গণভোটের দাবি মমতার

22

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে গণভোটের দাবি তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি চান, কোনও রাজনৈতিক দলের ভূমিকা না রেখে মানবাধিকার কমিশনের মতো ‘নিরপেক্ষ’ সংস্থার পর্যবেক্ষণে সাধারণ মানুষের মতামতের ভিত্তিতে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হোক। তবে মমতার এই রাজনৈতিক দাবির সঙ্গে একমত নয় কোনও দলই। বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে নিপীড়নের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতে সম্প্রতি আইন সংশোধন করেছে ভারত। গত ১২ ডিসেম্বর রাতে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের পরেই আইনে পরিণত হওয়া বিলটি শুরু থেকেই মুসলিমবিরোধী আখ্যা পেয়েছে। বিতর্কিত এই আইন প্রত্যাহারের দাবিতে দেশজুড়ে সরব একাধিক রাজনৈতিক দল। চলছে দফায় দফায় বিক্ষোভ।
সিএএ এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলনের চতুর্থ দিনে বৃহস্পতিবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে তৃণমূলের ছাত্র-যুবদের জমায়েতে বক্তৃতা দেন মমতা। সেখানে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও বিজেপি প্রধান অমিত শাহকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মমতা বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ আপনাদের যদি সাহস থাকে, তবে গণভোটে আসুন। ২০২৪ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা কেন? তার আগেই একটা ভোট হয়ে যাক। দেখতে চাই কয়জন মানুষ আপনাদের সঙ্গে থাকেন। যদি গণভোটে হেরে যান, তা হলে ইস্তফা দিতে বাধ্য হবেন আপনারা।’ গণভোটের দাবি তুলে মমতা বলেন, ‘রাষ্ট্রপুঞ্জ (জাতিসংঘ), মানবাধিকার কমিশনের মতো নিরপেক্ষ সংস্থাদের নিয়ে কমিটি হোক। তারাই ভোট সংগঠিত করুক। সেখানে তৃণমূলের বা বিজেপির বা কোনও রাজনৈতিক দলেরই থাকার দরকার নেই। হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান কারও থাকার দরকার নেই।’’ এই গণভোটের দাবি নিয়ে সারা দেশে ধর্ম-বর্ণ, রাজনীতি নির্বিশেষে আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে আহ্বানও জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। গণভোটের দাবির পাশে অবশ্য রাজ্যের অন্য কোনও দলই দাঁড়ায়নি। সিপিএম, কংগ্রেসও এর যুক্তি এবং গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। মুখ্যমন্ত্রীকে এই বক্তব্য প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি সোমেন মিত্র বলেন, ‘‘সংসদে পাশ হওয়া বিল নিয়ে এ ভাবে আন্তর্জাতিক নজরদারিতে গণভোট করা যায় কি না, আমাদের জানা নেই। এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে সা¤প্রদায়িক রং দিতে চেয়েছেন, গোটা দেশের মানুষ তার প্রতিবাদ করছে।’
মমতার গণভোটের দাবির সমালোচনা করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘পাকিস্তান যেমন রাষ্ট্রপুঞ্জের মাধ্যমে কাশ্মিরে গণভোটের দাবি জানায়, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যেও যেন সেই ভাষা। দেশের সংবিধান, সুপ্রিম কোর্টে তার আস্থা নেই। তাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করা উচিত।’