ঘটনার নয় দিনে ৪৭ আসামির গ্রেপ্তার ৫

73

বাঁশখালীর উপকূলীয় জনপদ বাহারছড়ার ইলশা গ্রামের সামাজিক বিরোধের যেন শেষ নেই। এ বিরোধ মিমাংসার কোন উদ্যোগ নিতে পারেনি কেউ। ঘটনার পর মামলা হয়। আসামি গ্রেপ্তার হয়। জেল খেটে জামিনে এসে আবারো জড়িয়ে পড়ে পুরানো দ্বন্দ্বে। গত ১২ মে এমন দ্বন্দ্বের বলি হয়েছেন দুই হাফেজ। পূর্ব ইলশা গ্রামের নেছার আহমদের পুত্র হাফেজ মোহাম্মদ খালেদ (২৮) ও হাফেজ মো. আবু ছালেকের পুত্র হাফেজ মো. ইব্রাহিমকে অকালে প্রাণ হারাতে হয়েছে।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত তিন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। এরমধ্যে দুইজন কারাগারে থাকলেও নুরুল আনচার নামে এক আসামি পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। এদিকে মামলার পর থেকে আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বাড়িঘরে চলছে লুটপাট। প্রতিপক্ষরাই আসামি খোঁজার নাম করে ঘরে ঢুকে এ লুটপাট চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও এমন কোন অভিযোগ পায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বাঁশখালী থানার ওসি মো. রেজাউল করিম মজুমদার পূর্বদেশকে বলেন, ‘সাধনপুর ও বাহারছড়ার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। এ পর্যন্ত উভয় ঘটনায় দুইজন করে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও বাহারছড়ার ঘটনায় একজন আসামি গ্রেপ্তারের পর বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। মামলার যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। পরিস্থিতিও শান্ত আছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারেও অভিযান চলছে।’ বাহারছড়ায় লুটপাটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তেমন কোন সমস্যা হয়নি। যেখানেই খবর পাচ্ছি সেখানেই পুলিশ পাঠাচ্ছি।’
জানা যায়, বাহারছড়ায় সামাজিক বিরোধটা কয়েক যুগের পুরানো। তিন গ্রূপে বিভক্ত সমাজের মানুষ। উত্তরাধিকার সূত্রে আপাতত নেতৃত্বে মরতুজ আলী, মো. আবছার ও জয়নাল আবেদীন ঝন্টু। আধিপত্যের খরচ যোগাতে প্রত্যেকেই কাছাকাছি স্থানে গড়ে তুলেছেন ইটভাটা। ইটভাটা গড়ে তোলার পর দ্বন্দ্ব আরও বেড়েছে। মাস গড়াতেই জড়িয়ে পড়ে মারামারি, খুনোখুনিতে। নিজেদের আধিপত্যের দ্বন্দ্বে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ মানুষ।
বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আজিজুল বারী পূর্বদেশকে বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে নিয়মিত পুলিশ টহল দেয়া হচ্ছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ঘটনার পরপরই আসামিরা গা ঢাকা দিয়েছে। তবে প্রতিটি বাড়িতেই মহিলারা আছেন। সেখানে লুটপাটের কোন অভিযোগ আমরা পাইনি। পরিস্থিতিও ভালো আছে।’
অপরদিকে সাধনপুরে অ্যাম্বুলেন্সেই কুপিয়ে নৃশংসভাবে খুন হওয়া জহিরুল ইসলাম জফুরের খুনীদের গ্রেপ্তারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। ঘটনার পরপরই দুইজন আসামি গ্রেপ্তার হলেও মূল আসামিদের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। ইতোমধ্যে আসামিদের সাথে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন নিহতের স্বজনরা। আসামিরা এলাকায় আসলেও তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না বলে জানিয়েছেন জহিরের পরিবার। জহির খুনের ঘটনার তার স্ত্রী বাদি হয়ে ২৩জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
নিহত জহিরের ভাতিজা হেলাল উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, ‘আসামিরা আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আসামিরা এলাকায় আসলেও তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না। পুলিশও বলছে আসামি দেখলে খবর দিতে। অথচ পুলিশ পারে না এমন কোন কাজ নেই। আসামিদের সাথে রাজনৈতিক নেতাদের সখ্যতা থাকায় আমরা শঙ্কিত। এই হত্যার বিচার না হলে তারা আবারো খুনের ঘটনা ঘটাবে।’