‘গাঁয় মানে না আপনি মোড়ল’

241

মছিউদ্দৌলা জাহাঙ্গীর

গাঁয় মানে না আপনি মোড়ল কথাটি অনেকের বেলায় খাটলেও আমাদের নুরুল হক নুরের বেলায় একদমই খাটছেনা। কি হতভাগা দেখেন, গাঁয়ে মানে তবু মোড়ল হতে পারছেনা। সকলের প্রত্যক্ষ ভোটে ঢাবির নির্বাচিত ভিপি তারপরও কথা বলতে পারেনা খালি মার খায়। এখন আবার হত্যার হুমকি খেয়ে বসে আছে, হেহেহেহে। অথচ আমাদের ট্রাম্প চাচাকে দেখেন, কেউ মানেনা তথাপি মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা দিয়ে বসে আছেন। মান না মান মে তেরি মেহমানের মত অনেক বছর ইরাকে ঢুকে বসে আছে, আর জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে খুন করে ফেলল। যা খুশী তা করছে কারো কিছুবলার সাহস নাই একেই বলে প্রকৃত গাঁয় মানে না আপনি মোড়ল। আমি মানি না কো কোন আইন- ৬, কাউকে না মানলে আমার কি হয়? যা ইচ্ছা তা করেন, যা খুশী তা বলেন, সমস্যা কিছু নাই ট্রাম্প চাচার। ক্ষমতার দাপটে চাচা ইরানের সাথে যুদ্ধ বাধানের তালে ছিলেন। মার্কিন জনতাকে ধন্যবাদ তারা চাচার সে ক্ষমতাটা কেড়ে নিয়েছে। ইরানও কিন্তু দেখিয়ে দিয়েছে, আমেরিকাকে ছেড়ে কথা বলেনি, সোলাইমানি হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছে। হতে পারে ইরানের শক্তি দেখে মার্কিন কংগ্রেস চাচারলাগাম টেনে ধরেছে নইলে বড় লাফাতেন। তবে স্যোশাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও দেখে হাসি পেল। চাচা একটি সভায় বক্তৃতা করছিলেন, হঠাৎ ‘আল্লাহু আকবর’ শুনে চাচা দৌড় মারতে চাইলেন, হাহাহা। জানিনা ভিডিওটি সত্যি নাকি এডিট। অবশ্য এডিটে অনেকের আছে বড় ক্রেডিট।
আসলে ট্রাম্প চাচার কথা বলে আমরা কূল-কিনারা কিছু পাব না। তাঁকে নিয়ে আমরা কথা বলা মানে আদার ব্যাপরীর জাহাজের খবর নেয়া। তাই তিনি যা খুশী তা করুন, তাঁর সে ইচ্ছাকে না হয় মেনে নিলাম। কিন্তু তাই বলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বড় ভাইদের যা খুশী তা করাটাকে কেমনে মানি? হায় খোদা র‌্যাগিংয়ের নামে তারা যা শুরু করেছে তাতো জঘন্য অপরাধ। আশ্চর্য আমি মানি নাকো কোন আইনÑ এমন কেমনে হয়? কয়মাস আগে দেখলাম নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘হাল্কা র‌্যাগিংয়ে’ দু’শিক্ষার্থী হাসপাতালে!ভাবছি এটা কেমন র‌্যাগিং, হাল্কাতে যদি হাসপাতালে যেতেহয় ভারিতে তবে কি অবস্থা হত? এখন সেটা কি হাল্কা না হল্কা, অর্থাৎ আগুনের হল্কা আরকি। হাল্কা ব্যাগিং হলে হাসপাতাল যাওয়ার কথা না, হল্কা হলে কিন্তু যেতে হতে পারে কারণ তখন আগুনের বিষয়টি এসে যায়। আর তা অস্বাভাবিক না, এখন শিক্ষককে পর্যন্ত প্রায় আগুন দিচ্ছে তথা কেরোসিন ঢালা হচ্ছে। সেখানে শিক্ষার্থী তেমন আর কি? জানা গেছে শিক্ষার্থীদের নাকি ম্যানার তথা আচরণ শিক্ষা দেয়া হচ্ছে, আহা কি শুভাকাক্সক্ষী। তার আগে চবিতে দেখলাম নামতা শেখাতে, প্যাকের নামতা, হাহাহাহা। বিশ্ববিদ্যালয়ে কি শিক্ষার্থীরা নামতা আর আচরণ শিখতে যায়, তাহলে স্কুল-কলেজগুলো কেন আছে, সেখানে তারা কি শিখে? অবশ্য সে কথা বলে লাভও নেই, কারণ এখন যার যে কাজ সে সেটি করে না, করে অন্যটি। যেমন ছাত্রের কাজ পড়ালিখা, সে তা না করে করছে সন্ত্রাসী আর টেÐারবাজি। শিক্ষকের কাজ ছাত্র পড়ানো কিন্তু তাঁরা তা না করে ছাত্রের সাথে চাঁদার টাকা ভাগ করেন আর কোচিং সেন্টার খুলেন।
ব্যবসায়ীরা রাজনীতি করেন, রাজনীতিবিদগণ ব্যবসা করেন। সংসদ সদস্যদের কাজ আইন প্রণয়ন করা, তাঁরা গিয়ে এলাকায় করেন উন্নয়ন। ফলে স্থানীয় সরকার প্রধানগণ গাল ফুলিয়ে বসে থাকে, কারণ সাংসদগণ গিয়ে তাঁদের উপর করেন খবরদারী। এভাবে সবাই নিজের কাজ না করে পরের কাজেকরে পোদ্দারি। সম্প্রতি আবার দেখলাম ঢাকা রমনা অঞ্চলের পুলিশের এক উপকমিশনার (ডিসি) মেহেদী নামক এক ব্যবসায়ীকে ৫০ লক্ষটাকা দিয়েছেন ব্যবসা করার জন্য। মাশাল্লাহ্ পুলিশ করছে ব্যবসা, আর কি আছে ভরসা? অবশ্য ভরসা যে নাই তা ইতোমধ্যে প্রমাণও হয়ে গেছে। লেনদেনে মনেহয় কি গ্যাঞ্জাম লেগেছে, পুলিশ গিয়ে রাতের আঁধারে মেহেদীকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছে। হায়রে মেহেদী কি যে পাগল হলি, কোন দুঃখে যে পুলিশের সাথে ব্যবসা করতে গেলি। থানার পাশে যে কানা যায় না সে কথা কেন ভুলে গেলি? অতএব বুঝুন কার কাজ কে করছে? থানা নিয়ে ডিসি সাহেব মেহেদী থেকে সোয়া কোটি টাকার চেক লিখিয়ে নিলেন। ফলে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে এল, ঘটনা প্রকাশ হয়ে গেল, প্রশ্ন উঠল ডিসি ৫০ লক্ষ টাকা কোথায় পেলেন? ডিসি জানালেন টাকা দিয়েছে তাঁর শ্যালক। মাশাল্লাহ্ শ্যালক দারুণ এক বালক, চমৎকার এক রক্ষাকবচ। এই রক্ষাকবচ নিয়ে বছর দেড়েক পূর্বে প্রকাশ হওয়া আমার একটি প্রবন্ধ ‘হযবরল’তে বেশ কিছু আলোচনা করেছিলাম। মানুষ কিভাবে বিভিন্ন শব্দকে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজে লাগায় মূলত সে কথাই আলাপ করেছিলাম তাতে। আজ দেখছি ডিসি সাহেব তাঁর শ্যালককে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজে লাগিয়ে ফেললেন। আজকাল এটি অবশ্য প্রায়ই দেখা যায় শালা-শালী, শ্বশুর-শাশুড়ীকে রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করতে। অনেক রাঘববোয়ালদের দেখা যায় শালা-শালী, শ্বশুর-শাশুড়ীর নামে সম্পদ খরিদ করতে, হেহেহেহে। সমস্যা নাই বড় কুটুম, বিবাহজাত সম্পর্ক অনেক বড় বটবৃক্ষ। মাথার উপর ছাতা হয়ে থাকে চিরকাল। ঠিক তেমন ডিসির শ্যালকও তাঁর সুরক্ষার ঢাল। সুতরাং ভরসা ছাড়া চিন্তা নাই চলুক এভাবে যে যতদিন পারে। আমি মানি নাকো কোন আইন- ৬, এমন করে সব যেন নিরাপদে হয়। ঠিক আছে কর তোমরা, তোমরা পারলে আমাদের কোন অভিযোগ নাই, করতে থাকো। তবে পাপ কিন্তু বেশী দিন চাপ দিয়ে রাখা যায় নাÑ কথাটা মনে রাখিও। বেশী তো দূর না মাত্র নারায়ণগঞ্জ, র‌্যাবের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সেনাবাহিনীর লোক ভীষণ অভিজ্ঞ অফিসার। লাশ কেমন করে পানিতে গুম করতে হয় একদম তাদের নখদর্পণে। সাতটি লাশের প্রত্যেকটিকে পেট ফুটো করে ইট বেঁধে নদীতে ডুবিয়ে দিল। পরিপূর্ণ সায়েন্টিফিক প্রসেস, পুবের সূর্য পশ্চিমে উঠতে পারে এ লাশ কখনো ভেসে উঠতে পারে না। এমন অভিজ্ঞ হাতের কাজ গ্যাস পেটে থাকতেই পারবে না, ফুটো দিয়ে বেরিয়ে যাবেই। সুতরাং পেট ফুলতে না পারলে লাশ ভাসবে কি করে? পাথর না বাঁধলেও লাশ ভেসে উঠার কথা নয়, কিন্তু লাশ ভেসে উঠল! এত বড় বড় পাথর বাঁধার পরও পেট ফুটা করে দেয়া লাশ পানিতে ভেসে উঠল কেমন করে? কারো কাছে তার উত্তর নেই। আরো কথা আছে, লাশ ভেসে যাওয়ার কথা ভাটির দিকে, লাশ চলে এসেছে উজানে! কেমনে সম্ভব, কে করল এ কাম? আমি করিনি, আপনারা কি করেছেন? করেন নি, কে করেছে তাও জানেন না। তবে প্রত্যেক কাজের কোথাও কোন সময় একটি জবাবদিহিতা থাকে, তাইতো তারা বেজে গেছে।
অতএব ফাল পাড়ার কিছু নাই, অতি উড়লে ডানা ভেঙ্গে পড়বে। চোখে দুনিয়া দেখে কিন্তু বালুটি পড়তে দেখে না, চাকচিক্য দেখে মনে হয় দুনিয়া রঙিন, বালু পড়লে বুঝা যায় দুনিয়া কঠিন। ফলে ধরাকে সরা জ্ঞান না করে ধরাকে কড়া জ্ঞান করা ভাল। কিছুদিন আগেও মনেহত ই¯্রাইলকে আরববিশ্ব কিছু করতে পারবেনা, সে ধীরে ধীরে গোটা ফিলিস্তিনকে গিলে খাবে। এখন মনে হচ্ছে অত সহজ না, কোন ঝাড়ে কোন বাঘ বসে আছে কেউ জানেনা। ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা ওআইসি, আরব লীগ সবাই প্রত্যাখ্যান করেছে। এবং তা করেছে অত্যন্ত সাহস ও দৃঢ় মনোবলের সাথে। এর পেছনে কারণ মনে হয় ইরান। যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের সেই বজ্র কঠিন জবাবই মনে হয় বিশ্বরাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। আমেরিকা মনে করেছিল ইরান বিরান, কিন্তু ইরান ধীমান বড় অফুরান। ফলে বাঘ ট্রাম্প বিড়াল হয়ে গেলেন, ছোটকে তুচ্ছ ভাবা উচিৎ না। অনেক সময় ইঁদুরও বিড়ালকে মারতে পারে। এক বিড়াল খাবার খাচ্ছে মাথা বরাবর তার ছাদে একটি হাঁড়ি ঝুলছে। একটি ইঁদুর এসে হাঁড়ির রশিটি কেটেদিল, বিড়ালের দফা হয়ে গেল রফা, হাহাহা। তার বাস্তব প্রমাণ মনেহয় ভারত, নেপালের মত দুর্বল দেশও তাকে চোখ রাঙাচ্ছে। ভারত তার প্রতিবেশীদের সাথে অসম আচরণ করে, সীমান্তে কত বাংলাদেশীদের হত্যা করেছে! ন্যূনতম দুঃখবোধ পর্যন্ত কখনো করেনি, উল্টা ছিল কত আগ্রাসী ভাব, আজ চীনের হাতে পড়ে উঠেছে নাভিশ্বাস। এটি ভারতের কৃতকর্মেরই ফল, কোন প্রতিবেশীর সাথেই তার সদ্ভাব নাই। ভারত তার প্রতিবেশীদের অসম চুক্তিতে বাধ্য করে, আজ সে নিজেই তার শিকার চীনের কাছে অস্তিত্ব রক্ষায়। অতএবআমি মানি না কো কোন আইন- ৬, ধরাকে সরা জ্ঞান কখনো ঠিক ৯, হিহিহি।
লেখক : কলামিস্ট