গুরুত্ব বিবেচনায় চট্টগ্রাম শহরের পরিধি বাড়ানো প্রয়োজন

42

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘ব্রিটিশ শাসন আমলের আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের হেডকোর্য়ার্টার চট্টগ্রামে সমুদ্রবন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯০৫ সালে। স্বাধীনতাকালে ঢাকা-চট্টগ্রামের গুরুত্ব একই থাকলেও ক্রমান্বয়ে কেন্দ্রীকরণের জন্য চট্টগ্রাম পিছিয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী এই সত্য উপলব্ধি করে কর্ণফুলী টানেলের মতো উপমহাদেশে প্রথম টানেল নির্মাণ, চট্টগ্রামের মূল শহরের সমান জায়গা নিয়ে মিরসরাই ইকনোমিক জোন ও অন্যান্য মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন’। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ও সিটি কর্পোরেশনের আওতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করে তিনি বলেন, প্রশাসনিক গুরুত্ব বিবেচনা করে চট্টগ্রাম শহরের পরিধি বাড়ানো প্রয়োজন।’
তথ্যমন্ত্রী গতকাল শুক্রবার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আয়োজিত চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (সিআইটিএফ) সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। মন্ত্রী আরও বলেন, সারাদেশে ব্যবসায়ীদের সমান সুযোগ নিশ্চিতকরণ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের গুরুত্ব বিবেচনায় ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও খুলনা থেকেও আইপি ইস্যু করা উচিত। বর্তমানে প্রায় ২ হাজার ডলার মাথাপিছু আয়, প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত আলু উৎপাদন এবং চাল রপ্তানি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে নির্দেশ করে। বাংলাদেশ এখন সাহায্য নেয় না বরং সাহায্য দেয়। তিনি মিরসরাই জোনে অতি শীঘ্রই শিল্প কারখানা স্থাপন হবে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং ব্যবসা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে সহযোগিতার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত ২৭তম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা- ২০১৯ এ অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয় সমাপনী দিনে। তবে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও মেলা চলবে ১৫ এপ্রিল রাত ১০ টা পর্যন্ত।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে আয়োজত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চিটাগাং চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান, চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমেদ এবং ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী। অন্যান্যের মধ্যে চেম্বার পরিচালকবৃন্দ এ কে এম আকতার হোসেন, কামাল মোস্তফা চৌধুরী, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (আলমগীর), মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন), ছৈয়দ ছগীর আহমদ, সরওয়ার হাসান জামিল, অঞ্জন শেখর দাশ ও মো. আবদুল মান্নান সোহেল, প্রাক্তন পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন ট্রেডবডি নেতৃবৃন্দ, অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিসহ নগরীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষ অতিথি সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে না পারলে উন্নত দেশের স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে যাবে। তিনি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে পুলিশ কাজ করছে উল্লেখ করে ব্যবসায়ীদের পাশে থাকার কথা জানান।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, মেলার উদ্দেশ্য হচ্ছে স্থানীয় বাজারে দেশীয় পণ্যের পরিচিতি লাভ করানো। এ মেলার মাধ্যমে পরিচিতি পাওয়া এন. মোহাম্মদ প্লাস্টিক, আরএফএল, বিআরবি ক্যাবল ইত্যাদি পণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্তে¡ও মেলায় মানসম্পন্ন পণ্য প্রদর্শনের চেষ্টা করা হয়। তিনি সরকারের বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পসমূহ সম্পন্ন হলে বাণিজ্যিক রাজধানী বাস্তবায়নও সম্পন্ন হবে উল্লেখ করে প্রাচ্য বিশেষ করে চট্টগ্রাম-সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক বিমান যোগাযোগ বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি চট্টগ্রামের নান্দনিক সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রেখে পর্যটন শিল্প বিকাশের আহবান জানান চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।
চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমেদ চট্টগ্রাম থেকে পণ্য পরিবহনে ১৩ টন ওজনের বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানিয়ে মেলায় ভ্যাট হার হ্রাস করার আহবান জানান এবং পলোগ্রাউন্ড মাঠকে মেলার জন্য স্থায়ী ভেন্যু হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানান।
ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে ভারত বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। বাংলাদেশে ভারতের লাইন অব ক্রেডিট প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার যা কোনো দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। তিনি ভবিষ্যতেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠান শেষে মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পার্টনার কান্ট্রি থাই প্যাভিলিয়ন, বিদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই কমিশন অব ইন্ডিয়া, এস এইচ কারুকর্ম, পিএনএল হোল্ডিংস লিমিটেড, রাজ টেক্সটাইল, স্টেপ ফুটওয়্যার, হাতিল কমপ্লেক্স লিমিটেড, আবুল খায়ের মিল্ক প্রোডাক্টস লিমিটেড এবং এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।