গরুর দুধে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় কৃষকদের খামারে প্রতিদিন প্রায় তিন লক্ষ লিটার তরল দুধ উৎপাদন হয়। এককভাবে এই এলাকাটিতে দেশের সবচেয়ে বেশি দুধ উৎপাদন হয়। এসব দুধ মিল্টভিটাসহ বিভিন্ন কোম্পানি সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করে ভোক্তাদের জন্য বাজারে নিয়ে আসে।
শাহজাদপুর এবং বাঘাবাড়ির বিভিন্ন গরুর খামারে ঘুরে দেখা যায়, অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ কৃষকদের কাছে বেশ পরিচিত একটি বিষয়। অনেক খামারি আছেন যারা অনায়াসে বিভিন্ন ধরণের অ্যান্টিবায়োটিকের নাম বলতে পারেন।
গরু অসুস্থ হলে অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ প্রয়োগ করেন জানিয়ে শাহজাদপুরের একটি গরু খামারের মালিক আবু সিদ্দিক বলেন, আমরা অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকি কখন? যখন দেখি গরুটা খুবই মরণাপন্ন হয়া গেছে। একটা গরুর দাম দুই-আড়াই লাখ টাকা। সেইটা যদি মারা যায়, তাহলে তো খামারি শেষ হয়া যাবে।
শাহজাদপুরের গবাদি পশুর চিকিৎসক এবং উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোন গরু রোগাক্রান্ত হলে তাকে যদি অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ দেওয়া হয়, তাহলে সে গুরুর দুধ দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বাজারে বিক্রি করা উচিত নয়। কিন্তু বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যে গরুটি প্রতিদিন ২০ লিটার দুধ দেয়, সে গরুর দুধ বিক্রি যদি দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকে তাহলে একজন খামারি ১৫ দিনে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা ক্ষতির মুখে পড়বে। একজন দরিদ্র খামারির এ লোকসান মেনে নেয়া রীতিমতো অসম্ভব।
শাহজাদপুরের একটি গ্রামে প্রাণ কোম্পানির জন্য খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করেন রাকিবুল মাহমুদ। তিনি বলেন, আমি যখন দুধ এখানে রিসিভ করি তখন অনেক সময় দেখা যায় দুধে মাই আসছে। মাই এক ধরণের রোগ। এটা গরুর ওলান দিয়ে বের হয়। কৃমির ট্যাবলেট দিলে দুধে মাই আসে। তখন আমি খামারিদের বলে দিই যে মাই আসা দুধ আমি রিসিভ করবো না। তাৎক্ষনিক ওরা অ্যান্টিবায়োটিক ডোজ দিয়ে দেয়। স্বাভাবিকভাবে মাই সারতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক দিলে দেখা যায় ওটা পরের দিন থেকে ক্লিয়ার হয়ে যায়। ঐ অ্যান্টিবায়োটিকটা যাবে কই? অ্যান্টিবায়োটিকটা এভাবেই আসে। খামারিদের অনেকই মনে করেন, দানাদার গবাদি পশুর খাদ্যে অ্যান্টিবায়োটিক এবং সিসা থাকতে পারে। যদিও এটি শুধুই তাদের ধারণা।
শাহজাদপুর উপজেলায় পোতাজিয়া দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি ওয়াজ আলী বলেন, অনেক কোম্পানি আছে যারা গবাদি পশুর খাদ্য বাজারজাত করার জন্য গরুর খামারিদের নানাভাবে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে। তারা খামারিদের বোঝানোর চেষ্টা করে যে তাদের কোম্পানির খাবার গরুকে দিলে দুধের উৎপাদন বাড়বে।
তিনি জানান, বর্ষা মৌসুমে গবাদি পশুর চারণভ‚মি কমে যায়। ফলে গবাদি পশুর খাদ্যের জন্য প্যাকেট-জাত ও দানাদার খাদ্যের উপর নির্ভর করতে হয়। ক্যাটেল ফিডের কোম্পানি বিভিন্ন অবস্থায় হয়তো হরমোন জাতীয় দ্রব্য দিয়া বলে আমার মালটা খাওয়াও দুধ বেশি হবে। সেই ক্ষেত্রে সরকারিভাবে ক্যাটল ফিডও পরীক্ষা করা হোক।
কৃষকরা জানান, ক্যাটল ফিডের বিভিন্ন কোম্পানি ভেদে দুধের উৎপাদন এক থেকে দুই কেজি হেরফের হয়। তবে শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, দানাদার পশুখাদ্য থেকে ক্ষতিকর উপাদান গরুর শরীরে প্রবেশ করার সুযোগ নেই। তিনি দাবি করেন, পশু খাদ্যের নমুনা বাজার থেকে সংগ্রহ করে প্রায়ই পরীক্ষা করা হয়। গবাদি পশুর অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা খামারিদের বা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলবো, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাবহার করবেন না।
তিনি বলেন, গরুর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হলে সেটির প্রভাব ক্ষেত্র বিশেষ সাত থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত থাকে। এ সময় দুধ সংগ্রহ করা যাবেনা। এমন কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ আছে যেগুলো গবাদি পশু এবং মানুষ উভয়ের শরীরের জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে সেক্ষেত্রে শুধু প্রয়োগের মাত্রা হেরফের হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
