গ্যাঁড়াকলে প্রত্যাবাসন, স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ রোহিঙ্গাদের ওপর

31

নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে দুই বছর পূর্ণ হতে চলেছে আজ ২৫ আগস্ট। এ উপলক্ষে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে ব্যাপক সমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা উখিয়ার ২২টি ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের কুতুপালং ডি-৪ নামক স্থানে জমায়েত করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাল্খুালী ক্যাম্পের বাসিন্দা ও ভয়েচ অব রোহিঙ্গা নামের সংগঠনের নেতা মাস্টার নুরুল কবির। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে প্রতিটি ক্যাম্প কমিউনিটির নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন। স্ব স্ব ক্যাম্পে তারা ব্যানার, ফেস্টুন বিতরণ করে করেছেন। তবে তারা সু-শৃংখলভাবে কর্মসূচি পালন করবেন।
অনুপ্রবেশকারী এসব রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিকভাবে জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিকতায় কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ ২ বছর যাবৎ সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। তবে এই সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি চীন সফর করেন। চীন সফরে তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উপর জোর দেন। এর পরপরই মিয়ানমারের পক্ষ থেকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে এসে রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেন। এসময় রোহিঙ্গারা তাদের নির্যাতনের বর্ণনার পাশাপাশি নাগরিকত্ব সহ বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। প্রতিনিধিদল মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য ৩ হাজার ৪৫০ জন রোহিঙ্গার তালিকা দেন।গত ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসনের জন্য দিনক্ষণ ঠিক করেন। দু’দেশের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হলেও প্রত্যাবাসনে তালিকাভুক্ত কোন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে রাজি না হওয়ায় ওইদিন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি বলে জানান শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম। তিনি প্রত্যাবাসন বিষয় নিয়ে বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই আজকেও যদি কেউ স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে চায়, তাহলে তাকে ফেরত পাঠানো হবে। এর আগে গত বছরের ১৫ নভেম্বর একই ভাবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় না ফেরায় তাও বাধাগ্রস্ত হয়। যার ফলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া গ্যাড়াকলে পড়ে।
প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ায় রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অপরাধমূলক কর্মকাÐে। যার কারণে কঠিন হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন।
উখিয়া প্রসক্লাবের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ২২ আগস্ট সবকিছু ঠিকঠাক থাকার পরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ার পেছনে সংশ্লিষ্টদের অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরুর পূর্বে অভিজ্ঞ-সম্পন্ন লোকজনকে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার আহবান জানান তিনি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, গত ২ বছরে ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা যেভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে তারা সহজে মিয়ানমারে ফিরে যাবে বলে মনে হয় না। তাই সরকারের উচিত তাদেরকে আগে থেকেই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দুই বছরেও আলোর মুখ না দেখায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে স্থানীয়রা। কারণ রোহিঙ্গারা দিন দিন বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সব ধরনের প্রস্তুতি থাকার পরও রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে না ফেরার কারণে ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে এটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই যারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফেরত যেতে রাজি হবেন, তাদেরকেই ফেরত পাঠানো হবে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন কর্মকান্ডের কারণে দিন দিন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে স্থানীয় জনসাধারণ। তাদের দাবি আমরা তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আশ্রয় দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা এখন বেপরোয়া হয়ে স্থানীয়দের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে টেকনাফের যুবলীগ নেতা মো. ফারুককে (২৪)। সে হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরা এলাকার আব্দুল মুনাফ সওদাগরের ছেলে। পুরো উখিয়া-টেকনাফজুড়ে এর প্রভাব পড়ে। রোহিঙ্গাদের প্রতি স্থানীয়দের সৃষ্টি হয় বিরূপ প্রভাব। অস্থিতিশীল হয়ে উঠে উখিয়া-টেকনাফ। এ নিয়ে এক পর্যায়ে রোহিঙ্গা খেদাও নামে বিভিন্ন স্লোগান দেন স্থানীয়রা।