ক্লান্তিহীন প্রচারণা

61

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র চার দিন। ৩০ ডিসেম্বর হবে ভোট গ্রহণ। এর আগে ২৮ ডিসেম্বর মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে প্রচারণা। তাই মরিয়া হয়ে উঠেছেন প্রার্থী ও দলীয় নেতাকর্মীরা। দম ফেলানোর সময় নেই। কখনো পায়ে হেঁটে, আবার কখনো গাড়িতে, খোলা ট্রাকে ছুটছেন তো ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। মিলিত হচ্ছেন পথসভায়। করছেন গণসংযোগ। ঘরে ঘরে মা-বোনদের কাছেও ভোট চাইছেন। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন।
ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। দিন-রাত চলছে ক্লান্তিহীন প্রচারণা। প্রচারণায় এখনো পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এগিয়ে থাকলেও বিএনপি অনেকটা পিছিয়ে। মামলা, হামলা বা গ্রেপ্তারের ভয়ে বের হচ্ছেন না অনেকে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই বেশি প্রচারণা চালাচ্ছে বিএনপি। মাঠে বেশি আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নৌকার জোয়ার এসেছে। সব জায়গায় ব্যাপক সাড়া মিলছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের প্রচারণাই চালাতে দিচ্ছে না। বের হলেই হামলা করা হচ্ছে। তবে জনগণ ভোট দিতে পারলে রায় ধানের শীষের পক্ষেই যাবে।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী ৪৮ ঘণ্টা আগে অর্থাৎ ২৮ ডিসেম্বর মধ্যরাতে প্রচারণা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এক প্রকার শেষ মুহূর্তের প্রচারণা চলছে।
প্রার্থীরা ভোরেই ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। সাথে থাকছেন দলীয় নেতাকর্মী। চলার পথে যাকে পান তার সাথেই করছেন কোলাকুলি। কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ থেকে শুরু করে ধনাঢ্য ব্যক্তি কেউ বাদ যাচ্ছেন না। সবার সাথেই দেখা করে ভোট প্রার্থনা করছেন প্রার্থীরা। খালে-বিলে নেমে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। নিজ হাতেই বিলি করছেন লিফলেট।
প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী এলাকা। এলাকার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোন স্থানই বাদ দিচ্ছেন না। শুধু প্রার্থীরা নয়, দলীয় নেতাকর্মীরাও ছুটছেন নিজ নিজ দলের প্রার্থীদের জন্য। দল বেঁধে তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাচ্ছেন। হ্যান্ডমাইক নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। মাইক বেঁধে পথসভা করছেন। ট্রাকে মাইক লাগিয়ে ভোট চাইছেন নেতাকর্মীরা। লিফলেট বিতরণ করছেন।
আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, মহিলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন মাঠে নেমেছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে সভা সমাবেশ, গণসংযোগ করছেন নেতাকর্মীরা। থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে। দেশে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার এসেছে। মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিতে উৎসুক হয়ে আছে। নৌকা মানে স্বাধীনতা, নৌকা মানে উন্নয়ন। তিনি বলেন, আমরা মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাইছি। ব্যাপক সাড়া মিলছে।
আওয়ামী লীগ জোরেসোরে মাঠে নামলেও বিএনপি’র প্রচারণা অনেকটা কম। বিভিন্ন স্থানে প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের উপর হামলার কারণে কমে গেছে প্রচারণা। গত দু’দিনে ৪ থেকে ৭টি স্থানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ গ্রেপ্তার করছে নেতাকর্মীদের। এরপরও প্রচারণা থেমে নেই। প্রার্থীরা গাড়ি বহর নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে ছুটে চলেছেন তারা। বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট নেতাকর্মীরাও যাচ্ছেন প্রচারণায়।
বিএনপি কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমাদেরকে নামতেই দিচ্ছে না। একদিকে পুলিশ, অন্যদিকে সন্ত্রাসী। কোন দিক সামলাবো। তিনি বলেন, জনগণ আমাদের পক্ষে রয়েছে। ভোটের দিন সেটি প্রমাণ হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর তিনটি আসনের মধ্যে চট্টগ্রাম-৯ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন। তিনি ছুটে চলেছেন নেতাকর্মীদের নিয়ে। আওয়ামী লীগ বাকলিয়ার উপর জোর দিয়েছেন বেশি। নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রায়ই তিন বাকলিয়ায় প্রচারণা চালাতে যাচ্ছেন। থানা ও ওয়ার্ড নেতারা সেখানে নিয়মিতই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাকলিয়ার আগের সেই পরিস্থিতি নেই। পুরো এলাকায় বর্তমানে আওয়ামী লীগের অবস্থান অনেক বেশি ভাল। উন্নয়নের কারণে সবাই আওয়ামী লীগের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। আমরা প্রতিদিনই সভা সমাবেশ করছি। বেশিরভাগ ভোটই নৌকা মার্কায় যাবে।
বিএনপি প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন জেলে আটক থাকায় তিনি নিজে প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না। তার পক্ষ হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা দলবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে যাচ্ছেন। তারাও বাকলিয়ার উপর জোর দিয়েছেন বেশি। সেখানে প্রচারণা চালাচ্ছেন নেতারা।
নগর বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক মো. আবদুল মান্নান বলেন, বাকলিয়া বিএনপি’র ঘাঁটি। জনগণ যদি ভোট দিতে পারেন, তাহলে ব্যালট বিপ্লব ঘটবে। সবার আগে প্রয়োজন সুষ্ঠু নির্বাচন।
চট্টগ্রাম-১০ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন ও বিএনপি প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান, চট্টগ্রাম-১১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাংসদ এম এ লতিফ, বিএনপি প্রার্থী সাবকে মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১ মিরসরাই আসনে গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বিএনপি প্রার্থী নুরুল আমীন, চট্টগ্রাম-৮ চান্দগাঁও-বোয়ালখালী আসনে মহাজোট প্রার্থী মঈনুদ্দিন খান বাদল, বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ানও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে মুক্তিযুদ্ধে লালিত চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজের ব্যানারে নগরীর তিনটি আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য প্রার্থীদের নিয়ে মত বিনিময় করেছেন সাংবাদিকরা। এতে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ডা. আফছারুল আমীন ও এম এ লতিফ উপস্থিত ছিলেন। এতে উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।
রাউজান আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, বিএনপি প্রার্থী জসিম উদ্দিন সিকদার, সীতাকুন্ড আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিদারুল আলম, বিএনপি প্রার্থী ইসহাক কাদের চৌধুরী, ফটিকছড়িতে মহাজোটের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, বিএনপি’র আজিম উল্লাহ বাহার, হাটহাজারীতে মহাজোটের ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জোটের মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম, রাঙ্গুনিয়া আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ড. হাছান মাহমুদ, জোট প্রার্থী নুরুল আলমও প্রচারণা চালিয়েছেন।
আনোয়ারায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, বিএনপি প্রার্থী সরোয়ার জামাল নিজাম, পটিয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ শামসুল হক চৌধুরী, বিএনপি প্রার্থী এনামুল হক এনাম, চন্দনাইশে জোট প্রার্থী কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান সাংসদ নজরুল ইসলাম, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ড. আবু রেজা নদভী, জোট প্রার্থী জামায়াত নেতা আ ন ম শামসুল ইসলাম প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রচারণায় প্রার্থী, নেতাকর্মী কারো মধ্যে ক্লান্তি নেই। সেই ভোর থেকে মধ্য রাত অবদি নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করছেন। দুই আসনে লাঙ্গল ও ছাতা মার্কায়ও ভোট চাইছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।