গ্রাহক হয়রানি তদন্তে ওয়াসার কমিটি

78

সামগ্রিক গ্রাহক হয়রানি ও এনআরডব্লিও (অপচয়) বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। গতকাল শনিবার ওয়াসার ৫১তম বোর্ড সভায় তিন সদস্য বিশিষ্ট এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগামী বোর্ড সভার আগেই তদন্ত কাজ শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে এ কমিটিকে। এদিকে সভায় বোর্ড সদস্য সোলায়মান আলম শেঠের মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়টি আলোচনায় উঠে। এতে উত্তজিত হয়ে তিনি কয়েকজন বোর্ড সদস্যকে ইঙ্গিত করে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, গতকাল ওয়াসা বোর্ড সভায় ১০টি আলোচ্যসূচি রাখা হয়। এরমধ্যে ৫০তম সাধারণ সভার কার্যবিবরণী নিশ্চিতকরণ, সিদ্ধান্তসমূহের অগ্রগতির প্রতিবেদন, আয়-ব্যয় সম্পর্কে প্রতিবেদন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার কার্যক্রমের প্রতিবেদন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যক্রমের প্রতিবেদন, প্রকল্পের কাজের অগ্রগতির প্রতিবেদন, কেন্দ্রীয় মৎসজীবী সমবায় সমিতির ৮০০ ফুট দূরত্বে ২ ইঞ্চি ব্যাসের একটি নতুন সংযোগ কাজের অনুমোদন, ২০১৭-১৮ আর্থিক সালের চূড়ান্ত হিসাব নিরীক্ষার নিমিত্তে বহিঃনিরীক্ষক নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রদত্ত ক্ষমতায় সম্পাদিত কাজে অর্থ বরাদ্দের বিষয় অবহিতকরণসহ বিভিন্ন বিষয়াদি আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় এনআরডব্লিও প্রসঙ্গে রাজস্ব শাখা থেকে জানানো হয় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এনআরডব্লিও হয় ৩০ শতাংশ, এর আগের মাসে ডিসেম্বরেও হয় ৩০ শতাংশ। এনআরডব্লিও ও নিয়ে আলোচনায় সময় দাবি উঠে ওয়াসা ইচ্ছাকৃতভাবে এনআরডব্লিও কম দেখাচ্ছে। প্রকৃত এনআরডব্লিও ও ৫০ শতাংশের বেশি হবে। অনেক গ্রাহকের গড় বিল, মিটার ছাড়া সংযোগ, অস্তিত্ববিহীন সংযোগ এসবের আড়ালে প্রকৃত এনআরডব্লিও ও ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া পাম্প অপারেটরদের অদক্ষতা, মিটার রিডিং না দেখেই বিল করা, গড় বিল করা ইত্যাদি কারণে প্রকৃত এনআরডবিøও আড়ালে থাকছে। বিষয়টি আলোচনার পর আরো তদন্তের জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় বোর্ড সদস্য জাফর আহমদ সাকেদকে। বাকি দুই সদস্য হলেন, ওয়াসার ডিএমডি ফাইনান্স নুরুল আলম চৌধুরী ও প্রধান প্রকৌশলী ইয়াকুব সিরাজউদদোল্লা। তদন্ত কমিটি চাইলে সদস্য আরো বাড়াতে পারবেন।
এদিকে সভার এক পর্যায়ে গ্রাহক প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকা বোর্ড সদস্য সোলায়মান আলম শেঠের বৈধতার বিষয়টি আলোচনায় আসে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সভায় উত্থাপন করা হলে উত্তেজিত হয়ে পড়েন সোলায়ামান আলম শেঠ। এক পর্যায়ে তিনি দুইজন বোর্ড সদস্যকে ইঙ্গিত করে আপত্তিকর কথা বলেন। বোর্ড চেয়ারম্যান এসময় সোলায়মান আলম শেঠকে থামানোর চেষ্টা করেন। এরপরও সভায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করায় প্রসঙ্গ পরিবর্তন করেন বোর্ড চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে জানার জন্য ওয়াসার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী এসএম নজরুল ইসলামের সাথে সাক্ষাৎ করলেও তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
এদিকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ওয়াসা বোর্ড সদস্য জাফর আহমদ সাদিক বলেন, মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রসঙ্গ আসায় সোলায়মান আলম শেঠ দু-একজন বোর্ড সদস্যকে ইঙ্গিত করে আপত্তিকর কথা বলেন। তার এ কথাগুলো বলা উচিত হয়নি। চেয়ারম্যান মহোদয়ও সেটা বলেছেন। তিনি চাইলে বিষয়টি সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলতে পারতেন।
তদন্ত কমিটি গঠন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের রাখা হয়েছে সরকারের উন্নয়ন তদারকি করতে। আমি প্রত্যেকটা বোর্ড সভায় এনআরডবিøও নিয়ে কথা বলেছিলাম। এখন দেখা যাচ্ছে সেটা অনেক বেড়ে গেছে। আমাকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা সেটা দেখে রিপোর্ট দিব।
ওয়াসার সচিব আশরাফ হোসেন বলেন, এমডি স্যারের সম্মতি ছাড়া আমি কোনো তথ্য দিতে পারি না। এটা পুরোটাই এমডি স্যারের এখতিয়ার। বোর্ডে সিদ্ধান্ত হয়, এগুলো মন্ত্রণালয়ে যাবে। আমি সিদ্ধান্ত জানানোর এখতিয়ার রাখি না।