খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে শতবর্ষী চন্দ্রঘোনা কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্র

58

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের লিচু বাগান খ্রীষ্টিয়ান কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্রের চলমান অর্থনৈতিক সংকট ও বিভিন্ন সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। বিদেশী সাহায্য বন্ধ, সরকারিভাবে দেশ থেকে কুষ্ট রোগ নির্মূল ঘোষণায় হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। কুষ্ট হাসপাতালে চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে কুষ্ট রোগীদের আগের মত চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে কমপক্ষে ৩৫ জন রোগী যথাযথ চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এদের মতে মরলে এখানে মরব। বাইরে আমাদের কেউ ছুয়ে দেখবে না। আবার অনেক রোগী বলছেন, আমরা এ হাসপাতালে ৩০/৩৫ বছর ধরে চিকিৎসাসেবা নিয়ে রোগ পুরোপুরি ভাল হয়েছি। সমাজে আমাদের তুচ্ছ তাচ্ছল্য করে। আমাদেরকে অভিশপ্ত বলে। ঘরবাড়ি থাকলেও আমাদের সেখানে বসবাস করতে দেয় না। এখানেই আমাদের বাঁচা মরা। আমাদের বাঁচতে সমাজের বিত্তশালী ও বিদেশী সাহায্যকারী এনজিওদের এগিয়ে আসলে আমরা প্রাণে রক্ষা পাব।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রবীর খিয়াং বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে জিরো লেপ্রসীর (কুষ্ঠ) যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সেই লক্ষে এই চিকিৎসা কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে। ইংল্যান্ডভিত্তিক দ্যা লেপ্রসী মিশন এর অর্থায়নে এই কুষ্ঠ হাসপাতাল পরিচালিত হতো। কিন্তু ১৯৯৪ সালের পর থেকে তাদের অর্থায়ন কমিয়ে দেয় এবং ২০১০ সালের পর থেকে তাদের অর্থায়ন একেবারে বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে কোন রকম সরকারি বেসরকারি সাহায্য সহায়তা ছাড়া অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে হাসপাতালটি। এরপরও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চন্দ্রঘোনা কুষ্ঠ হাসপাতাল এর রোগীদের চিকিৎসা সহায়তার পাশাপাশি তাদেরকে ঔষধ এবং খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া কুষ্ঠ রোগীদের জন্য একটা আশ্রম গড়া হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় সাহায্য ছাড়া এই কার্যক্রম চালানো কঠিন। সেই ক্ষেত্রে বিত্তবান লোকেরা এগিয়ে আসলে কুষ্ঠ রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবে না।
চন্দ্রঘোনা কুষ্ট হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা মো. আফজাল জানান, বর্তমানে হাসপাতালে ২৮ জন রোগি ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার মধ্যে পুরুষ ২০ জন, মহিলা ৮ জন। তাদের চিকিৎসা চলছে কোন রকমে। হাসপাতালের প্রোগাম অফিসার বিজয় মার্মা জানান, ১৯২০ সাল থেকে তিন পাবর্ত্যজেলার উপজাতীয়দের মাঝে কুষ্ট রোগ ব্যাপকভাবে দেখা দেওয়ায় তা নিরসনে নেদারল্যান্ডের আর্থিক সহযোগিতায় হাসপতালটি বৃহৎ পরিসরে আলোর মুখ দেখে। সে সময়ে উপজাতীয় দের কুষ্ঠ রোগীদের জন্য আলাদা আলাদা ঘরে রেখে চিকৎসাসেবা দিয়ে সুস্থ্য করে তোলা হতো। সমাাজে কুষ্ঠ রোগিদের জায়গা না হওয়ায় সব কুষ্ঠ রোগিদের একসাথে বসবাসের জন্য হাসপাতাল কতৃপক্ষ কুষ্ট পল্লী তৈরি করে। সাড়ে ৪ একর পাহাড়ি জায়গা নিয়ে চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়নের শেষ সিমান্তে জনবিচ্ছিন্ন এলাকায় ঝুম পাড়া কুষ্ঠ পল্লী আলোর মুখ দেখে। সেখান থেকে প্রায় ৩শ কুষ্ট রোগি বর্তমানে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।