-‘ক্লিন রোড ফ্রি রোড’ প্রকল্প ১০ দিনে ৮০ শতাংশ সড়ক দখলমুক্ত

96

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) ‘ট্রাফিক টাইগার্স’ টিমের অভিযানে ১০ দিনে নগরীর বিভিন্ন স্থানে দখল হওয়া রাস্তা উদ্ধার করা হয়। এতে প্রায় ৮০ শতাংশ রাস্তার ধরণে পরিবর্তন এসেছে। এ টিমের অভিযান এখনো চলমান রয়েছে। গত ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় ‘ট্রাফিক টাইগার্স’র অভিযান।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জনসাধারণ সচেতন হলে শতভাগ রাস্তা দখলমুক্ত করা সম্ভব হবে। জনসাধারণের কাছেও এ উদ্যোগটি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। অভিযানটি চলমান থাকলে রাস্তার ব্যাপক পরিবর্তন হবে জানান ট্রাফিক সার্জেন্টরা।
জানা যায়, গত ৫ জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রামের রাস্তা অবৈধ দখলমুক্ত করতে এবং জনসাধারণের নির্বিঘœ চলাচল নিশ্চিত করতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। আর এই উদ্যোগের নাম দেয়া হয় ‘ক্লিন রোড ফ্রি রোড’। যা বাস্তবায়নে রাস্তায় নেমেছে টিম ‘ট্রাফিক টাইগার্স’। ৮ জন সার্জেন্ট নিয়ে গঠন করা হয়েছে এই টিম।
ট্রাফিকের উত্তর এবং বন্দর মিলিয়ে যে আটজন সার্জেন্ট কাজ করে যাচ্ছেন, তারা হলেন- শাহেদ ইকবাল, সিরাজুল ইসলাম, সোহেল রানা, ওয়াহিদুল ইসলাম, আবু হানিফ, মাসুদুল আলম, মঈনুল হাসান এবং নাঈমুল ইসলাম।
ট্রাফিক সূত্র জানায়, নগরীর ১০টি গুরুত্বপূর্ণ রুটে টিম টাইগার্স কাজ করেছে। এতে দ্রæত সফলও হয়েছেন। রুট গুলো হচ্ছে- টাইগারপাস থেকে এয়ারপোর্ট, সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সী বিচ, টাইগারপাস থেকে নিউমার্কেট, কোতোয়ালী থেকে নতুন ব্রিজ, কোতোয়ালী থেকে আন্দরকিল্লা, জিইসি থেকে একে খান, জিইসি থেকে প্রবর্তক মোড়, বদ্দারহাট থেকে কালুরঘাট, অক্সিজেন থেকে মুরাদপুর এবং অক্সিজেন থেকে ষোলশহর ২নং গেইট পর্যন্ত। এ সকল রুটে অভিযান পরিচালনা করেন ট্রাফিক সার্জেন্টরা। এতে রাস্তার পাশে গড়ে উঠা অবৈধ ভাসমান দোকান, ইট-বালি, বাঁশ এবং তরকারির ভাসমান ব্যবসা বন্ধের উদ্যোগে কাজ করেন। উচ্ছেদ চলাকালীন সময় টিম ‘ট্রাফিক টাইগার্স’ এ নেতৃত্বে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট জোনের ট্রাফিক পরিদর্শকরা (টিআই)। তাদের সাথে সাথে রয়েছে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান। যা উচ্ছেদ কাজে সহায়তা করছে।
মুরাদপুর-অক্সিজেন সড়কের স্থানীয় আবু বকর বলেন, রৌফাবাদ এলাকায় মেইন রোডে বাঁশের ব্যবসা করতেন কতিপয় ব্যবসায়ী। অনেকদিন ধরে কাউন্সিলর এবং বাজার কমিটির লোকজন সরিয়ে দিতে চাইলেও তাদের কথার কর্ণপাত করেননি তারা। পরে ‘ট্রাফিক টাইগার্স’ টিম যখন তাদের বুঝিয়ে বলেন, ১০ মিনিটের মধ্যে সব বাঁশ সরিয়ে ফেলেন।
আমিন জুট মিল এলাকার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, রাস্তার অর্ধেকের কাছাকাছি বালির স্তুপ রেখে বালি আর ইটের ব্যবসা করতেন স্থানীয় কয়েকজন। অনেক সময় রাস্তায় বড় ধরনের যানজট হয়ে যেত, কিন্তু ওসব ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক প্রভাব থাকার কারণে কেউ কিছু বলতে পারতেন না। পরে যখন ট্রাফিক টাইগার্স মাঠে নামেন, দ্রæততার সাথে রাস্তা পরিষ্কার করে ফেলেন। টিমের এক সার্জেন্ট সোহেল রানা বলেন, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মোস্তাক আহমেদের পরিকল্পনায় আমরা অবৈধ দখলের হাত থেকে সড়ক ও ফুটপাত মুক্ত করতে আটজন সার্জেন্ট অভিযানে নেমেছি। এতে কেমন পরিবর্তন হয়েছে তা আপনারাই দেখতে পাচ্ছেন। দশদিন আগে কেমন ছিলো এখন কেমন রয়েছে তা দৃশ্যমান।
আট সার্জেন্টের নেতৃত্বদানকারী সার্জেন্ট শাহেদ ইকবাল জানান, আমরা যে সড়কে হাত দিচ্ছি তা পরিষ্কার করেই ছাড়ছি। যতক্ষণ সময় লাগুক ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা সময় দিচ্ছি। বাকিটা নির্ভর করবে জনসাধারণের সচেতনতার উপর। তা না হলে আমাদের কষ্ট বৃথা হয়ে যাবে।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার তারেক আহমেদ পূর্বদেশকে বলেন, আমরা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এরই মধ্যে ৮০ শতাংশ রাস্তা দখলমুক্ত করেছি। তাছাড়া কিছু কিছু রাস্তায় সার্জেন্টরা সরিয়ে দেয়ার পরে পুনরায় দোকানপাট বসিয়ে দিচ্ছে। যেসব দোকানের সামনে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসে তাদের প্রতি আমাদের আহবান থাকবে- রাস্তা দখলমুক্ত করতে যেন আমাদেরকে সহযোগিতা করেন। যদি জনগণ সহযোগিতা করেন, তবে আমরা সফল হতে বেশিদিন লাগবে না। আর রাস্তা দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অভিযান চলবে।