গরু বাজারজাত নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারীরা

107

করোনার প্রাদুর্ভাবে থমকে দাঁড়িয়েছে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। দীর্ঘ সময় আয়-রোজগার বঞ্চিত মানুষের মাঝে নেই ঈদ-আনন্দের আমেজ। এতে আসন্ন কোরবানির ঈদ ঘিরে মানিকছড়ি উপজেলার ছোট-বড় অর্ধশত গো-খামার ও কৃষকের ঘরে মোটাতাজা করা কয়েক হাজার দেশি-বিদেশি জাতের গরু নিয়ে চিন্তিত গো-খামারীরা। লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে প্রতি কেজি সাড়ে ৩শ টাকায় গরু বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস ও গো-খামার মালিক সূত্রে জানা গেছে, মানিকছড়ি উপজেলায় ছোট-বড় গো-খামার রয়েছে ৩৯টি। এতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও কোরবানে বাজারজাত করার উদ্দেশ্যে সহ¯্রাধিক গরু মোটাতাজা করা হয়। এছাড়া উপজেলার গ্রাম-গঞ্জের হাজারো কৃষক নিজ গৃহে কয়েক হাজার দেশি বলদ, ষাঁড় মোটাতাজা করে থাকেন। ইতোমধ্যে হাট-বাজারে কৃষকের ছোট ও মাঝারি গরু উঠালেও ক্রেতাশূন্য বাজার।
করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে কোরবানির বাজার জমে উঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ। অন্যদিকে অনুন্নত জনপদে ‘অনলাইন বাজার’ প্রত্যাশা করাও কঠিন। ফলে মানিকছড়ির গো-খামারীরা মোটাতাজা করা গরু নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
পাহাড়ে প্রাকৃতিক সবুজ ঘাসে লালিত-পালিত গরুগুলোর চাহিদা থাকায় এ খাতে লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন সাধারণ কৃষক ও খামারীরা। খামারে এবং গ্রামের পালিত গরুর নিয়মিত খাবারের তালিকায় থাকে প্রাকৃতিক সবুজ ঘাস, ভূষি, খৈল এবং খেড়। এসব খাবার সু-স্বাদু হওয়ার কারণে অল্প সময়ে গরু মোটাতাজা ও পরিপুষ্ট হয়। ফলে এসব গরু কোরবানে বেশ ভালো দামে বিক্রি করে লাভবান হন ব্যবসায়ীরা। বিগত সময়ে কোরবানকে ঘিরে এখানকার হাট-বাজার, গ্রাম ও গঞ্জে পাইকারদের আনা-গোনায় মুখর হয়ে উঠে কোরবানের বেচাকেনা। আর এ বছর করোনা আতঙ্কে এখনো পর্যন্ত জনপদের কোথাও কোরবানের গরুর খোঁজে কেউই আসেননি। হাট-বাজারগুলোতে দেশি গরু বিক্রির উদ্দেশ্যে উঠানো হলেও ক্রেতাশূন্য বাজার।
উপজেলার ডাইনছড়ি গরু ব্যবসায়ী আনু মিয়া বলেন, প্রতি বছর কোরবানির বাজারে দেশি গরুর চাহিদা অতুলনীয়। কোরবানের এক দেড় মাস আগ থেকেই শহরের ব্যবসায়ীরা গরুর খোঁজে বাড়ি বাড়ি আসতে শুরু করেন। ফলে এখানকার ঘরে ঘরে কম-বেশি দেশি বলদ, ষাঁড় দেশি পদ্ধতিতে লালন-পালন করা হয়। অনেকে আবার এ খাতে ২০/৫০ লক্ষ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গরু বর্গা দিয়ে রাখেন।
একসত্যাপাড়ার মো. আবুল কালাম ও আবদুল মালেক বলেন, আমরা নিজ বাড়িতে দেশীয় পদ্ধতিতে যৎসামান্য পুঁজি বিনিয়োগ করে ৫/৭টি দেশি বলদ, ষাঁড় লালন-পালন করে কোরবানে বিক্রি করে থাকি। এ বছর করোনার ছোবলে দুর্বিসহ জনজীবনে কোরবানের আনন্দে ভাটা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে এ নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত।
উপজেলার ‘এ ওক এগ্রো ডেইরি’ ফার্মের মালিক ও উপজেলা ডেইরি ফার্ম মালিক সমিতির সভাপতি এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডেইরি ফার্ম মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মো. ইকবাল হোসেন বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবার উপজেলার ছোট, মাঝারী ও বড় ৩৯ খামারের পাশাপাশি কৃষকের ঘরে পালিত গরু বাজারজাত করা নিয়ে আমরা দুঃচিন্তায় আছি। কৃষকের ছোট ও মাঝারি গরু অনায়াসে বাজারে উঠানো গেলেও গো-খামারের ৫শ-৮শ কেজি ওজনের গরু বাজারে উঠানো খুবই কষ্টকর। যার ফলে লাইফ ওয়েট পদ্ধতিতে আমরা বড় গরুগুলো বিক্রি করে থাকি। এতে কেজি সাড়ে ৩শ টাকা দরে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা ফার্মে মাঝারি ও বড় ১৫/২০টি জাতীয় গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। উপজেলার গো-খামারগুলোতে প্রায় ৫ শতাধিক কোরবানির গরু বাজারজাতের অপেক্ষায় রয়েছে।
উপজেলা প্রাণী সম্পাদ কর্মকর্তা ডা. সুচয়ন চৌধুরী বলেন, উপজেলার ৩৯টি তালিকাভুক্ত ছোট-বড় খামারের পাশাপাশি অসংখ্য কৃষক কোরবানকে ঘিরে সু-স্বাদু খাবার ও আধুনিক পদ্ধতিতে গরুগুলোতে মোটাতাজা করছে। সময়ে-অসময়ে খামারী ও কৃষকরা আমাদের (চিকিৎসক) পরামর্শ নিয়ে থাকেন।