গুমাই বিলে বোরো চাষে এক-তৃতীয়াংশ জমি অনাবাদি

117

চট্টগ্রামের একটি প্রাচীন আঞ্চলিক প্রবাদ রয়েছে, হাতত কাঁচি কোঁরত দা ভাত খাইলে রইন্ন্যা যা (হাতে কাঁচি কোমরে দা ভাত খেলে রাঙ্গুনিয়া যা) এবং দেশের আড়াই দিনের খাদ্য উৎপাদনকারী প্রখ্যাত গুমাই বিল এখন ন্যাড়া ভূমিতে পরিণত। বোরো চাষে এবার গুমাই বিলে এক তৃতিয়াংশ জমি আবাদ রয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ দুষছে কৃষককদের। আর কৃষকরা বলছেন, আমাদের চাষাবাদে কৃষি বিভাগ তেমন উদ্বুদ্ধ করেনি। ফলে এবার বোরো চাষাবাদে কৃষকের গোলায় ধান উঠবেনা। সরকারীভাবে ধান চাল সংগ্রহে এর প্রভাব পড়বে বিস্তর। কৃষকরা ধান উৎপাদন করলে সাধারণ মানুষ খাবে কি। গুমাই বিলে এবার আবাহাওয়া পানি সব কিছু অনুকুলে থাকলেও কৃষকরা শত শত একর এবার জমি ন্য্ডাা ভূমিতে পরিণত করেছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী মোহাম্মদ শহিদুজ্জামান জানান, এবারে বোরো চাষাবাদে লক্ষমাত্রা নিদ্ধারন করা হয় ৭ হাজার ৪শ হেক্টর। চাষাবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৮শ ৮০ হেক্টর। জানা যায়, কর্ণফুলী নদী বিস্তৃত উর্বর ভূমি গুমাই বিলের পলিবাহিত জমি উর্বরতার কারণে প্রতি বছর দুই ফসলী এই ভূমি থেকে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য শস্য উৎপাদিত হয়। দেশের বৃহত্তম চলন বিলের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চট্টগ্রামের এই শস্য ভান্ডারে গত মৌসুমে খাদ্য শস্য উৎপাদিত হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার মেট্টিক টন। যা গুমাই বিলের ৪ হাজার হেক্টর থেকে উৎপাদিত ধানের বাম্পার ফলনে লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এভাবে খাদ্য উৎপাদন করে প্রতি বছর জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে এই বিল। ১৯৪৫ সালে রাঙ্গুনিয়ার কৃতি পুরুষ মরহুম আব্দুল বারী তালুকদার অক্লান্ত পরিশ্রম করে গুমাই বিল সংষ্কার করে প্রথম বারের মতো আধুনিক চাষাবাদ শুরু করেন। গুমাই ঝিল থেকে বিলে পরিণত করার প্রবল কৃতিত্বের অধিকারী তিনি। ১৯৮০-৮১ সাল থেকে গুমাই বিলের জমি শুষ্ক মৌসুমে সেচের আওতায় আনা হয়। দিন দিন গুমাই বিলের চির চেনা সে যৌবন এখন হারাতে বসেছে শুধু মাত্র পরিকল্পনার সংকটে। রাঙ্গুনিয়ার ৫ লক্ষাধীক মানুষের অধিকাংশ পেশা হচ্ছে কৃষি কাজ। এখন কৃষকরা সহজেই পেশা বদলানোর কারণে কৃষি জমিতে চাষাবাদ হচ্ছেনা। গুমাই বিলের দিকে থাকালে এখন ন্যাড়া ভূমি ছাড়া আর কিছু দেখা যায়না। এ সময়ে বোরোচাষাবাদে সবুজ চাদরে ঢাকা দেখা যেতো পুরো গুমাই বিল। আবার গুমাই বিলে অনেকে কৃষি জমিতে গড়ে তুলছে নানা স্থাপনা, বহুতল ভবন। অধিকাংশ কৃষকরা দুষছে কৃষি বিভাগকে। বিস্তীর্ণ জমি অনাবাদি থাকলেও কারো যেন কোন দায়িত্ব নেই। কৃষকদেও গুমাই বিলে বোরো চাষাবাদ করার জন্য কোন প্রকার উদ্বুদ্ধ করা হয়নি। উপজেলা কৃষি অফিসের তদারকি থাকলে গুমাই বিলের এ দশা হোতনা। চাষাবাদ না হওয়ায় সামনের দিন গুলো কৃষকরা চরম অথনৈতিক সংকটে পড়বে। বেকারত্ব হয়ে যাবে শত শত কৃষক। যে সব কুষক বাপ দাদার পৈত্তিক পেশা কৃষি থেকে দুরে কিংবা অন্য পেশায ঝুকছে তাদেও অর্থনৈতিক অবস্থাও তত ভালনা। শত কৃষক বাপ দাদার পেশা চাষাবাদ ছাড়া বিকল্প কোন পেশাতে না জড়ানোতে তাদের পাবিবারিক চিন্তা চেতনা সামনেও কৃষি কাজের উপর নির্ভর করা। অথচ এসব কৃষকদেও কোন খোজ খবর রাখেনা উপজেলা কৃষি অফিস। উপজেলা কৃষি অফিসে অর্ধ শতাধীক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা থাকলেও তারাও কৃষকদের পাশে যান না। সরকারি চাকুরি যেন তেন ভাবে দায়িত্ব পালন। সরকারের বিশদ সুযোগ সুবিধা সার বীজ কিটনাশকসহ নানা উপকরণ বিনা মুল্যে দেওয়ার পর দেশের আড়াই দিনের খাদ্য উৎপাদনকারী গুমাই বিল খাম খেয়ালীপনায় বোরো চাষাবাদ মারাতœক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গুমাই বিলে এভাবে চাষাবাদ না হলে সামনের দিন গুলোতে গুমাই বিলে গড়ে উঠবে বহুতল ভবনসহ নানা স্থাপনা। উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কাজী রমিজ আহমেদ জানান, চলতি বোরো চাষাবাদে উপজেলায় ৭ হাজার ৪শ হক্টর জমিতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন হয়। এরমধ্যে গুমাই বিল থেকে সিংহভাগ ধান উৎপাদিত হয়ে থাকে। এবারে গুমাই বিলে বিস্তীর্ণ জমি অনাবাদি থাকায় আশানুরুপ ধান উৎপাদন না হওয়ার আশংকা রয়েছে। উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের পাঠান পাড়া গুমাই বিলের কৃষক আব্দুল কুদ্দুছ (৬০), আধুরপাড়া গ্রামের নুরল আবছার (৫৫), ছুফি পাড়ার মো. জসিম (৪৩) হাজি পাড়ার আবু তাহের ( ৫৩) কদমতলীর মো. আজিম (৪০), রেজাউল করিম (৫০) আবু শ্যামা মেম্বার ( ৫১) অভিজিত চন্দ্র ( ৪৩) পূর্ব চন্দ্রঘোনার শিবু চন্দ্র (৪৩), জানান, গত দুই সপ্তাহ আগে গুমাই বিল থেকে আমন ধান কেটে গোলায় তুলেছি। আশানুরপ ফলন পেয়েছি। উপযুক্ত মুল্য পায়নি। চাষাবাদে যে পরিমাণ অর্থ খরচ করেছি তার অর্ধেকও উঠে আসেনি। এবারে আমরা গুমাই বিলে বোরো চাষবাদ করেনি। আমাদের বাপ দাদার পেশা আমরা কি ছাড়তে পারি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে চাষাবাদ করার জন্য কোন কৃষককে উদ্বুদ্ধ করেনি। আমরা ফসল উৎপাদন করি তার ফল ভোগ কওে চাল কলের মালিকরা।
প্রকৃত কৃষক থেকে সরকারিভাবে ধান চাল না কিনে সরকারি দলের প্রভাবে প্রভাবশালী চাল মিল থেকে ধান চাল সংগ্রহ করায় এবার একেকজন চালকল মালিক লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার জানান, গতবারের আমন চাষাবাদে বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় বোরো চাষাবাদে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তাদেরকে আমরা চাসাবাদে সবার্তক সহযোগিতা করে আসছি।