কোরাম সংকটে অপচয় ১৬৩ কোটি টাকা

26

দশম সংসদের প্রথম থেকে শেষ অধিবেশন (মোট ২৩টি) পর্যন্ত কোরাম সংকটের কারণে মোট ১৯৪ ঘণ্টা ৩০ মিনিট অপচয় হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ১৬৩ কোটি ৫৭ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। দশম জাতীয় সংসদের ওপর দুর্নীতিবিরোধী গবেষণা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পরিচালিত ‘পার্লামেন্টওয়াচ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান গতকাল বুধবার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন।
২০১৪ সালের জানুয়ারির প্রথম থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করে টিআইবি। সংবাদ সম্মেলনে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দশম সংসদে গড় কোরাম সংকট ছিল ২৮ মিনিট। প্রথম থেকে ২৩তম অধিবেশন মিলিয়ে ১৯৪ ঘণ্টা ৩০ মিনিট কোরাম সংকট ছিল’।
সংবিধান অনুযায়ী, ন্যূনতম ৬০ জন সদস্য উপস্থিত না থাকলে সংসদের কোরাম হয় না। কোরাম না থাকলে বৈঠক স্থগিত বা মুলতবি করতে হয়। খবর বিডিনিউজের
জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে বলা আছে, কোরাম সংকটের জন্য অধিবেশনে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কোরাম হওয়ার জন্য তিনি পাঁচ মিনিট ধরে ঘণ্টা বাজানোর নির্দেশ দেবেন। এর মধ্যে কোরাম না হলে স্পিকার অধিবেশন মুলতবি রাখবেন।
নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ওই সংসদে বিরোধীদলের ভূমিকা ছিল। পাশাপাশি সরকারেও ছিল দলটি, যা নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনাও সইতে হয়েছে তাদের। জাতীয় পার্টির ‘দ্বৈত’ ভূমিকার কারণে বিরোধীদল হিসেবে দলটিকে ব্যর্থও বলেছিল টিআইবি।
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে এই প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সত্যিকার বিরোধীদল না থাকায় দশম সংসদ প্রত্যাশিতভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি।
‘বিরোধীদল বলতে যা বোঝায়, সে ভূমিকা আমরা পাইনি। তাদের একটা আত্মপরিচয়ের সংকট ছিল। বলা যায়, মাথাব্যথার কারণে মাথা কেটে ফেলা হয়েছে’।
এবারের প্রতিবেদন নিয়ে ইফতেখারুজ্জামান জানান, সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি কমেছে। তবে সরকারি দলের একচ্ছত্র আধিপত্য বেড়েছে। আশা জাগানিয়া কিছু না থাকলেও এ দুটি ব্যতিক্রমী বিষয় ছিল দশম সংসদে। কোরাম সংকট অষ্টম ও নবম সংসদের তুলনায় কমেছে। কিন্তু সংসদকে আরও কার্যকরী করতে আমরা একগুচ্ছ সুপারিশ করেছি। তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের সচেষ্ট হতে হবে’।
টিআইবির পর্যবেক্ষণ : প্রতিবেদনে সংস্থার পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, প্রধান একটি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ না থাকায় দশম সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়নি। ফলে সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন সম্ভব হয় এবং সংসদীয় কার্যক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণে একচ্ছত্র ক্ষমতার চর্চা বৃদ্ধি পায়। আইন প্রণয়ণের আলোচনায় সদস্যদের তুলনামূলক কম অংশগ্রহণ, সংসদীয় কমিটির প্রত্যাশিত কার্যকারিতা, কার্যকর বিরোধী দলের অনুপস্থিতি ও স্পিকারের জোরালে ভূমিকার ঘাটতির ফলে সংসদ প্রত্যাশিত পর্যায়ে কার্যকর ছিল না।
কথিত বিরোধী দল ‘আত্মপরিচয় সংকট’ ও দ্বৈত অবস্থানের কারণে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে পারেনি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে
টিঅঅইবি বলছে দশম সংসদে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে, সংসদের বাইরে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ও অশ্লীল শব্দের ব্যবহার অব্যাহত থাকার পাশাপাশি বিধি অনুযায়ী অধিবেশন চলাকালে গ্যালারিতে শৃঙ্খলা রক্ষায় স্পিকারের কার্যকর ভূমিকারও ঘাটতি ছিল।
জাতীয় সংসদকে কার্যকর করতে টিআইবি ১১টি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সংসদ সদস্য আচরণ আইন প্রণয়ন, সরকারি দলের একচ্ছত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিবর্তে কার্যকরী বিরোধী দলের অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হবে, সংসদীয় কমিটির কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে স্বার্থ সংশ্লিষ্টতার তথ্য পেলে তাকে ওই কমিটি থেকে বাদ দিতে হবে, বিধি অনুযায়ী কমিটির প্রতিবেদন নিয়মিত প্রকাশ।