গুজব ঠেকাতে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি

125


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক ব্যবহার করে পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে এদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের দোসর মহল আবারও নোংরা ষড়যন্ত্রে নেমেছে। অপপ্রচার, গুজব ছড়িয়ে জন-মানুষের মাঝে এক ধরনের ভয়-আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে। শিকার হচ্ছে, কতিপয় সাধারণ মানুষ। আর টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের। ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালকৃত ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে ১১ জন নিরাপরাধ মানুষকে। আহত করেছে ২৫ জনের মত। যাদের মধ্যে রয়েছেন মানসিক ভারসাম্যহীন, এনজিওকর্মী, অজ্ঞান পার্টির সদস্য, কলেজছাত্র ও সাধারণ জন-মানুষ। আর এই গণপিটুনির ভিডিও, ছবি ভাইরাল করে অন্যদের বুঝানো হচ্ছে, ওই ব্যক্তি ‘ছেলেধরা’। আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে সমাজ-রাষ্ট্রের চারপাশে!
নেত্রকোণার পর খোদ রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলেধরা সন্দেহে মানসিক রোগী রেনু নামের এক নারীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এখন দেখার বিষয়, ওইসব বিক্ষুব্ধ জনতা কারা এবং কারা বাইরে থেকে এসে প্রধান শিক্ষকের রুমের গেট ভেঙে ‘ছেলেধরা’ বলে ওই নারীকে গণপিটুনিতে হত্যা করেছে। তাদের চিহ্নিত করার জরুরী হয়ে পড়েছে।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, রাজাকার সাঈদীকে চাঁদে দেখার গুজবের মতই পদ্মা সেতু নিয়ে শুরুতেই দুর্নীতির গুজব ছড়িয়ে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি নষ্ট করেছিল স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার ও তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। এমনকি, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানানো হচ্ছে বলেও সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে বিভ্রান্ত করতে অপচেষ্টা করা হয়েছিল এবং ওইসব ষড়যন্ত্র আজও অব্যাহত রয়েছে। সরকারের উচিত হবে প্রতিটি স্কুলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সচেতনতার দিকে নজর দেওয়া।
আর সেখানেই সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেও এগিয়ে এসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষক দ্বারা প্রতিটি স্কুলের অভিভাবদের গুজবের বিষয়টি নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে মত বিনিময় করা সময়ের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়ে পড়েছে। সেই সাথে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যুক্ত হয়ে ওই মত বিনিময় সভায় জনসচেতনতা সৃষ্টির লিফলেট, নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার শাস্তির বিষয়গুলো অভিভাবকদের অবহিত করা, দেশের পুলিশ প্রশাসন সর্বক্ষণিক স্কুলের ছেলে-মেয়েসহ অভিভাবকদের পাশে আছে, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে-এটি আশ্বস্ত করা এবং এটি নিছক গুজব, মিথ্যাচার করছে দেশবিরোধী একটি মহল-এটিও তুলে ধরা সময়ের একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে প্রতিটি স্কুলে কিছু দৃশ্যমান পুলিশ সদস্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও চারপাশের সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আশ্বস্ত করাও জরুরি হয়ে পড়েছে। তার কারণ, ‘ছেলেধরা’ গুজব নিয়ে আতঙ্কিত ও উদ্বেগজনক কিছু মানুষের সাথে আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে কথা বলেছি। তারাও জানে, ‘ছেলেধরা’ বিষয়টি আসলেও গুজব কিন্তু মা’র মন অস্থির থাকে, বাবা’র প্রতিটি সময় কাটে অজানা দুশ্চিন্তায়। অনেকে গুজবের ব্যাপারটি জানার পরেও আমাদের সামাজিক অবক্ষয় আর রাজনৈতিক অস্থিরতাকে উপেক্ষা করতে পারছে না। আবার অনেকে নিরাপত্তার বিষয়টির উপর আস্থার সংকট বলেও তাদের মতামতে জানিয়েছে।
আমি মনেকরি, এক ধরনের আন্থহীনতার জায়গা থেকে এই ধরনের কর্মকাÐ বিশেষ করে তাৎক্ষণিক বিচারের ব্যবস্থা হত্যার মাধ্যমে নিশ্চিত করার প্রবণতা থেকে আমাদের সাধারণ মানুষকে বের করে আনা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের রাজনীতিবিদ বা জনপ্রতিনিধি যেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার কথা; সেই প্রশ্নবিদ্ধ জায়গা থেকে জনপ্রতিনিধিদেরও জনসচেতনতা সৃষ্টি-বৃদ্ধির কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে।
অন্যদিকে, আমাদের ছাত্রসংগঠনগুলোও গুজবের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনও কর্মসূচি গ্রহণ করতে দেখিনি। আবার প্রতিটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব শিক্ষার্থীদের ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ বিশেষ করে ফেসবুকে গুজবের বিরুদ্ধে এবং সচেতনতার পক্ষে তেমন কোনও ছবি, ভিডিও ভাইরাল করতে দেখা (উল্লেখযোগ্য ভাবে) যাচ্ছে না। বাংলাদেশে যে হারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার হয়, সবাই সঠিক তথ্য-উপাত্ত আর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরলে, মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুললে, এই গুজবের অপসংস্কৃতি শুধু রোধই নয়, বরং নির্মূল করাও সম্ভব।
আর সরকার, সরকার পরিচালিত রাষ্ট্রযন্ত্র অথবা বেসরকারিভাবে স্যোশাল মিডিয়া মনিটরিং ব্যবস্থা আছে কিনা খোঁজ-খবর নিয়েও জানা সম্ভব হয়নি। আমাদের সামাজিক অবস্থান, রাষ্ট্রব্যবস্থা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, স্বাধীনতাবিরোধীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতা অনুধাবন করে এবং সর্বপরি আমাদের সচেতনতার বিষয়টি মাথায় রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি মনিটরিং করা সময়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
লেখক : সভাপতি,
বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)