গণফোরামের দুই এমপির শপথ নেয়ার ইঙ্গিত কামালের

47

বিএনপি শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও নির্বাচনে গণফোরাম থেকে বিজয়ী দুজন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিচ্ছেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেন। তিনি গতকাল শনিবার দলের এক বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছেন, তারা বিষয়টি ‘ইতিবাচক’ দৃষ্টিতে দেখছেন এবং ‘ইতিবাচক’ সিদ্ধান্ত নেবেন।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্র্নিবাচনের দাবি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তোলার পর তাদের জোট থেকে বিজয়ীদের শপথ নেওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দেয়।
গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টিসহ তাদের রাজনৈতিক মিত্রদের সবাই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলেও উপস্থিত ছিলেন না ঐক্যফ্রন্ট থেকে ভোটে বিজয়ী বিএনপির পাঁচ এবং গণফোরামের দুজন। খবর বিডিনিউজের
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেদিন সরাসরি বলেছিলেন, “শপথ তো পার হয়ে গেছে, প্রত্যাখ্যান করলে শপথ থাকে নাকি আর?…আমরা শপথ নিচ্ছি না, পরিষ্কার করে বললাম।” তার দুদিন পর শনিবার গণফোরামের এক বৈঠকের পর তোপখানা সড়কে শিশুকল্যাণ পরিষদের মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসে ভিন্ন কথা শোনালেন দলটির সভাপতি কামাল।
শোনা যাচ্ছে যদি বিএনপি শপথ নাও নেয়, অন্তত গণফোরামের দুই সদস্য শপথ নেবেন। তাহলে ঐক্যফ্রন্ট থাকবে কি না, এ প্রশ্ন করা হয় কামাল হোসেনকে। জবাবে তিনি বলেন, “সুনির্দিষ্ট আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। তো আমার নিজের ধারণা যে, ইতিবাচক সিদ্ধান্তই আমরা নেব।”
গণফোরামের সর্বোচ্চ ফোরামের সভা হয়েছে, সে সভায় নির্বাচিত দুজনের শপথ গ্রহণের পক্ষে সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছি। কিন্তু আমাদের যে দুজন নির্বাচিত হয়েছেন, তারা তো বিরোধী দল থেকে হয়েছেন। এটা তাদের অর্জন। তাদের অভিনন্দনও জানিয়েছি। আলোচনা যেটা হয়েছে সে ব্যাপারে আপনাদের এটুকু ইঙ্গিত দিলাম।
গণফোরাম থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসনে জয়ী হয়েছেন সাবেক ডাকসু ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। সিলেট-২ আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী হিসেবে জয়ী গণফোরামের মুকাব্বির খান দলীয় প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে ভোট করেন।
সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, বিএনপি যেহেতু শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তাদের প্রতীকে ভোট করে গণফোরাম সদস্য শপথ নিলে তা দুই দলের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করবে কি না? উত্তরে কামাল বলেন, আমার মনে হয় হয় না। ঐক্যফ্রন্টতো আমরা রাখার জন্যই করেছি।
সংবাদ সম্মেলনে সুলতান মনসুরও ছিলেন। এছাড়া সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিকসহ ছিলেন গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতারাও ছিলেন।
সুলতান মনসুর ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছেন, তার ক্ষেত্রে বিএনপি আপত্তি জানালে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ (ফ্লোর ক্রসিং) কার্যকর হবে কি না, সে প্রশ্ন করা হয়েছিল কামাল হোসেনকে। জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি মনে করি না যে, আলোচনা-বিবেচনা করার বিষয় এই মুহূর্তে আছে।
ঐক্যফ্রন্ট অটুট থাকার আশা প্রকাশ করে কামাল হোসেন বলেন, আমরা ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছিলাম যাতে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন আমরা আদায় করতে পারি। আমরা বিশ্বাস করি যে, কার্যকরভাবে ঐক্যফ্রন্ট যদি কাজ করে নির্বাচন এবং অন্যান্য ব্যাপারে সরকারের উপরে চাপ থাকবে আইন মেনে দায়িত্ব পালন করার। আমরা লক্ষ করছি অনেক ব্যাপারে সরকারের আইন অমান্য করার যে চেষ্টাগুলো হয়, বিশেষ করে নির্বাচনের ক্ষেত্রে তো আমরা দেখেছিই কীভাবে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন থেকে তারা সরে যায়। এই চাপটা রাখার জন্য আমাদের ঐক্য কাজে লেগেছে কিছুটা। কিছুটা আরও লাগবে আশা করি।
ঐক্যফ্রন্টের পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে শীর্ষ নেতা কামাল বলেন, আন্দোলনের জনমত গঠন করাও আন্দোলন। বিবেচনা করে আলোচনা করে প্রত্যাখ্যান করাও আন্দোলনের অংশ। তো আন্দোলন তো অব্যাহত আছেই। করেই যাচ্ছি, করে যাব। আন্দোলন আরও তীব্র হতে পারে।
জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে পরবর্তী কর্মসূচিতে যাবেন কি না, সে প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেননি কামাল হোসেন, যদিও ভোটের আগে তিনি বলেছিলেন নির্বাচনী জোটে জামায়াত থাকবে জানলে তিনি ঐক্যফ্রন্টে যেতেন না। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে কামাল হোসেন বলেন, আমাকে জেনারেল সেক্রেটারি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন যে, জামায়াত ফ্রন্টে নাই, তারা ওই ২০ দলের মধ্যে আছে।
জোট গঠনের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা মির্জা ফখরুল বললেও কামাল বলেছিলেন, দলীয় স্বার্থের চেয়ে জাতীয় স্বার্থই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। পরে ৭ দফা দাবি পূরণে নির্বাচন কমিশনের আশ্বাসে কামাল আশ্বস্ত হওয়ার কথা জানালেও বিএনপির মহাসচিবের কথায় ছিল ভিন্ন সুর।
তবে ভোটের পর দুজনে একসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে এসে পুনর্র্নিবাচনের দাবি তোলেন। বৃহস্পতিবার জোটের নেতারা একসঙ্গে ইসিতে গিয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছিলেন। কিন্তু তার দুই দিনের মধ্যে ফখরুলসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের একাংশের নোয়াখালী সফরে থাকার মধ্যে শপথ নেওয়া নিয়ে কামালের ভিন্ন কথা শোনা গেল।
নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণাদি আছে কি না এবং থাকলে কোনো আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কামালের কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, চিহ্নিত গুরুতর অপরাধ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া যেতে পারে। নরমালি রাজনৈতিক ব্যপারে ঘন ঘন মামলা করা হয় না। করা উচিতও না।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য বলা হয়, “নির্বাচন কমিশন ৩০ ডিসেম্বর প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে যাদের নির্বাচিত বলে ঘোষণা করেছে তারা কেউই নির্বাচিত নয় এবং যাদের গেজেট প্রকাশ করেছে তারা কেউই জনগণের প্রতিনিধি নয়। আমরা এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা অনতিবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জোর দাবি জানাচ্ছি।