ঘরবন্দি মানুষ পারিবারিক সহিংসতা কাম্যনয়

60

দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পার থেকে সাধারণ ছুটি এবং সাধারণ মানুষকে ঘরে থাকার সরকারি নির্দেশনার কারণে গৃহবন্দি মানুষ। করোনা থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে সামাজিক তথা শারীরিক দূরত্ব বজায় কার্যকর করতে দেশের মানুষের ঘরে থাকার সিদ্ধান্ত করোনা থেকে রক্ষার প্রধান ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃত। দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এর ফলে দেশে পারিবারিক সহিংসতা বেড়ে গিয়েছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পুরুষরা ঘরের বাইরে বেশি অবস্থান করে থাকে। ব্যস্ত থাকে কাজে-কর্মে।
নারীরা ও বিভিন্ন কর্মে বাইরে এবং ঘরে টানাপোড়েনে থাকে। পান থেকে চুনখসার বিষয়ে অধিকাংশ পরিবারে স্বামী-স্ত্রী ঝগড়াঝাটি করার সময়ই পায় না। করোনা জনিত হোম কোয়ারেন্টাইন পালনের কারণে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে পারিবারিক ব্যবস্থা নড়বড় হয়ে পড়েছে এবং সহিংসতা বেড়ে গিয়েছে। পত্রিকান্তরে তার চিত্র আমরা প্রতিদিন দেখছি গৃহবধুর আত্মহত্যা বেড়েছে। স্বামী-স্ত্রী, ভাই-ভাই-পাড়া-প্রতিবেশি, বাপ-ছেলের মধ্যে সহিংসতার চিত্রও দেখা যাচ্ছে স্বাভাবিক পরিস্থিতির তুলনায় বেশি পরিমাণে। বিভিন্ন স্থানে খুন খারাবি ও বাড়তে দেখা যাচ্ছে। করোনা ভাইরাস জনিত কারণে মানুষের ঘরে থাকার অবস্থায় পারিবারিক সহিংসতা বাড়লেও দেশের পারিবারিক ব্যবস্থা অতীতের তুলনায় এখন অনেক নড়বড়ে। কেন না দেশে নৈতিক শিক্ষার অভাব এবং অস্তিত্ববাদী চেতনা বৃদ্ধির কারণে দেশের নরনারী ব্যক্তিস্বার্থকে অধিক পরিমাণে প্রাধান্য দিতে গিয়ে পারিবারিক সামাজিক স্থিতিশীলতা দুর্বল হয়েছে বহু আগে থেকেই।
শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে বাংলাদেশে পারিবারিক বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়েছে বহু আগে থেকে। ব্যক্তি স্বার্থ এবং একান্ত নিজস্ব লাভ ক্ষতি ও ইগো মারমুখি হওয়ায় নরনারীর মধ্যে সহনশীলতা কমে এসেছে। যার ফলে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন শিথিল হয়ে পড়েছে। আমাদের সমাজে ভোগ বিলাস যে হারে বেড়েছে সে তুলনায় ত্যাগের উদাহারণ খুবই নগণ্য। দেশে পারিবারিক ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষার চর্চা একেবারে শূণ্যের কোটায় নেমে এসেছে, যার কারণে প্রজন্ম পারিবারিকভাবে নৈতিক হয়ে উঠছে না। যার প্রভাব পড়ছে পরিবারে এবং সমাজে।
এ যুগের তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীদের মধ্যে ময়মুরব্বির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কমে এসেছে ভয়ানক হারে। যার জন্য ময়মুরব্বিদের উদাসীনতা এবং সন্তানদের প্রতি নজরদারী না থাকাই অনেক ক্ষেত্রে দায়ী। করোনা ভাইরাসের এ সংকটকালে দেশের নারীপুরুষ নিজেদের মধ্যে নৈতিকতার চর্চার পাশাপাশি সন্তানদের প্রতি নজরদারী বাড়ালে পারিবারিক সহিংসতা কমে। সামাজিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে এমন ধারণা বিশেষজ্ঞদের। আমাদের দেশের পারিবারিক সামাজিক স্থিতিশীলতার একটি ঐতিহ্য রয়েছে। পারিবারিক মায়ামমতা এবং বড় ছোট মান মর্যাদার পরিবেশে ফিরে আসুক। ত্যাগের মন্ত্রে উজ্জীবিত পারিবারিক সামাজিক স্থিতিশীলতা সবসময় আমাদের কাম্য।