ঘর সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে আওয়ামী লীগ

136

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে নিজ ঘর সামাল দিতেই হিমশিম খাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রতিটি ওয়ার্ডেই একের অধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। যে কারণে বিফলে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ও নগর আওয়ামী লীগের প্রচেষ্টা। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রার্থী পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে তৃণমূলে। কোন কোন ওয়ার্ডে ‘বিতর্কিত’ ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেয়া নিয়েও আছে অসন্তোষ। সবমিলিয়ে হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির মুখোমুখি অবস্থানে আওয়ামী লীগ। তবে চসিক নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময়ের (৮মার্চ) আগেই সবধরনের বিরোধ মিমাংসা হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বড় সংগঠন। একটু আধটু বিভাজন থাকতে পারে। আমরা দলের প্রয়োজনে সবধরনের প্রচেষ্টা চালাতে পারি। নেতাকর্মীরাও আওয়ামী লীগের জন্য সব ত্যাগ-স্বীকার করতে পারে। অতীতের নির্বাচনগুলোতে তাই প্রমাণিত হয়েছে। চসিক নির্বাচনেও নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন অসন্তোষ থাকবে না। আমরা দলীয় প্রার্থীদের জয়ী করতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখবো।’
জানা যায়, গত দুইদিন ধরে কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রার্থী পরিবর্তনের গুঞ্জন চলছে। মনোনয়ন পেতে বেশ কয়েকজন প্রার্থী পদে না থেকেও ভুয়া সাংগঠনিক পরিচয় দিয়ে সমালোচিত হয়েছেন। জামালখান ওয়ার্ডে কম বয়সী প্রার্থীকে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ক্লিন ইমেজের প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ কাউন্সিলরকে বাদ দেয়া হয়েছে। যারা দুর্দীনে দলের পক্ষে শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছেন। সুখের দিন দুখের দিনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেছেন এমন প্রার্থীদের মনোনয়ন বঞ্চিত করাকে ভালোভাবে নেয়নি তৃণমূল। যে কারণে প্রত্যেক ওয়ার্ডেই তৃণমূলের নেতাকর্মীরা প্রতিজন প্রার্থীর পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। এতে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীদের অবস্থান কমছে। শেষ সময়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সমঝোতা না হলে দলীয় প্রার্থী ভরাডুবি হওয়ার শঙ্কা আছে।
গত ২৪ ফেব্রূয়ারি নগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দিলেও কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালনকারী আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকরাই দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করে নিজেরাই মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করে নিজেরাই প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সে সভায় নির্বাচন সমন্বয়কারী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের কাছেও অভিযোগ করেছেন দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতাকারী প্রার্থীরা। এর আগে ২৩ ফেব্রূয়ারি হোটেল পেনিনসুলায় অনুষ্ঠিত উত্তর, দক্ষিণ ও নগর আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভাতেও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সভায় নেতারাও কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থী থাকা কিংবা একের অধিক প্রার্থী থাকা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেন। অনেক নেতা একের অধিক প্রার্থী থাকার পক্ষেই মতামত দেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান পূর্বদেশকে বলেন, ‘চসিক নির্বাচনে প্রার্থী পরিবর্তনের কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। কিছু প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও সেগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিবে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড। এমন কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হলে গণমাধ্যমে পাঠানো হবে।’
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া জামালখান ওয়াডের্র শৈবাল দাশ সুমন, বক্সিরহাট ওয়ার্ডে নুরুল হক, গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, চকবাজার ওয়ার্ডে সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু, লালখান বাজার ওয়ার্ডে আবুল হাসনাত বেলাল, সংরক্ষিত ওয়ার্ডে শিউলি দে, রুমকী সেনগুপ্ত বেশ আলোচনায় আসেন। এরমধ্যে শিউলি দে’র বিরুদ্ধে নির্ধারিত বয়সের আগেই মনোনয়ন ভাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বাকি প্রার্থীদের সাংগঠনিক পরিচয় নিয়ে নিজ দলের নেতাকর্মীরাই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে হোল্ডিং নাম্বার দেয়ার নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। আবার অভিজ্ঞ প্রার্থীদের মধ্যে আলকরণ ওয়ার্ডে তারেক সোলেমান সেলিম, পাহাড়তলিতে মোহাম্মদ হোসেন হিরণ, লালখানবাজারে আবুল ফজল করিম আহমদ মানিক মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়াকে অনেকেই চমক হিসেবে দেখছেন। এখনো পর্যন্ত মোহাম্মদ হোসেন হিরণ ও তারেক সোলেমান সেলিম দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেননি। তবে আবুল ফজল করিম আহমদ মানিক ফরম সংগ্রহ করে জমাও দিয়েছেন। অন্যদিকে জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে থেকেও অনেকেই মনোনয়ন পেয়েছেন।
পাথরঘাটা ওয়ার্ডের মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়া প্রার্থী আশফাক আহমদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার উন্নয়নে কাজ করছি। এই ওয়ার্ডে বিগত নির্বাচনে চারজন আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকলেও বিএনপির প্রার্থীর সাথে দ্বিতীয় হয়েছিলাম আমি। অথচ সেখানে আমার পরিবর্তে সাধারণ মানুষের সাথে সংস্পর্শ নেই এমন একজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমার সাথেই আছে।’