খুচরা ও পাইকারিতে দামে কেজিতে ৫০ টাকা তফাৎ

69

মুরগির অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পেছনে কম উৎপাদনের পাশাপাশি খুচরা বিক্রেতাদের কারসাজির তথ্য পাওয়া গেছে। আবার মারা না গেলেও উড়ো খবর ছড়িয়েও দাম বাড়ানো হচ্ছে মুরগির। ১১৫ টাকার ব্রয়লার মুরগি এক মাসের ব্যবধানেই বর্তমানে ১৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে খামারি, খুচরা বিক্রেতা ও প্রাণী সম্পদ বিভাগের সাথে কথা বলে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে। হঠাৎ করে মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে চকবাজারের খুচরা বিক্রেতা শফিউল আলম বলেন, বিগত শীত মৌসুমে অনেক মুরগি মারা পড়েছে। যেকারণে শীতের শেষের দিকে খামারিরা মুরগি তুলেনি। সামনে রমজান মাস। এখন বিয়ের মৌসুম, মুরগির চাহিদাও অন্য সময়ের চেয়ে বেশি। তবে চাহিদা বেশি থাকলেও মুরগির উৎপাদন কম হওয়ায় এখন দাম বাড়ছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের খুচরা বিক্রেতা জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ থেকে মুরগি কিনে বাজারে বিক্রি করি। গাড়ি ও দোকান ভাড়া বাদ দিয়ে আমরা কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা লাভ করি। এখন ছোট সাইজের মুরগি ১৭৫ টাকা পর্যন্ত কেজি বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার কারণে সোনালী ও দেশি মুরগির দামও বেড়েছে।’
এদিকে খামারিরা বলছেন ভিন্ন কথা। বাংলাদেশ বিডার এসোসিয়েশনের সভাপতি রকিবুর রহমান টুটুল পূর্বদেশকে জানান, ‘মুরগির দাম বাড়েনি। গত চার মাস আগেও মুরগির একই রকম দাম ছিল। বর্তমানে খামারি পর্যায়ে প্রতিকেজি মুরগি ১২২ টাকা থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণেই মুরগির কেজি ১৭০-১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
তবে খামারি ব্যবসায়ীদের এ নেতা বলেন, ‘গত বছর প্রচুর লোকসান দিতে হয়েছে পোল্ট্রি ব্যবসায়। খাদ্যের দাম বেশি ছিল, উৎপাদিত মুরগির দাম ছিল কম। এতে অনেকে মোটা অংকের লোকসান গুনতে গুনতে খামারও বন্ধ করে দিয়েছে। যে কারণে বর্তমানে মুরগির দাম বেড়েছে।’
রিয়াজউদ্দিন বাজারে কেনাকাটা করতে আসা সৌমেন দাশ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘শহরে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা এমনিতে বেশি থাকে। প্রায় সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের খাবারে মুরগি একটি জনপ্রিয় উপাদান। গত এক মাস ধরে হু হু করে বেড়েছে মুরগির দাম। অথচ বাজারে সবসময় মুরগি পাওয়া যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘যোগানের ঘাটতি থাকলেতো বাজারগুলোতে মুরগি পাওয়া যেত না। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন মিডিয়ায় মুরগি মারা যাওয়ার কিছু খবর ছড়িয়েছে। এভাবে খবর ছড়ানো দাম বাড়ানোর অপকৌশল মাত্র। এতে আমরা ভোক্তারা ঠকছি।’
মুরগির অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রাণী সম্পদ দপ্তরের উপ-পরিচালক আজহারুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘এখন পোল্ট্রি খামারগুলোতে উৎপাদন কম, বাজারে চাহিদা বেশি। যে কারণে মুরগির দাম বাড়ছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে দাম।
তিনি বলেন, ‘গত বছর প্রচুর মুরগির বাচ্চা মরে যাওয়ায় খামারিরা লোকসানে পড়েন। অনেক খামারি লোকসানের কারণে উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন। এতে বিগত দু’য়েক মাসে ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন কম হওয়ার কারণে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মুরগির অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে।’