গণফোরামে উত্তাপ কমছে না দৃশ্যপটে মন্টু

25

গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কারের ঘটনা ঘটে গত সপ্তাহে। এতে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে ৪ মার্চ দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেন। কমিটি ভেঙে দেওয়ার ৩ দিনের মাথায় তাকে না জানিয়েই গণফোরামের ব্যানারে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে ভেঙে দেওয়া কমিটির একাংশ। আর এই সভার মধ্য দিয়ে আবারও দৃশ্যপটে এসেছেন দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মসহিন মন্টু। সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বাদ পড়ার প্রায় ১০ মাস পর রাজনীতিতে প্রকাশ্যে আসেন তিনি।এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি কোনও সভা সম্পর্কে জানি না। কাল খোঁজ নেবো। কারা গণফোরামের ব্যানারে সভা করেছে।’
গত ২ মার্চ গণফোরামের ৪ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। পরের দিন বহিষ্কৃত ওই ৪ নেতা দলের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়াসহ চারজনকে বহিষ্কার করে। এই বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কারের মধ্যে ৪ মার্চ ‘দলে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা’র কারণ দেখিয়ে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেন ড. কামাল। একইসঙ্গে দুই সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটিও গঠন করেন তিনি। সেই কমিটিতে সভাপতি তিনি নিজেই এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে ভেঙে দেওয়া কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়াকে।
৭ মার্চের সভা আয়োজনকারীরা বলছেন, ড. কামাল দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক না ডেকে কিছু লোকের পরামর্শে কমিটি ভেঙে দিয়েছেন। এতে দল থেকে বাদ পড়া বড় একটি অংশ তার এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি। এই কারণে আজ তাকে না জানিয়ে সভা করা হয়েছে। এখন গণফোরামকে বাঁচাতে হলে সবাইকে ডেকে সমঝোতা করতে হবে তাকেই। আর তিনি যদি তা করেন তাহলে গণফোরাম নামে আরেকটি দল গঠিত হলে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।
আলোচনা আয়োজনকারীদের একজন ভেঙে দেওয়া কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফুল বারি হামিম। তিনি জানান, ভেঙে দেওয়া কমিটির নির্বাহী সভাপতি ড. আবু সাইয়িদের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোস্তাক মহসীন মন্টু, প্রধান বক্তা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীসহ অনেকে।
মোস্তাফা মহসিন মন্টু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজকের সভার সভাপতি আবু সাঈদ আমাকে দাওয়াত দিয়েছেন। আমি গিয়েছি। অসুস্থতা ও বিভিন্ন কারণে অনেকদিন রাজনীতিতে ওইভাবে ছিলাম না এটা ঠিক।’
ড. কামালকে না জানিয়ে গণফোরামের ব্যানারে সভা করা কতটুকু যুক্তিযুক্তি জানতে চাইলে মন্টু বলেন, কমিটি ভাঙার আগে কামাল হোসেনের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছিল। আমি বলেছিলাম যে বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কার না করে সবাইকে নিয়ে বসে সমস্যার সমাধান করেন। আবার সবাইকে নিয়ে শুরু করেন। এতে তিনি রাজিও হয়েছিলেন। কিন্তু এরপর আমাদের কিছুই না জানিয়ে কমিটি ভেঙে দিয়েছেন। এটা তো তিনি করতে পারেন না।
তিনি আরও বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমিটি ভেঙে দেওয়া যেতে পারে। এটাতো কোনও লিমিটেড কোম্পানি না। কোনও কোম্পানিতে ম্যানেজিং ডিরেক্টর যা খুশি করতে পারেন। রাজনৈতিক দলে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আলোচনা করে নিতে হয়। আমি নিজেই কেন্দ্রীয় কমিটির মেম্বার, কিন্তু কমিটি ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানি না।’
তাহলে সমস্যার সমাধান কিভাবে হবে জানতে চাইলে মন্টু বলেন, কামাল হোসেন সবাইকে নিয়ে আবার যদি বসেন তাহলেই হবে। আর তিনি যদি তা না করে কিছু লোকের কথামতো চলেন তাহলে এরা কাউন্টার আরেকটি পার্টি করেও ফেলতে পারেন। আমরা চাই না গণফোরামের নামে একাধিক পার্টি থাকুক। গণফোরাম ব্র্যাকেট কামাল, গণফোরাম অমুক এমন কিছু আমি চাই না।
তবে গণফোরামের আহ্বায়ক কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা গণফোরামের অফিসিয়াল কোনও প্রোগ্রাম না। এখন কেউ আমাদের দলের ব্যানারে প্রোগ্রাম করলে আমরা কী করতে পারি। এখনও কেউ তো চাইলে আওয়ামী লীগের ব্যানারে সভা করতে পারে।’
যারা সভার আয়োজন করেছে তারা তো সদ্য ভেঙে দেওয়া গণফোরামের নেতা, তাদের সঙ্গে কি কোনও আলোচনায় বসা হবে জানতে চাইলে রেজা কিবরিয়া বলেন, যারা দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, আমি তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার পক্ষে নই।