খাশোগির ‘রক্তের দামে’ সন্তানদের বাড়ি দিলো সৌদি!

38

ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে নৃশংসভাবে খুন হওয়া সাংবাদিক জামাল খাশোগির চার সন্তানের প্রত্যেককে কয়েক মিলিয়ন ডলারের বাড়ি দিয়েছে সৌদি সরকার। প্রতিটি বাড়ির দাম ৪০ লাখ ডলারেরও বেশি। শুধু তা-ই নয়, নিয়মিত মাসোহারাও দেওয়া হচ্ছে তাদের। এ বাড়ি ও মাসোহারাকে ব্লাডমানি বা খাশোগির রক্তের দাম হিসেবে আখ্যায়িত করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক পোস্ট।
আর দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতের সন্তানদের মুখ বন্ধ রাখতেই সৌদি সরকারের এমন উদ্যোগ। সৌদি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, খাশোগির সন্তানদের মাসে ১০ হাজার ডলারের বেশি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। নিহতের পরিবারের ঘনিষ্ঠরাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি সৌদি কর্তৃপক্ষ। তবে এ হত্যাকান্ড নিয়ে নিহতের পরিবারের সদস্যরা জনসমক্ষে কী প্রতিক্রিয়া দেখান; তা নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে রিয়াদের। সেই অস্বস্তি ঢাকতেই তাদের নগদ অর্থ এবং কয়েক মিলিয়ন ডলারের বাড়ি দেওয়ার এই উদ্যোগ।
খাশোগি হত্যাকান্ডের বিচার শেষ হওয়ার পর নিহতের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে যেন আরও কয়েক কোটি ডলার ‘রক্তের দাম’ পায় তা নিয়েও মধ্যস্থতার খবর পাওয়া গেছে। নৃশংস এ হত্যাকান্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে বরাবরই সামনে ওঠে এসেছে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নাম। জানা গেছে, এ মধ্যস্থতায়ও নেতৃত্ব দিয়েছেন যুবরাজের ভাই ওয়াশিংটনে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত খালিদ বিন সালমান। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের কী পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়েছে; নিশ্চিতভাবে সেটি জানা যায়নি। খাশোগির চার সন্তানের মধ্যে মাত্র একজনই বর্তমানে সৌদিতে বসবাস করছেন। বাকিরা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, খাশোগির আমেরিকায় থাকা তিন সন্তান হয়তো তাদের সম্পদগুলো বিক্রি করে দেবেন।
এদিকে খাশোগি হত্যাকান্ডের বিচারে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য সৌদি আরবের প্রতি আহব্বান জানিয়েছে জার্মানি। বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহব্বান জানান উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফার বার্গার। তিনি বলেন, সৌদি বিচার বিভাগের কাছে আমাদের প্রত্যাশা তারা পরিপূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে আইনের শাসন নিশ্চিত করবে।
ক্রিস্টোফার বার্গার বলেন, সৌদি আরবে নিযুক্ত জার্মান দূতাবাস থেকে এ হত্যাকান্ডের বিচারের বিষয়টি পর্যবেক্ষণের আহব্বান জানানো হয়েছিল, কিন্তু তার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এর আগে এ হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি সৌদি আরবের ৪০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ তহবিল ফিরিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হলিউড ফার্ম এনডেভার ট্যালেন্ট এজেন্সি। রিয়াদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির চুক্তিও বাতিল করা হয়েছে। এনডেভারকে সমৃদ্ধ করা এবং এর কাজের মধ্য দিয়ে সৌদি আরবের অর্থনীতিকে বহুমুখী করার লক্ষ্য নিয়ে ওই তহবিল বিনিয়োগ করেছিল রিয়াদ।
ক্রীড়া ও চলচ্চিত্র নির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে এনডেভার। গত বসন্তে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বেশ কয়েকজন মার্কিন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের উন্নয়ন এবং তেলের ওপর দেশটির নির্ভরতা কমাতে চুক্তির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।