গোলাপের জৌলুসে ছেদ নেই বেড়েছে চাষের পরিধি

86

কাগজের তৈরি আর চীন থেকে আমদানিকৃত প্লাস্টিক ফুলের কারণে বর্তমানে জৌলুস হারিয়েছে ফুলের চাষ। তবে এখনো বাজারে চাহিদা অক্ষুণ্ণ রয়েছে গোলাপের। অন্য ফুলের চাষ কৃষকরা কমিয়ে দিলেও গোলাপের চাষ অব্যাহত রয়েছে। জাতীয় দিবস, বিয়ে ও গায়েহলুদ অনুষ্ঠানে গোলাপের চাহিদা থাকায় এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। একাধিক কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলায় মোট ৪০ হেক্টর জমিতে গোলাপ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছিল। এ লক্ষ্যমাত্র অর্জিত হয়েছে। কৃষকরা লাভবান হওয়ায় বাড়ছে এ চাষের পরিধি।
একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, গোলাপ চাষ সাধারণত অন্য ফুল চাষের মত নয়। অন্যান্য ফুল গাছে এক সিজনই ফুল হয়। কিন্তু গোলাপ গাছে বেশ কয়েক বছর ফলন হয়। ফলে প্রতি বছর চারা রোপণ করতে হয় না। শুধুমাত্র সঠিক নিয়মে পরিচর্যা করলেই একটি গোলাপ গাছে অন্তত এক যুগেরও অধিক সময় পর্যন্ত ফুল পাওয়া যায়। ফলে অধিক লাভবান হন চাষীরা।
সাতকানিয়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, পটিয়া, বোয়ালখালী, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীতে গোলাপ চাষ হয়ে থাকে। এসব এলাকায় উৎপাদিত গোলাপ ফুল নগরের চেরাগী পাহাড় এলাকার দোকানে বিক্রি করা হয়। ফুল বেশি উৎপাদনের কারণে দাম কম হলেও গোলাপ চাষে ক্ষতির সম্ভাবনা কম বলে জানান কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, গাঁদা, গø্যাডিওলাসসহ অনেক প্রজাতির ফুল আছে শুধু এক বছরই ফলন দেয়। পরবর্তীতে আবারো চারা রোপণ করতে হয়। কিন্তু গোলাপ চাষ একবার করলে বেশ কয়েক বছর আর চারা রোপণ করতে হয় না। দীর্ঘসময় ফলন হওয়ায় সহজেই লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। গোলাপ চাষ করে লাভবান হয়েছেন এমন ফুল চাষীর একজন হচ্ছেন সাতকানিয়া পৌরসভার সতিপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ আইয়ুব। তিনি ডলু নদীর পাড় ঘেঁষে অন্তত দুইএকর জমিতে গোলাপের চাষ করেন। দীর্ঘ দুই যুগ আগে শুরু করা গোলাপ চাষ করে বেশ স্বাবলম্বী তিনি। সম্প্রতি আইয়ুবের ফুল ক্ষেত গিয়ে কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, ‘আমি ১৯৮৮-১৯৯৫ সাল পর্যন্ত গাড়ি চালিয়েছি। ৯৫ সালের শেষের দিকে মানুষের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়ে ডলু নদীর পাড়ে প্রথম বারের মত গোলাপ চাষ শুরু করি। গোলাপ চাষ করেই স্বাবলম্বী হয়েছি। তাই এ চাষ ছাড়িনি। প্রতি মাসে খরচ বাদ দিয়ে অন্তত দেড়/দুই লাখ টাকা ফুল বিক্রি করে ইনকাম হয়।’
১৬ ডিসেম্বর, ১৪ ফেব্রূয়ারি ও ২১ ফেব্রূয়ারি ফুলের ব্যাপক চাহিদার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্য ফুলের চাহিদা কমলেও এসব দিবসে গোলাপ ফুলের চাহিদা থাকে। ঐ এক দিনেই অন্তত দেড়/দুই লাখ টাকার গোলাপ বিক্রয় হয় বলে জানান তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাতকানিয়া ডলু ব্রিজ পার হয়ে রামপুর সংযোগ সড়ক ঘেঁষে ডলু নদীর বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় ছড়াচ্ছে গোলাপের সৌরভ। ক্ষেতে লাল গোলাপগুলো দুলছে বাতাশের তালে তালে। লাল গোলাপের পাশপাশি রয়েছে চায়না গোলাপ, সাদা গোলাপ ও হলুদ গোলাপ। ঐ ক্ষেতের পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকা মোহাম্মদ তারেক জানান, বর্তমানে বাজারে একটি গোলাপের চারা ৪০/৫০ টাকা বিক্রয় করা হচ্ছে। এটির উৎপাদন খরচ সর্বোচ্চ ৫/৬ টাকা। সপ্তাহে কমপক্ষে দুই বার ফুল কেটে তা চট্টগ্রাম শহরের দোকানে বিক্রয় করা হয়। এতে উৎপাদন খরচের অন্তত ৩ গুণ লাভ বেশি হবে বলে ধারণা তার।
গোলাপ চাষের বিষয়ে জানতে চাইলে সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, সাতকানিয়ায় ৩ হেক্টর জমিতে গোলাপ চাষ হচ্ছে। এ চাষে কৃষক লাভবান হচ্ছে। কাগজের তৈরি আর আমদানিকৃত ফুলে অন্যদের কদর কমলেও গোলাপ আছে আগের মতই। কেউ গোলাপের চাষ করতে চাইলে তাকে যথাযথ সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুশান্ত সাহা বলেন, ফুল একটি সম্ভাবনাময় পণ্য হলেও চায়না থেকে আমদানিকৃত কাগজ আর প্লাস্টিকের ফুলের কারণে এর বাজার বেশ মন্দা। তবে, গোলাপের মূল্য অটুট রয়েছে। গোলাপ চাষে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে বলে জানান তিনি।