ঘর-বাড়িতে পানি জমলে মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

31

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান বলেছেন, বিভিন্ন অপরাধের বিরুদ্ধে টাস্কফোর্সের সকল অভিযান সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। অভিযানগুলো জোরদার করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র‌্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্টদের আরো বেশি তৎপর হতে হবে। জেলা প্রশাসকগণ নিজ নিজ এলাকায় ভেজাল খাবার রোধের পাশাপাশি অপরাধ নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্টের অভিযান অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
গতকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম আঞ্চলিক টাস্কফোর্স সভা, বিভাগীয় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা, জেলা প্রশাসক সমন্বয় সভা ও বিভাগীয় রাজস্ব সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার অফিস পৃথক সভাগুলোর আয়োজন করেন। বিগত সভার সিদ্ধান্ত ও অগ্রগতি তুলে ধরেন বিভাগীয় কমিশনার অফিসের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইনামুল হাসান, মো. মোজাম্মেল হক ও মো. মামুন।
সভায় আবদুল মান্নান আরো বলেন, মাদক, চোরাচালান, ছিনতাই, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, চুরি-ডাকাতি, ইভটিজিং, জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও অন্যান্য অপরাধে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মামলা রুজু হচ্ছে। বিচারক সংকট, ধার্য তারিখে মামলার শুনানি না করা, আইনজীবীদের ব্যস্ততা ও বিভিন্ন কারণে আদালতগুলোতে মামলার জট লেগে আছে। মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণে বাদী-বিবাদীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অনেকে তাদের মামলার অগ্রগতি বিষয়েও অবগত নন। বিচার প্রার্থীরা বছরের পর বছর ঘুরে বেড়াচ্ছে। কাউকে হয়রানি বা বিনা দোষে দোষী সাব্যস্ত না করে তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পেন্ডিং মামলাগুলো দ্রুত নিস্পত্তি করা যা কিনা তা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মামলার নির্দিষ্ট তারিখে স্বাক্ষীদেরকে আদালতে আসার যাতায়াত ভাতা নিয়মিতকরণের বিষয়ে আইনমন্ত্রী মহোদয়কে চিঠির মাধ্যমে অবগত করানো হবে। সাথে বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে মানবিক দৃষ্টিবোধ নিয়ে মানুষের জন্য ভালো কিছু করা যায় কি না তা ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোধে পুরো চট্টগ্রাম বিভাগে একদিনে একযোগে ক্রাশ প্রোগ্রাম সাড়া পেয়েছে। সিটি কর্পোরেশন ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যেসব ঘরবাড়িতে পানি জমে থাকছে, সেসবের মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া নেওয়া হবে। তিনি বলেন, বাসাবাড়িগুলোতে পানি জমে থাকার কারণে এডিস মশা ডিম পাড়ে। তাই মালিকদের যদি এসবের কারণে কোনো ধারায় আইনের আওতায় আনা না যায়, তাহলে পরিবেশ আইনে হলেও যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বিভাগীয় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় তিনি বলেন, মাদক একটি ভয়াবহ ব্যাধি। পেশাদার মাদক ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে সড়ক ও নৌ-পথ দিয়ে মাদক পাচার করছে। মাদকের বিরুদ্ধে আরো বেশি নজরদারী বাড়াতে হবে। সন্ত্রাস, মাদক, জঙ্গিবাদ, অস্ত্রের বিরুদ্ধে যেমন জিরো টলারেন্স থাকতে হবে। নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশেও জিরো টলারেন্স থাকবে। এছাড়া কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ও ফেনীর সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে তেল পাচার রোধে সড়ক পথের পাশাপাশি নৌপথে বিজিবি-কোস্টগার্ডসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল আরো জোরদার করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটতে পারবে না। সরকারের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা অমান্য করা যাবে না। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের প্রত্যেক জেলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার, চোরাচালান রোধ, জঙ্গি-সন্ত্রাসী ও চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যদি কারও কাছে ৫ থেকে ১০ গ্রাম পরিমানের ইয়াবা পাওয়া যায় তাহলে তাকে মামলা রুজুর মাধ্যমে আদালতে প্রেরণ না করে মোবাইল কোর্টের আওতায় এনে সাজা দেয়া গেলে মামলা দ্রæত নিষ্পত্তি হবে। এছাড়া আদালতে পেন্ডিং থাকা মামলা গুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হলে বিভিন্ন মামলার স্বাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে মামলা পরিচালনাকারী বিজ্ঞ পিপি’দেরকে ভ‚মিকা রাখতে হবে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পৃথক সভাগুলোতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা, বিভাগীয় স্থানীয় সরকার পরিচালক দীপক চক্রবর্তী, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপ-মহাপরিচালক মো. সামছুল আলম, বিজিবি চট্টগ্রাম ব্যাটালিয়নের পরিচালক (৮ বিজিবি) লে. কর্নেল মো. মুনির হাসান, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. নুরুল আলম নিজামী, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো. হাবিবুর রহমান, সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী অনুপম বড়ুয়া, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন (চট্টগ্রাম), তন্ময় দাস (নোয়াখালী), একেএম মামুনুর রশীদ (রাঙ্গামাটি), মো. মাজেদুর রহমান খান (চাঁদপুর), আবুল ফজল মীর (কুমিল্লা), মো. কামাল হোসেন (কক্সবাজার), মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম (বান্দরবান), অঞ্জন চন্দ্র পাল (ল²ীপুর), মো. শহিদুল ইসলাম (খাগড়াছড়ি), মো. ওয়াহিদুজ্জামান (ফেনী), হায়াত-উদ-দৌলা (ব্রাহ্মণবাড়ীয়া), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্ত্তী, র‌্যাব-৭ এর কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসান, কাস্টম কমিশনার এম ফখরুল আলম, কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার (চট্টগ্রাম) মো. এনামুল হক, রেলওয়ে জেলা পুলিশ সুপার নওরোজ হাসান তালুকদার, বৃহত্তর চট্টগ্রাম পণ্য পরিবহন মালিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. আবদুল মান্নান, সিএমপি’র ডিসি-ডিবি (বন্দর) এসএম মোস্তাইন হোসেন, উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) শ্যামল কুমার নাথ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মজিবুর রহমান পাটওয়ারী, প্রাথমিক শিক্ষা চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক মো. সুলতান মিয়া, বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, চট্টগ্রাম জেলা পিপি এডভোকেট একেএম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, চোরাচালান নিরোধ ট্রাইবুন্যালের স্পেশাল পিপি এডভোকেট হরিপদ চক্রবর্তী, মহানগর পিপি এডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী, কোস্টগার্ডের জোনাল কমান্ডার মামুনুর রশীদ, নৌ-অঞ্চলের কমান্ডার লে. এম ফরহাদুর রেজা, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক সৈয়দ জামাল আহমদ, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অঞ্জনা ভট্টাচার্য প্রমুখ। পৃথক সভাগুলোতে বিভাগের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।