গাউছুল আজম মাওলানা শাহ্সুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (ক.)

117

মোঃ নুরুল আবছার

মাইজভান্ডারী দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরুষ হযরত গাউছুল আজম শাহসূফি সৈয়দ মাওলানা আহমদ উল্লাহ (ক.)। যার শান মান লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরা আমি অধমের পক্ষে সম্ভব নয়, কেননা যুগেযুগে উচ্চস্তরের বহু জ্ঞানীগুণী তাকে জানতে গিয়ে নিজেদের অর্জিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। কারণ গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী বেলায়তের কুলকিনারাহীন এক মহাসমুদ্র। শরীয়তের জগদ্বিখ্যাত বহু আলেম মাইজভান্ডারী তরিকার বিরোধিতা করতে গিয়ে নিজেদের অর্জিত শরীয়তের জ্ঞান হারিয়ে গাউছুল আজম মাইজভান্ডারীর কদমে নিজেকে অর্পণ করে প্রত্যেকে উচ্চ মার্ঘের আউলিয়া হয়ে মাইজভান্ডারী তরিকার অনুসারী হয়েছেন, যা লিখে শেষ করা যাবে না। তাইতো, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ইমাম আশেকে রাসুল (দঃ) হযরতুল আল্লামা গাজী আজিজুল হক শেরে বাংলা (রঃ) তার বিখ্যাত দিওয়ানে আজিজ গ্রন্থে হযরত আহমদ উল্লাহ নামের আগে “গাউছুল আজম” উপাধি শাহানশাহে মদিনার মহান দরবার থেকে এসেছে উল্লেখ করেছে। এছাড়া পয়গাম্বর কুলের সরদারের হাতে দুটি নুরানী তাজ বা মুকুট ছিল, তৎমধ্যে একটি হুজুর গাউছুল আজম আবদুল কাদের জিলানী (রাঃ) মাথায় অপরটি হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারীর মাথায় পরিয়ে দিয়েছে। সে জন্য তাকে পৃথিবীর পূর্বাঞ্চলীয় দেশসমূহের বা পূর্বাঞ্চলে জন্ম নেওয়া গাউছুল আজম ও উন্মতে মুহাম্মদীর উজ্জ্বল প্রদীপ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। ১৮২৬ সালে হিজরী ১২৪৪, ১২৩৩ বাংলা, ১ লা মাঘ বুধবার হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আওলাদে রসুল ছিলেন। তার পিতার নাম সৈয়দ মতিউল্লাহ (র:) ও মাতার নাম সৈয়দা খায়রুন্নেছা বিবি (ব.)
গাউছুল আজম হযরত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.) তদানীন্তন ভারত বর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসা হতে সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করার পর হিজরী ১২৬৯ সালে তিনি যশোর জেলার কাজী (বিচারক) পদে যোগদান করেন। ১২৭০ হিজরী সালে কাজী পদ থেকে পদত্যাগ করে কলকাতায় মুন্সী বু-আলী মাদ্রাসার প্রধান মোদাচ্ছের পদে যোগদান করেন। আল্লাহর নির্দেশিত খোদা প্রাপ্তির পথে কাদেরিয়া তরিকার সাজ্জাদানসীন হযরত আবু সাহমা মুহাম্মদ সালেহ লাহোরী (র.) এর হাতে বায়াত গ্রহণ এবং পরবর্তীতে পীরের নির্দেশে কলিকাতায় সৈয়দ সালেহ লাহোরীর অগ্রজ কামেল ব্যক্তিত্ব শাহ সূফী সৈয়দ দেলোয়ার আলী পাকবাজ এর সোহবতে গিয়ে এওেহাদী কুতুবিয়তের ফয়েজ হাসিলের মাধ্যমে নিজে কামেলিয়তের উচ্চ স্তরে পৌছেন। পরবর্তীতে কাদেরিয়া তরিকার উপর ভিত্তি করে নিজেই এক তরিকার প্রবর্তন করেন, যা মাইজভান্ডারী তরিকা হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করে। তিনি কোরান ও সুন্নাহর আলোকে এবং আধ্যাত্মিক উপলব্ধির প্রেক্ষাপটে ইসলামের চিন্তা দর্শনকে একটি
ব্যাপক ভিত্তির উপর দাঁড় করাইয়াছেন। এ ভিত্তির উপর যে দর্শন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাই মাইজভান্ডারী দর্শন। ৫ পাঁচ বৎসর সময়কাল পীরের সাহচর্যে থেকে পিতা হযরত সৈয়দ মতিউল্লাহ (ব.) ১৮৭৫ সালে ইন্তেকাল করায় কলিকাতা হতে নিজ বাড়িতে চলে আসেন। পারিবারিক উদ্যোগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তিনি ১২৭৮ হিজরী পর্যন্ত হেদায়ত কার্য পরিচালনার্থে বিভিন্ন মাহফিলে ওয়াজ নসিহত করেছেন। মাইজভান্ডারী দর্শনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য বহুমুখী এবং ব্যাপক, এগুলো আবদ্ধ করে শেষ করা যাবে না। কারণ একজন মানুষের দেহ, মন, চিন্তধারা, আত্মা তথা প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সর্ববিদ শুদ্ধাচার অনুশীলনই হচ্ছে মাইজভান্ডারী দর্শনের মূল কথা, ইসলামের অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য হচ্ছে বিনয়, আদব ও মহব্বত।
আজ এই উপমহাদেশ তথা সমগ্র বিশ্বে মাইজভান্ডারী দর্শন সর্বজাতীয় মানুষের কাছে অনুস্মরনী ও অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে। কেননা এই দর্শনে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে ও দুনিয়া আখেরাতে সফল হয়ে খোদার সান্নিধ্য লাভে ধন্য হয়। এই মহা মনিষীর অসংখ্য কেয়ামত লিখে শেষ করা যাবে না, তার পরেও সামান্য উল্লেখ করতে চাই।
১। হযরতের আদেশে রেয়াজুদ্দীন উকিলের ভূ-সম্পত্তি খরিদ ও রেয়াজুদ্দীন বাজারের পত্তন।
২। হযরতের আধ্যাত্মিক প্রভাবে একরাতে মক্কাশরীফ হতে চট্টগ্রাম শহরে হাজীর প্রত্যাগমন।
৩। হযরতের বেলায়তী প্রভাবে মৃত্যুকালে আজরাইল ফেরত ও ষাট বৎসর আয়ু বৃদ্ধি। এই ধরনের উচ্চ মার্গীর কেয়ামত তার গাউছে আজমিয়তের পরিচয় বহন করে।
এই মহান গাউছুল আজম মানব জাতির জন্য অশেষ কল্যাণের ধারা অব্যাহত রেখে ৭৯ বৎসর বয়সে ২৩ জানুয়ারি ১৯০৬ইং ১০ মাঘ ১৩১৩ বঙ্গাব্ধ সোমবার দিবাগত রাতে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে ইহধাম ত্যাগ করেন, আল্লাহ যেন এই গাউছুল আজমের উছিলায় আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা করেন। আমিন।

লেখক : প্রাবন্ধিক