দিয়েছে। অভিযান শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত আমরা মাত্র ২০ জন শিশুকে উদ্ধার করতে পেরেছি। সকালে আমরা যখন আবার সে জায়গায় গেলাম, তখন দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই মানুষদেরকে আর পাইনি।
মোজাম্বিকে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির জরুরি সমন্বয়ক পেড্রো মাটোস জানান, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার ছয়দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও ‘জীবন বাঁচানোর অধ্যায়ে’ আছেন উদ্ধারকারীরা। তিনি বলেন, ‘যেসব মানুষের মাথার কাছাকাছি পানি পৌঁছে গেছে, এখন তাদেরকে উদ্ধারের চেষ্টা করছি আমরা। তাদেরকে হেলিকপ্টার ও নৌকার মাধ্যমে উদ্ধার করে এমন জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে যেখানে পানি গোড়ালি পর্যন্ত আছে।’ বন্যার পানি না কমা পর্যন্ত বেইরা শহরে আইডার কারণে ঠিক কী মাত্রার ক্ষতি হয়েছে তা পুরোপুরিভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না। মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংগঠনগুলো সতর্ক করে বলেছে, বন্যার পানি এখনও বাড়ছে। বেইরা থেকে আল জাজিরার প্রতিনিধি ফাহমিদা মিলার জানিয়েছেন, শহরের বাসিন্দারা খাবার, জ্বালানি ও চিকিৎসার জন্য মরিয়া হয়ে আছে। একটি স্কুলে সাময়িকভাবে তৈরি একটি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মিলার জানান, ‘একটি শ্রেণিকক্ষে অনেকগুলো পরিবার গাদাগাদি করে থাকছে। তারা আশ্রয় ও সামান্য পানি পেয়েছে ঠিকই তবে খাবার নেই বললেই চলে।’