গৃহহীনদের খুঁজে বের করুন, ঘর করে দেব

62

মুজিববর্ষে বাংলাদেশের একটি মানুষও যেন গৃহহীন না থাকে সেজন্য আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গৃহহীনদের খুঁজে বের করতে কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, এসব মানুষকে ঘর করে দেবে সরকার।
ঐতিহাসিক সাতই মার্চ উপলক্ষে শনিবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখনও আমাদের দেশে নদীভাঙ্গা মানুষ গৃহহারা হয়ে যায়, এখনও আমাদের দেশে কিছু মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়, যারা ভূমিহীন, গৃহহীন। আমি চাই মুজিববর্ষ আমরা উদযাপন করছি, এই মুজিববর্ষের ভেতরেই বাংলাদেশের একটা মানুষও গৃহহীন থাকবে না।
“সেখানে আমি অনুরোধ করব, সেখানে আমার অনুরোধ থাকবে, আওয়ামী লীগের এত নেতাকর্মী, এত আদর্শের সৈনিক, আপনারা যার যার নিজের গ্রামে, নিজের এলাকায় একটু খোঁজ নেন কয়টা মানুষ গৃহহীন আছে, কয়টা মানুষ গৃহহারা আছে বা ভূমিহীন আছে। আপনারা একটু খোঁজে বের করেন। তাদেরকে আমরা ঘর করে দেব। আপনি পয়সা খরচ করতে না পারলে আমি দেব। তাদের আমরা ঘর দিয়ে যেতে চাই।” খবর বিডিনিউজের
শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “সেটা যদি করতে পারেন, তবে সেটাই হবে সার্থকতা। ধরে নিন, এটাই আমার আপনাদের কাছে একটা দাবি। আপনি একটা ঘর করতে পারলেন, যে না পারবেন.. দরকার হলে টাকা আমি দেব, কিন্তু আপনারা করে দেবেন। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে দেব, ট্রাস্টের পক্ষ থেকে দেব, যেভাবে পারি দেব। যারা অর্থশালী, সম্পদশালী, বিত্তশালী তারা তো আরও পারবেনই। কাজে আপনারা সেটা করে দেন। বাংলার মাটিতে কোনো মানুষ ভূমিহীন, গৃহহীন থাকবে না।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এ বছরের মার্চ থেকে ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত এক বছর সময়কে সরকার মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে। আগামী ১৭ মার্চ মুজিববর্ষের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা স্বাধীনতার সুর্বণ জয়ন্তী উদযাপন করব। আমরা ২০২০ এর মার্চ থেকে ২০২১ এর মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ ঘোষণা দিয়েছি।
“আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বা আমাদের অন্যান্য সহযোগী নেতাকর্মীদের কাছে আমার একটা আবেদন থাকবে, আমরা মুজিববর্ষ উদযাপনের অনেক কর্মসূচি চিন্তা করি। আমরা করতে চাই, করে যাচ্ছি। অনেক অর্থও অনেকে ব্যয় করেন। একটা কাজ যদি আপনারা করতে পারেন, এর থেকে বড় সার্থকতা আর কিছু হবে না। আমি সে কাজটাই আপনাদের দিতে চাই।”
যুদ্ধবিধ্বস্ত এক দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নানা অবদানের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের জন্য জাতির পিতা সংগ্রাম করেছেন কেন? তিনি বারবার কি বলেছেন, তিনি বলেছেন,.. আমি কোট করছি, ‘আমার জীবনের একমাত্র কামনা বাংলার মানুষ যেন অন্ন পায়, বস্ত্র পায়, উন্নত জীবন পায়’ “পাশাপাশি তিনি যেটা সবসময় বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা, তা এই যে মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করতে চান। স্বাধীনতার পর তিনি যে সংবিধান দিয়েছেন, সে সংবিধানেও এই মৌলিক চাহিদার কথা স্পষ্ট বলেছেন। কিভাবে তা পাবে মানুষ সেটাও তিনি নিশ্চিত করেছিলেন। তিনি শিক্ষার ব্যবস্থা, চিকিৎসার ব্যবস্থা, সবই তিনি করে গেছেন। ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষ, তাদের জন্য গুচ্ছগ্রাম তৈরি করে তাদেরকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা তিনিই কিন্তু শুরু করেছিলেন। বাংলাদেশে একটা মানুষ গৃহহীন থাকবে, মুজিববর্ষে এটা হতে পারে না। কাজই তার যে আকাক্সক্ষা, সেই আকাক্সক্ষা পূরণ করতে চাই,” বলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে খাদ্য, শিক্ষার উন্নয়নে নানা উদ্যোগের পাশাপাশি গুচ্ছগ্রাম, আশ্রয়ন ও গৃহায়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, “সরকারিভাবে কিন্তু আমরা প্রোগ্রাম নিয়েছি। আমরা করে যাচ্ছি। কিন্তু তারপরে আমি বলব, জাতির পিতার আদর্শের
সৈনিক হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা নেতাকর্মীরও দায়িত্ব দেশের জন্য আছে, জাতির জন্য আছে। সেটা যদি করতে পারেন, তবে সেটাই হবে সার্থকতা।“
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কি আপনারা পারবেন করতে? আমার এ কথাটা পৌঁছে দেবেন সারা বাংলাদেশে? ধরে নিন, এটাই আমার আপনাদের কাছে একটা দাবি।“
নেতাকর্মীরা এসময় দাঁড়িয়ে দুই হাত তুলে জানান, তারা দলের সভাপতির এই দাবি বাস্তবায়ন করবেন।
সভায় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, মতিয়া চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি।