খানাখন্দে বেহাল স্ট্যান্ড রোড

104

নগরীর বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সদরঘাট পর্যন্ত স্ট্যান্ড রোডটি এখন গাড়ি চালক ও স্থানীয়দের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা যানজট থাকে এ সড়কে। এটি নগরীর প্রধান সড়কগুলোর অন্যতম। কিন্তু ট্রাকের অবৈধ পার্কিং এবং ওজন স্কেলের কারণে সড়কটিতে গাড়ি চলাচল মুশকিল। এছাড়া যেসব ওজন স্কেল ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে তা ট্রাফিক বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে করেনি বলে ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়।
এদিকে এ রোডের বেশিরভাগ অংশ খানাখন্দে ভরা। প্রতিদিন চলাচলরত গাড়ি গর্তে পড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে। গাড়ির যন্ত্রপাতি নষ্ট ও মালামালের ক্ষতি হচ্ছে। ভাঙাচোরা সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, এ রোডের সংস্কার করা হচ্ছে।
সদরঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) মেরাজুল ইসলাম জানান, স্ট্যান্ড রোডের অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ। এ সড়কে সব ভারি যানবাহন চলাচল করে, তাই রাস্তা ভাল থাকে না। তারপরও আমরা রাস্তা ক্লিয়ার রাখার চেষ্টা করি।
জানা গেছে, আগে সিটি বাস চলাচল করতো স্ট্র্যান্ড রোড ধরে। তবে বর্তমানে এই পথে বাস তো দূরের কথা রিক্শাচালকও ঘাড় ফিরিয়ে নেয়।
এদিকে, বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে শুরু করে সদরঘাট পর্যন্ত ১.১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘের এই রাস্তা। প্রস্থ ছিল কোথাও ১৮ ফুট, আবার কোথাও ২২ ফুট। এর আগে ২০১০ সালে সড়কটি সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করা হয়। এরপর প্রশস্থতা দাঁড়ায় ৪৮ ফুট। কিন্তু এর কোন সুফল পায়নি নগরীর মানুষ।
সম্প্রসারণের পরও এই পথে রিকশা ও সিএনজি ট্যাক্সি এবং অন্যান্য যানবাহন সহজে চলাচল করতে পারছে না। পথচারীরাও নিরাপদে যাতায়াত করতে পারছে না। কাভার্ডভ্যান, লং ভেহিক্যাল এবং ভাঙাচোরা, লক্কড় ঝক্কর মার্কা শত শত ট্রাক রাস্তার পাশে পার্ক করে রাখা হয় এলোমেলোভাবে।
অন্যদিকে, লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। তবে বারিক বিল্ডিংয়ের পর থেকে কাজ ধরলেও এখন পর্যন্ত আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, দেওয়ানহাট এলাকায় কাজ শুরু হয়নি। যখন এসব এলাকায় কাজ শুরু হবে, তবে বিকল্প সড়ক হিসেবে গাড়িগুলোকে স্ট্র্যান্ড রোড দিয়ে যাতায়াত করতে হবে। এরইমধ্যে যদি স্ট্র্যান্ড রোডের যানজট নিরসন না হয়, তবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হলে ট্রাফিক বিভাগকে যানজট নিরসন করতে বেগ পেতে হবে।
গতকাল সোমবার সরেজমিন দেখা গেছে, পুরো সড়কটাই যেন লং ভেহিক্যাল, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের টার্মিনাল। এই তিন ধরনের গাড়ি এমনভাবে রাস্তাটা দখল করে রেখেছে, এতে অন্য কোন যানবাহন বা পথচারীদের চলাচল সম্ভব হয় না। স্ট্র্যান্ড রোডের ৩টি গুদামের রয়েছে ওজন যন্ত্র (স্কেল)। রাস্তার গাড়িজটকে আরও সংকটে ফেলেছে এগুলো। গুদাম থেকে মাল সরবরাহ নেওয়ার জন্য খালি ট্রাক যখন প্রবেশ করে তখন একবার, আবার মালভর্তি করে বের হওয়ার সময় পুনরায় পরিমাপ হয় এই স্কেলে।
এভাবে প্রবেশের সময় পেছনে দীর্ঘ লাইন তৈরি হয় একের পর এক ট্রাকের। একই অবস্থা গুদাম থেকে মাল নিয়ে ফেরার সময়। তখন স্ট্র্যান্ড রোডের জটকে আরও মারাত্মক করে তুলেছে। একবার যানজট লাগলেই সহজে নিরসন হয় না। স্ট্র্যান্ড রোডের দু’পাশে রয়েছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক অফিস, ব্যাংক ইত্যাদি। সেগুলোতে যাতায়াতকারীদের জটের মধ্যে আটকে থাকা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।
আবার, সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত ৫টি স্কেলে ওজন মাপতে সারিবদ্ধ হয় ট্রাকগুলো। স্কেলে প্রবেশ ও বহির্গমন একই পথ হওয়ায় ট্রাকের জটলা লাগার বিষয়টি নিত্য নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে পাঁচটি ওজন স্কেল যানজটের কারণ। সেগুলো হলো- এয়ার স্কেল, ভান্ডারি স্কেল, মক্কা স্কেল, এমআই স্কেল ও আজান স্কেল। এছাড়াও আরো একটি স্কেল নির্মাণাধীন রয়েছে।
মক্কা স্কেলের কর্মচারী মো. বজলু বলেন, ট্রাক ওয়ালারা সুশৃঙ্খলভাবে প্রবেশ করতে পারে না বলে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিক যানজটমুক্ত সড়ক রাখার চেষ্টা করছি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে ওজন স্কেল করার কারণে এ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ওয়ালারা রাস্তাটিকে ‘নিজের’ মনে করে যেখানে ইচ্ছে সেখানে পার্ক করে। অন্য গাড়ি কোনদিকে যাবে, তার তোয়াক্কাও করে না তারা (ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চালক)।
স্থানীয় দোকানদার আল হাসান বলেন, ওজন স্কেলগুলো সরিয়ে বিকল্প কোন ব্যবস্থা নিতে হবে অথবা রাস্তায় গাড়ি চলাচলে সমস্যা বা জট তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে প্রতিনিয়ত ট্রাকজটের দুর্ভোগে পড়তে হবে।
স্ট্র্যান্ড রোডের পাশে অবস্থিত ব্যাংক কর্মকর্তা মো. সেলিম জানান, প্রতিদিনই ট্রাক জটে আটকে কয়েক ঘণ্টা সময় নষ্ট হয় আমাদের। বিশেষত সপ্তাহের প্রথম (রবিবার) এবং শেষদিনে (বৃহস্পতিবার) যে অসহনীয় দুর্দশায় পড়তে হয়, তা বলার মত না।
তিনি আরও বলেন, এই পথে যেসব ট্রাক চলাচল করে এগুলোর প্রায়ই ফিটনেসবিহীন। চলতে চলতে রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ে। আবার চালকরা নির্বিচারে যেখানে সেখানে ট্রাক পার্ক করে রাখেন। ট্রাফিক পুলিশকে এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
ট্রাক চালক মফিজ মিয়া জানান, আমাদের ট্রাকের কারণে স্ট্র্যান্ড রোড অহরহ জটের কবলে পড়ে প্রতিদিন। কোন ট্রাক টার্মিনাল না থাকায় বাধ্য হয়ে আমাদেরকে রাস্তার ওপর গাড়ি রাখতে হয়।
এ বিষয়ে ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক (প্রশাসন) মো. মহিউদ্দিন খান পূর্বদেশকে বলেন, স্কেল করছে, তাতে আমাদের অসুবিধা নেই। কিন্তু স্কেলের গাড়ি প্রবেশ ও বাহির করতে পর্যাপ্ত জায়গা রাখা উচিত ছিল। স্কেল যখন নির্মাণ করেছে আমরা তথা ট্রাফিক বিভাগের কেউ জানি না।
তিনি আরও বলেন, সদরঘাট, মাঝিরঘাট এলাকাটি ব্যস্ততম একটি এলাকা। সব সময় রাস্তাটিকে সচল রাখা জরুরি। যখন ওজন স্কেল ও ট্রাক জট হয়, তখন আমাদের তা নিরসন করতে হিমশিম খেতে হয়। এছাড়াও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হলে আমাদের প্রচুর বেগ পেতে হবে।