গ্রাম্য বিচারের নামে বর্বরতা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে

42

আধুনিক, প্রগতিশীল স্বাধীন এ বাংলাদেশে এখনও কথিত গ্রাম্য বিচারের নামে লঘু অপরাধে গুরু দন্ডের মত বর্বরতার শেষটাই যেন দেখল বাংলার মানুষ। যা কারো প্রত্যাশা ছিলনা। বলা হচ্ছে মধ্যযুগীয় কায়দায় বিচারের নামে চরম বর্বরতা প্রদর্শন করা হয়েছে মা-মেয়ের প্রতি। এ ঘটনাটি ঘটিয়েছেন কক্সবাজারের চকরিয়া এলাকার এক নির্বাচিত চেয়ারম্যান। যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, বরং কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন ওই জনপ্রতিনিধি। গণমাদ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদটি ছিল টক অব দ্য কান্ট্রি। খবরে প্রকাশ, গত শুক্রবার ওই এলাকায় গরু চুরির অপরাধে বয়স্ক মা ও তরুণী দুই মেয়েকে রশিতে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরানের বিরুদ্ধে। গরু চোর আখ্যা দিয়ে মা-মেয়েকে নির্দয়ভাবে পিটিয়েছে চেয়ারম্যানের লোকজন। পরে কোমরে রশি বেঁধে তিনজনকে প্রকাশ্যে সড়কে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে। সেখানে চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে আবার প্রহার করা হয়। একপর্যায়ে তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পুলিশকে খবর দিয়ে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। পরে গরু চুরির মামলা দিয়ে তাদের শনিবার আদালতে পাঠানো হয়। গতকাল রবিবার তারা জামিন পেয়েছেন। এ ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ২ দিন ধরে সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রশাসনও নড়েচড়ে বসে। আমরা বলব, এ বর্বরতা মানবতার চরম বিপর্যয়, যা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। আটক ব্যক্তিদের নির্যাতনের ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, দুই নারীর শরীরে বারবার হাত দিয়ে চৌকিদার তাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে তা আদালতেরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব কুমারের আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে এ ঘটনার জন্য মামলা রেকর্ড করার আদেশ দিয়েছেন। আশার কথা স্থানীয় সরকার মন্ত্রী জনপ্রতিনিধির এহেন বর্বরোচিত কর্মকান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রমাসককে নির্দেশ দিয়েছেন বলে আমরা জানতে পারি। এ ঘটনায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সত্যিই যদি গরু চুরির ঘটনা ঘটে থাকে সেটি যেমন অপরাধ, তেমন আইনের দৃষ্টিতে গর্হিত অপরাধ নারীর প্রতি সহিংসতা। অবশ্যই দায়ীদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ইতোমধ্যে ঘটনার মূলহোতা চেয়ারম্যানকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করেছে।
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া, অভিযোগকারী নিজেই বিচারক বনে যাওয়া, শারীরিকভাবে নির্যাতন করার ঘটনা ব্যাপকহারে বেড়ে চলেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পূর্ববিরোধ বা পূর্বশত্রুতার কারণে মিথ্যা অভিযোগ তুলে তথাকথিত বিচারের নামে শারীরিক শাস্তি ও সামাজিকভাবে অপদস্থ করার এসব ঘটনা ঘটানো হয়। একটি সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি শ্রেণি ও সদস্যের সামাজিক দায়বদ্ধতার ভূমিকা পালন অপরিহার্য। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কিছু জনপ্রতিনিধিদের ভ‚মিকা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। কক্সবাজারের চকরিয়ার বর্বরতা তার বড় প্রমাণ। দেশের নানা ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটলেও নারীর প্রতি সহিংস আচরণ এখনো ভয়ানক মাত্রায় রয়ে গেছে। কক্সবাজারের ঘটনায় মা, মেয়েরা যেন হেনস্থা না হয়, সুবিচার পায়, এ বিষয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কার্যকর মনোযোগ প্রত্যাশা করছি।