খাশোগি হত্যার তদন্তকে ‘সংকুচিত’ করেছে সৌদি

31

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক তদন্তকারী অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যার ঘটনায় তুরস্কের তদন্তজনিত সক্ষমতাকে ‘চরমভাবে সংকুচিত ও ক্ষুন্ন’ করেছে সৌদি আরব। তুরস্ককে ঘটনাস্থলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার আগের ১৩ দিনে এ কাজ করেছে তারা। খাশোগি হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক একটি তদন্ত দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অ্যাগনেস। বৃহস্পতিবার তারা প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। আগামী জুনে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে।
২০১৮ সালের ২ অক্টোবর ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হন সাংবাদিক জামাল খাশোগি। খুনের নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযোগের আঙ্গুল উঠে খোদ সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে। সৌদি আরবের পক্ষ থেকে প্রথমে এ হত্যাকান্ডের খবর অস্বীকার করা হয়। পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে হত্যাকান্ডের ঘটনা স্বীকার করলেও এর সঙ্গে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সম্পৃক্ততার খবর অস্বীকার করা হয়। ওই ঘটনায় দুনিয়াজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েন মোহাম্মদ বিন সালমান। খাশোগি হত্যার ঘটনায় ১১ জনকে বিচারের মুখোমুখি করেছে সৌদি আরব।
এরমধ্যে পাঁচজনকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে। তবে সৌদি আরবের দাবি, যুবরাজ সালমান এ হত্যাকান্ডের নির্দেশদাতা নন। তুরস্ক বেশ কয়েকজন সৌদি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলেও তাদের হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানিয়েছে রিয়াদ। খাশোগি হত্যার ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক তদন্ত দলের প্রধান অ্যাগনেস ক্যালামার্ড গত ২৮ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তুরস্ক সফরে ছিলেন। তদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে তিনি লিখেছেন, খাশোগি সৌদি আরবের কর্মকর্তাদের হাতে নৃশংস ও পূর্ব পরিকল্পিত হত্যার শিকার হয়েছেন। সৌদি আরব তদন্তের ব্যাপারে সদিচ্ছা দেখায়নি। বরং তুরস্কের তদন্ত করার সক্ষমতাকে ‘চরমভাবে সংকুচিত ও ক্ষুণ্ণ করেছে, তুর্কি তদন্তকারীদেরকে কনস্যুলেটে হত্যাস্থলে প্রবেশের অনুমতি দিতে ১৩ দিন পার করে দিয়েছে সৌদি আরব।

প্রতিবেদনে অ্যাগনেস আরও লিখেছেন, ২ অক্টোবর হত্যাকান্ড সংঘটিত হলেও কর্তৃপক্ষ ১৫ অক্টোবর কনস্যুলেটে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে। ১৭ অক্টোবরের আগে পর্যন্ত তারা কনস্যুলেট কর্মকর্তাদের বাসভবনে যেতে পারেনি। সব মিলে ফরেনসিক তদন্ত বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সৌদি আরবে ১১ সন্দেহভাজনের বিচার নিয়েও ক্ষোভ জানিয়েছেন অ্যাগনেস। বলেছেন, এতে স্বচ্ছতা বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে ‘বড় ধরনের উদ্বেগ’ তৈরি হয়েছে। প্রতিবেদনে অ্যাগনেস লিখেছেন, ‘আমি আনুষ্ঠানি সৌদি আরব সফরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলাম যেন সেখানকার কর্তৃপক্ষ আমাকে সরাসরি সংশ্লিষ্ট প্রমাণ সরবরাহ করতে পারে।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এখনও খাশোগির মৃতদেহ পাওয়া না যাওয়ায় তার প্রিয়জনরা ‘বড় ধরনের কষ্টে ভুগছেন’। ৫৯ বছর বয়সী খাশোগি একসময় সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি থাকলেও পরবর্তীতে সৌদি যুবরাজের কঠোর সমালোচকে পরিণত হন। গ্রেফতার এড়াতে দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান খাশোগি। দ্বিতীয় বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গত বছরের ২ অক্টোবর ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়ে হত্যার শিকার হন তিনি। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে খাশোগি হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে সৌদি আরব জানায়, ইস্তানবুলের কনস্যুলেটে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে খুন হন তিনি। হত্যাকান্ডের চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও উদ্ধার হয়নি তার মৃতদেহ।