ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা পালানো ঠেকাতে বেড়া নির্মাণ হবে

29

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, বরগুনায় দিন-দুপুরে স্ত্রীর সামনে স্বামী রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরের ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বরগুনায় যে ঘটনা ঘটেছে, সেটি কেন ঘটেছে তদন্ত করে জানানো হবে। তবে এটি দুঃখজনক। এ ঘটনায় পুলিশ বসে নেই। দুজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি যারা এ ঘটনায় জড়িত, সবাইকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, যতগুলো ঘটনাই ঘটুক বাংলাদেশে, পুলিশের দক্ষতা-সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এই পুলিশকে যদি ১০ বছর আগের পুলিশ মনে করে কেউ, তাহলে ভুল করবে। আমাদের পুলিশ অনেক সক্ষম ও অনেক দক্ষ। তারা অনেক ইনফরমেটিভ।
বরগুনায় প্রকাশ্যে হত্যাকাÐের ঘটনায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে মনে করেন কি?’- এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে কেন, আমাদের পুলিশবাহিনী তো সঙ্গে সঙ্গে কাজ করছে। এ ধরনের দু’য়েকটি ঘটনা আগেও ঘটেছে। ফেনীতে নুসরাত হত্যাকাÐের পর আমাদের পিবিআই তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে আসলে যারা জড়িত তাদের ধরে আদালতে সোপর্দ করেছে। আমাদের পুলিশ অনেক দক্ষ, তারা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে।
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গারা যাতে দেশে কোনো অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য নিরাপত্তাবাহিনীকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য অবশ্যই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা শুধু যে নিরাপত্তা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে আছি তা নয়, ওই জায়গায় বিশাল বনও উজাড় হয়ে গেছে। সামাজিক পরিবর্তনও আসছে। একজন স্থানীয় শ্রমিক যেখানে দৈনিক ৫০০-৬০০ টাকা আয় করতেন, এখন একজন রোহিঙ্গাকে ২০০ টাকা দিলেই তারা সেই কাজ করছে। আবার তারা নির্ধারিত জায়গা থেকে বেরিয়ে যেকোনো জায়গায় যাবার চেষ্টা করছে। নিরাপত্তা বাহিনী আবার তাদের ধরে নিয়ে আসছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে লক্ষ লক্ষ লোক চলে এসেছে, এটা নিয়ে আমাদের কোনো ধারণা ছিল না। ধারণা থাকলে আমরা আগে থেকে একটা ব্যবস্থা করে রাখতে পারতাম। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করছি, যাতে তারা ক্যাম্প থেকে বের হতে না পারে। ভেতরে যাতে তারা কোনো ঘটনা ঘটাতে না পারে সেই ব্যবস্থাও আমরা করছি।’
তিনি বলেন, তারা যাতে কোনোধরনের অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে বা সন্ত্রাসী কর্মকাÐে লিপ্ত হতে না পারে, সেজন্য আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তৈরি আছে। আশা করি তারা এখানে কিছু করতে পারবে না।
এর আগে পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশে নিয়োজিত নারী সদস্যরা কৃতিত্বের সঙ্গে কাজ করে এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নারীদের সামনে এখন দুঃসাধ্য বলতে কিছু নেই। তারা সবক্ষেত্রে এখন কৃতিতের স্বাক্ষর রাখছেন।
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, বৃষ্টি-রোদের মধ্যেও পুলিশের নারী সদস্যরা সড়কে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনো অবহেলা করেন না। বিশেষ করে সাইবার ইউনিটে তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন-তিনি যদি ক্ষমতায় আসেন তাহলে দেশকে বদলে দেবেন। তিনি ঠিকই বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন। একটি সম্ভাবনাময় ও মধ্যম আয়ের বাংলাদেশে আমরা পৌঁছে গেছি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে। এখন তার টার্গেট দেশকে উন্নত দেশে নিয়ে যাওয়া। এ জন্য তিনি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন ২০৪১ সাল।
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ২০১০ সালের দিকে নারী ক্ষমতায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী নারী নীতি সংশোধন করেন। ওই সময়ে অনেকে তার সমালোচনা করেছেন। কিন্তু তার যে দুরদর্শিতা ছিলো অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন সেই বাংলাদেশ গড়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নারীরা যেন সব জায়গায় তাদের দক্ষতা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এখন শিক্ষা, স্বাস্থ্য এমনকি খেলাধুলার ক্ষেত্রেও নারীরা সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছেন। কিশোরীরা কয়েকদিন আগে পাকিস্তানকে ১৪টা গোল দিয়েছে। এমনকি হিমালয় পর্বতেও বাংলাদেশের নারীরা পতাকা উড়াচ্ছে। তাহলে নারীরা এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী যে স্বপ্ন দেখতেন তা এখন বাস্তবায়ন হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে পুলিশে নারী সদস্য ৫০ ভাগ করার প্রস্তাব রেখে শিক্ষা-উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ৬০ ভাগ মেয়ে। ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্ষেত্রেও পুরুষের সঙ্গে সমানতালে অবদান রাখছে নারীরা। কিন্তু কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আমরা তাদের হারিয়ে ফেলছি। হারিয়ে ফেলার কারণ সামাজিক নিরাপত্তা। আর এই সামাজিক নিরাপত্তায় পুলিশ সদস্যের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি অনুরোধ জানাবো ২০৩০ সালের মধ্যে নারী পুলিশ সদস্য যেন ৫০ ভাগে উন্নীত করা হয়।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেন নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করতে। তিনি নারীর ক্ষমতায়নে যেভাবে নারী নীতিগুলো বাস্তবায়ন করছেন তা নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। নারীর ক্ষমতায়নে তিনি নিরব বিপ্লব ঘটিয়েছেন। আমরা সেই বিপ্লবকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী-পুরুষের ভেদাভেদ কমিয়ে আনছেন। বৈষম্য দূর করে আমরা এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল আমরা নির্দিষ্ট সময়ের আগে অর্জন করতে সক্ষম হই। বিশ্বাস করি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাও সময়ের আগেই অর্জন করতে পারব। দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী যে উদ্যোগগুলো নিচ্ছেন তা দেখে আমরা অভিভূত।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে যেসব সেক্টরে উন্নয়ন হয়েছে, সব ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান রয়েছে। তার নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে সব সূচকে পেছনে ফেলেছে। কয়েকটি সূচকে ভারতকেও বাংলাদেশ পেছনে ফেলেছে। পুলিশে বর্তমানে যারা নারী সদস্য আছেন, আপনাদের কৃতিত্বের কারণে এ বাহিনীতে নারী সদস্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, জাতিসংঘে নারী পুলিশের সংখ্যা ১০ শতাংশ। প্রায় এক হাজার ৪০০ নারী পুলিশ সদস্য জাতিসংঘের শান্তি মিশনে কাজ করছেন। কঙ্গো, সুদানসহ আফ্রিকা মহাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ দেশে সাহসের সঙ্গে এসব সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে শান্তি রক্ষা মিশনে পুলিশের নারী সদস্যের এক ইউনিট কাজ করছে। সামনে আরও এক ইউনিট পাঠানো হবে।
চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান, পুলিশ নারী কল্যাণ (পুনাক) সমিতির সভাপতি হাবিবা জাবেদ, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক ও নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ অভিযান) আমেনা বেগম।
অনুষ্ঠানে ১১ জনকে সম্মননা প্রদান করা হয়। সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন-অতিরিক্ত আইজিপি রৌশন আরা বেগম (মরণোত্তর), এআইজি তাপতুন নাসরীন, অতিরিক্ত ডিআইজি আতিকা ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শম্পা রাণী সাহা, পুলিশ সুপার মাহফুজা বেগম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মাহ্ফুজা লিজা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফাহমিদা হক শেলী, কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন, এসআই জান্নাতুল ফেরদৌস ও কনস্টেবল নুসরাত জাহান।

কমিউনিটি পুলিশিং মহাসমাবেশ
‘পুলিশ বাহিনীকে
ঢেলে সাজানো
হয়েছে’
নিজস্ব প্রতিবেদক
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজিয়েছে সরকার। পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। বর্তমান পুলিশ বাহিনীকে কেউ যদি ১০ বছর আগের পুলিশ বাহিনী মনে করে তাহলে ভুল করবে।
নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মহাসমাবেশে গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে উন্নয়নের পথে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে উন্নয়নের এ গতি অব্যাহত রাখতে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বড় বিষয়। তিনি বলেন, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মূল কাজ পুলিশকে সহযোগিতা করা। দেশ থেকে মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দূর করতে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সহযোগিতা প্রয়োজন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এসব মোকাবেলা করবো।
অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, প্রধানমন্ত্রী আগামী ১০০ বছরের ডেল্টা প্ল্যান নিয়ে কাজ করছেন। এ প্ল্যান বাস্তবায়নে জননিরাপত্তায় বেশি মনোযোগী হতে হবে। এ জন্য কমিউনিটি পুলিশিংয়ের পরিধি বাড়িয়ে সবখানে এ ধারণা ছড়িয়ে দিতে হবে।
সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ এবং মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে। এসব ঠেকাতে শপথ নিতে হবে। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ এবং মাদক দূর করবো আমরা।
সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য ডা. আফসারুল আমীন, এম এ লতিফ, আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম, কমিউনিটি পুলিশিং চট্টগ্রামের সদস্য সচিব অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন প্রমুখ।