খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে বিআরটিএ

81

সারাদেশে এখন অবৈধভাবে চলা বিদ্যুৎচালিত যানবাহনগুলোকে একটি নিয়মের মধ্যে এনে বৈধতা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। তাতে বলা হয়েছে, ইলেকট্রিক মোটরযান চালাতে হলে বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন করতে হবে; থাকতে হবে ফিটনেস সনদ, ট্যাক্স টোকেন। অপ্রতুল বিদ্যুত নিয়ে চলা বাংলাদেশে বিদ্যুৎচালিত এইসব যান ব্যবহারের অনুমতি না থাকলেও সারাদেশেই তা চলছে। এর মধ্যে ইজিবাইক নামে পরিচিতি পাওয়া যানগুলোকে মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্যও দায়ী করা হচ্ছে। বিআরটিএর নতুন উদ্যোগের মধ্য দিয়ে ইজিবাইকেরও বৈধতা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। বিআরটিএ কর্মকর্তারা বলেছেন, ইজিবাইক নিবন্ধনের আগে বুয়েটে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া হবে। খবর বিডিনিউজের
গত বছরের ২৬ নভেম্বর ‘ইলেকট্রিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৮’ এর খসড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠায় বিআরটিএ। পরে গত ৬ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে একটি পর্যালোচনা সভা হয়।
ওই সভায় বিভাগের সচিব মতামত দেন যে নীতিমালার খসড়ায় যেসব বিষয় বলা হয়েছে, তার বেশিরভাগই বর্তমান মোটরযান আইন ও বিধিতে আছে। এছাড়া ১৯৮৩ সালের মোটরযান আইন অনুযায়ী ইলেকট্রিক বা বিদ্যুৎচালিত মোটরযান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে, এ কারণে নতুন নীতিমালা তৈরির প্রয়োজন নেই।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতে বিদ্যুৎচালিত মোটরযান কীভাবে নিবন্ধন হচ্ছে, কীভাবে চলাচল করছে, তা দেখতে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে। এরপর বিআরটিএ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রস্তাব তৈরির কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী। তিনি বলেন, “আমরা একটি খসড়া নীতিমালা পাঠিয়েছিলাম। মন্ত্রণালয় বলেছে, এটি নীতিমালা আকারে না করে অফিস অর্ডার করে দেবে। নীতিমালা করবে না। মন্ত্রণালয় আমাদের বলেছে একটি প্রস্তাব পাঠাতে। এটি আমরা এখনও দিইনি। প্রস্তাবনা তৈরির কাজ চলছে।”
এই উদ্যোগ কেন: বাংলাদেশে কী পরিমাণ বিদ্যুৎচালিত যান চলে, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও শহরাঞ্চল থেকে শুরু করে গ্রামেও এখন প্রচুর ইজিবাইক দেখা যায়। এই সব যানবাহন চালাতে বিপুল পরিমাণে বিদ্যুতের ব্যবহার হয় বলে তা এতদিন নিরুৎসাহিত করা হচ্ছিল।
এখন বৈধতা দেওয়ার উদ্যোগের কারণ ব্যাখ্যা করে বিআরটিএ পরিচালক রব্বানী বলেন, “পৃথিবীর সব জায়গায় ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাপারে আগ্রহ বাড়ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশেও কয়েকটি ইলেকট্রিক কার এসেছে। গাড়ি যেহেতু এখানেও আসা শুরু করেছে, স্বাভাবিকভাবেই একে একটা নীতিমালার আওতায় আনতে হবে।
বর্তমানে চলমান গাড়িগুলো কী পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, তার সঠিক তথ্য নেই বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে। তবে প্রতিদিন আড়াইশ থেকে তিনশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক (জনতথ্য) সাইফুল হাসান।
বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে অনুমতি ছাড়াই লাখের বেশি বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল করছে। এরমধ্যে ইজিবাইক হিসেবে পরিচিত থ্রি-হুইলারের সংখ্যাই বেশি। এদের বেশিরভাগের অবস্থাই ভালো না, খুবই হালকা। নিবন্ধন পদ্ধতিতে পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু হলে আমদানিকারকরা ভালো মানের ইলেকট্রিক থ্রি-হুইলারের আমদানি বাড়বে।
যা আছে খসড়ায়: খসড়া নীতিমালায় ইলেকট্রিক মোটরযানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, রিচার্জেবল ব্যাটারিতে সঞ্চিত বিদ্যুৎ শক্তির সাহায্যে চালিত মোটরযান, যার ব্যাটারি বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন বা নবায়নযোগ্য জ্বালানি (সৌরশক্তি, জৈব জ্বালানি ইত্যাদি) ব্যবহারের মাধ্যমে রিচার্জ করা হয়, তাকে ইলেকট্রিক মোটরযান বলা যাবে। তবে ব্যাটারিচালিত বাইসাইকেল বা রিকশা এর অন্তর্ভুক্ত হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে খসড়ায়।
ইলেকট্রিক মোটরযানের আয়ুষ্কাল ধরার কথাও বলা হয়েছে খসড়া নীতিমালায়। এক্ষেত্রে মোটরসাইকেল ১০ বছর, তিন চাকার যান নয় বছর এবং হালকা, মধ্যম ও ভারী যানবাহনের আয়ুষ্কাল ২০ বছর ধরা হয়েছে।
ইলেকট্রিক মোটরযানের নিবন্ধন ও ফিটনেস সার্টিফিকেট এবং ট্যাক্সটোকেন এবং রুট পারমিট দেওয়ার প্রক্রিয়া ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের মতোই হবে।
ভাড়ায় চালিত ইলেকট্রিক মোটরযানকে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির কাছ থেকে রুট পারমিট নিতে হবে। এক্ষেত্রে ভাড়ায় চালিত ইলেকট্রিক মোটরযানের জন্য সরকার ভাড়া নির্ধারণ করে দেবে।
অন্যান্য যানবাহনের মতোই ইলেকট্রিক মোটরযান শনাক্তের জন্য এর গায়ে বা ফ্রেমে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের খোদাই করা নির্ধারিত ডিজিটের চেসিস নম্বর, মোটর সনাক্তের জন্য মোটরের গায়ে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের খোদাই করা নির্ধারিত ডিজিটের মোটর নম্বর থাকতে হবে।
মোটরযানের মোটর নষ্ট বা অকেজো হয়ে গেলে তা প্রতিস্থাপন করা যাবে বলেও খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে।
অনুমোদিত চার্জিং স্টেশন বা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বা সোলার প্যানেল অথবা নবায়নযোগ্য যে কোনো জ্বালানি ব্যবহার করে এর ব্যাটারি চার্জ করা যাবে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক সাইফুল বলেন, বিদ্যুৎচালিত গাড়ির জন্য চার্জিং স্টেশনও করা হচ্ছে। এজন্য আলাদা একটা ট্যারিফও ঠিক করা হয়েছে। ওরা যেন মানুষের বাসাবাড়ি থেকে বিদ্যুৎ না নেয়, কমার্শিয়াল যে রেট আছে, সেই রেটে ওরা চার্জ দিবে। এ বিষয়গুলো আমরা দেখছি।