গোসাইলডাঙ্গায় নিজ ঘরে ব্যবসায়ী খুন

92

বন্দর থানাধীন গোসাইলডাঙ্গা এলাকায় তোফায়েল আহমেদ রফিক (৬০) নামে এক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী নিজ বাসায় খুন হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার বিকালে বারিক মিয়া স্কুলের পাশের নিজ ভবনে ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনার পর থেকে বাড়ির গৃহকর্মী পলাতক আছেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে চারতলা নিজ ভবনের দ্বিতীয় তলায় একা থাকতেন তোফায়েল আহমেদ রফিক। একই ভবনের উপরের তলায় দুই ছেলে থাকতেন। নিহত ব্যবসায়ী তোফায়েল আহমদ রফিক গোসাইলডাঙ্গা এলাকার বনেদি ব্যবসায়ী প্রয়াত হাজী বারিক মিয়ার ছেলে।
উল্লেখ্য, প্রয়াত বারিক মিয়ার নামেই গোসাইলডাঙ্গার বারিক বিল্ডিং এলাকা পরিচিত।
ব্যবসায়ী রফিকের মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন থাকায় পুলিশের ধারণা, নিজের সেবায় থাকা গৃহকর্মীর হাতেই খুন হয়েছেন এই ব্যবসায়ী। যা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাতেও কিছুটা দেখা যাচ্ছে।
নিহতের স্বজনরা জানান, ব্যবসায়ী রফিক চার মেয়ে ও দুই ছেলের জনক। স্ত্রী মারা গেছেন। চার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তিনি ও দুই ছেলে পৈত্রিক ভবনে থাকতেন। দ্বিতীয় তলায় নিজে থাকলেও উপরের তলায় দুই অবিবাহিত ছেলে থাকতেন। রফিকের দেখাভাল করতেন কয়েকজন কাজের ছেলে। সন্ধ্যায় বাবার ঘরের কক্ষ বন্ধ দেখে ছেলেরা ডাকাডাকি করতে থাকেন। সাড়া না পেয়ে পেছনের সিঁড়ি বেয়ে উঠে রক্তাক্ত অবস্থায় বাবাকে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (বন্দর) আরেফিন জুয়েল বলেন, ব্যবসায়ীকে দেখভালোর জন্য একজন কাজের ছেলে নিয়োজিত ছিল। আমরা নিশ্চিত হয়েছি, কাজের ছেলেটিই উনাকে খুন করেছে। সিসি টিভি ফুটেজে বিষয়টি অনেকটা পরিষ্কার। বাসা থেকে কিছু টাকা-পয়সা খোয়া গেছে। আমরা ধারণা করছি, বাসার কাজের ছেলে টাকা-পয়সার লোভে উনাকে খুন করে পালিয়েছে। এর আগে বিকালে ছেলেরা আহত অবস্থায় উনাকে উদ্ধার করেন। সাথে সাথে পাশের একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই মৃত ঘোষণা করা হলে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়।
তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কাজের ছেলের নাম-ঠিকানা বের করার চেষ্টা করছি। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে ২০-২৫দিন আগে তাকে বাসায় কাজ দেওয়া হয়েছিল। আশা করছি ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে পারবো। আমরা এ প্রক্রিয়ায় অনেকদূর এগিয়েছি।
জানা যায়, নিহত ব্যবসায়ী তোফায়েল আহমেদ রফিক নগরীর বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য এমএ লতিফের স্ত্রীর বড় ভাই। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পুরো পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। খ্যাতনামা পরিবারের সন্তান রফিকের মৃত্যুকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয়রাও।
ঘটনার বিষয়ে জানতে এমএ লতিফের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী মাহবুবুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, গৃহকর্মী খুন করেছে বলে শোনা যাচ্ছে। টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়ে যেতেই খুন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, চার পাঁচ-ছয় বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া সানাই সিনেমা হলটি ব্যবসায়ী রফিক দেখভাল করতেন। মেয়েদের বিয়ে দিলেও তিনি দুই ছেলেকে নিয়ে থাকতেন ভবনে। দুই অবিবাহিত ছেলে ভবনের উপরে থাকলেও উনি দ্বিতীয় তলায় একা থাকতেন। মৃত্যুর আগে উনি বড় ধরনের কোন ব্যবসার সাথে যুক্ত না থাকলেও পরিবারের সহায়-সম্পদ দেখাশুনা করতেন। রফিক সাহেবের বাবা প্রয়াত বারিক মিয়া ছিলেন সেখানকার বনেদি ব্যবসায়ী। সে হিসেবে এলাকায় উনাদের পরিবারের নামডাক আছে। ঘটনার পরপরই সংসদ সদস্য ও উনার পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।