গণফোরামের কাউন্সিল মঞ্চে কামালের পাশেই মোকাব্বির

82

দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়া মোকাব্বির খান গণফোরামের কাউন্সিলের মঞ্চে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলের নেতাকর্মীদের একটি অংশ। ক্ষোভে দল ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে গণফোরামের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক বলেছেন, ‘মোকাব্বির খান ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে গেলে বলে গেট আউট, আর বাসায় গেলে বলে সংসদে যাও। এ ধরনের দ্বৈত নীতির দলে আমি থাকব না। এই আচরণে আমি ব্যথিত। এই দল আর আমি করব না’।
গতকাল শুক্রবার ঢাকার মহানগর নাট্যমঞ্চে গণফোরামের বিশেষ জাতীয় কাউন্সিলে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন যখন সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় জনগণকে পাহারাদারের ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন মঞ্চেই ছিলেন দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোকাব্বির। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত মোকাব্বিরই গণফোরামের দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত প্রথম এবং একমাত্র সংসদ সদস্য।
গত ৩০ ডিসেম্বর ওই নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাত্র ছয়টি আসনে জয় পায় ঐক্যফ্রন্টের বড় দল বিএনপি। আর গণফোরামের দু’টি মিলিয়ে জোটের আসন হয় আটটি। নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে জোটের পক্ষ থেকে সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হলেও গণফোরাম থেকে নির্বাচিত মোকাব্বির ও সুলতান মো. মনসুর আহমেদ শপথ নিয়ে সংসদে যান। এরপর গণফোরাম সুলতার মনসুরকে বহিষ্কার করে। আর প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খানকে গত ২৪ এপ্রিল কারণদর্শাও নোটিস পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
শপথ নেওয়ার পর মোকাব্বির দাবি করেছিলেন, তিনি দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের অনুমতি নিয়েই শপথ নিয়েছেন। কিন্তু পরে গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন তাকে নিজের কার্যালয় থেকে বের করে দেন। কামাল সেদিন মোকাব্বিরকে বলেছিলেন, ‘আপনি এখান থেকে বেরিয়ে যান, গেট আউট। আমার চেম্বার ও অফিস আপনার জন্য চিরতরে বন্ধ’। খবর বিডিনিউজের
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এমপি হিসেবে শপথ নেওয়া মোকাব্বির খান গতকাল শুক্রবার মহানগর নাট্যমঞ্চে গণফোরামের বিশেষ জাতীয় কাউন্সিলের মঞ্চেই উপস্থিত ছিলেন। গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে বেলা পৌনে ১১ টায় কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিল শুরু হয় দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে। তার আগেই অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন মোকাব্বির খান।
অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রথম সারিতে সভাপতি কামাল হোসেনের আসনের তিন চেয়ারের পরেই মোকাব্বির খান বসেন। তার ডান পাশে ছিলেন রেজা কিবরিয়া, আর বাঁয়ে অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ। প্রথম অধিবেশন শেষ হওয়ার পর গণফোরামের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক সাংবাদিকদের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করে দল ছাড়ার কথা বলেন।
মোকাব্বিরের মঞ্চে থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘মোকাব্বির খান যখন শপথ নিতে যান তখন দলে দুই ধরনের মত ছিল। পরে বলা হয়েছে কার্যনির্বাহী সভায় যা সিদ্ধান্ত হবে তাই সবাই মেনে নেবে। ২০ তারিখের কার্যনির্বাহী সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে মোকাব্বির খানকে শোকজ করা হবে। আজকে ২৬ তারিখ, এখনও শোকজ করা হয়নি। আর আজকেরটা তো দেখেছেনই’।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু কাউন্সিল অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন না। পরে তিনি বলেন, ‘আমি জানি ও শুনেছি ঘটনা। হাউজে অনেক বিরোধিতা ও প্রতিবাদ করেছেন। এটা সভাপতি বলতে পারবেন কেন তিনি (মোকাব্বির) গেলেন, কিভাবে গেলেন। তাকেই জিজ্ঞাসা করুন’। বিশেষ কাউন্সিলে মোকাব্বির খানের উপস্থিতি কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে মন্টু বলেন, ‘এটা অগ্রহণযোগ্য ও অনৈতিক কাজ হয়েছে। এটা জাতির সাথে প্রতারণা হয়ে গেছে। আমি এ রকম সম্মেলনে যাব না’।
‘নিরাশ হবেন না’
বিশেষ কাউন্সিলে সভাপতির বক্তব্যে গণফোরামের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেন দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে নেতাকর্মীদের অভয়বাণী দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আজকে বলি যে, স্বৈরশাসনের চিত্র দেখা যাচ্ছে। কিন্তু নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা দেখেছি, শাসকগোষ্ঠী অনেক সময় স্বৈরতন্ত্রের দিকে অগ্রসর হয়, স্বৈরাচার হয়ে যায়। কিন্তু এদেশে মানুষ কখনো স্বৈরতন্ত্রকে মেনে নেয়নি এবং নেবে না। এদেশে মালিক আপনারা’। ‘গণতন্ত্র উদ্ধারে জাতীয় ঐক্য তুলুন’ ¯েøাগান নিয়ে দলের এই বিশেষ কাউন্সিলে জনগণকেও গণতন্ত্রের জন্য সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান কামাল। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার উৎস হলো জনগণ, আর কেউ না। সুতরাং আপনাদের দেখতে হবে, যারা ক্ষমতায় তারা কি দেশের স্বার্থে না কি নিজের স্বার্থে কাজ করছেন। না কি অন্য কিছু করছেন। উল্টো কিছু করলে সংগঠিত হয়ে তাদেরকে থামাতে হবে। কারণ জনগণ গণতন্ত্রের পাহারাদার। আর এই নাগরিকরা যদি দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে গণতন্ত্র স্বৈরতন্ত্রে পরিণত হতে পারে’।
পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার প্রশংসা করে প্রবীণ আইনজীবী কামাল হোসেন বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি জনগণের হয়ে যে রায়টা দিলেন, আমি মনে করি সেটা চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আর তিনি ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখে গেলেন’।
কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুরুতেই শোক প্রস্তাব পাঠ করেন জগলুল হায়দায় আফ্রিক। কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে দলের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, মফিজুল ইসলাম খান কামাল, এসএম আলতাফ হোসেন, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, রেজা কিবরিয়া, আমসা আমিন, সিরাজুল হক, আওম শফিকউল্লাহ, শফিকুর রহমান খান, ফরিদা ইয়াছমীন, এসএম খালেকুজ্জামান, শান্তিপদ ঘোষ, মোশতাক হোসেন উদ্বোধনী অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।
১৯৯২ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে কামাল হোসেন পরের বছর গণফোরাম গঠন করেন। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে দলের সর্বশেষ কাউন্সিল হয়।