কোভিড-১৯ ও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প

47

বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানি খাত হলো তৈরি পোশাক খাত। কিন্তু ২০২০ সালের মার্চ মাসে কোভিড-১৯ এর কারণে এই খাতে ব্যাপক ধস নেমে আসে। এসময় চীনসহ বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় তৈরি পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ আমেরিকা এবং যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ তাদের আদেশ বাতিল এবং স্থগিত ঘোষণা করে। এছাড়াও কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে দেখা যায় পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় এবং সময়মতো উপকরণ না আসায় অনেক অর্ডার বাতিল হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে ১০৬ পোশাক কারখানা থেকে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। এপ্রিল মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৩৭ কোটি টাকা।
তৈরি পোশাক শিল্পে কোভিড-১৯ এর ফলে সৃষ্ট এই নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে এবং প্রাপ্ত ক্রয়াদেশগুলো সময়মতো শেষ করতে গার্মেন্টসগুলো রীতিমতো হিমশিম খেতে থাকে। এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে এবং উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া ও শ্রমিকের মজুরি প্রদানের জন্য সরকার ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। সরকারের প্রণোদনা, উদ্যোক্তা ও শ্রমিকের নিরলস পরিশ্রমের ফলে জুন মাস থেকে তৈরি পোশাক খাতে সৃষ্ট মন্দাভাব ধীরে ধীরে কেটে উঠতে থাকে।
জুন মাসে তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় হয় ২২৫ কোটি টাকাÑ যা গত ছয় মাসের তুলনায় বেশি। অন্যান্য দেশে মহামারীর প্রকোপ জুন মাস থেকে কিছুটা কমতে থাকায় এবং বিভিন্ন দেশে লকডাউন তুলে দেয়ায় ইউরোপ, আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ক্রয় আদেশ আসতে শুরু করে এবং স্থগিত হয়ে যাওয়া অর্ডার ফিরতে থাকে। অগাস্ট মাসে তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৩৬ কোটি ৩৩ লাখ মার্কিন ডলার- যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয় হয় ২৮ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতে রপ্তানি আয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৭.৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশ মাস্ক এবং পিপিই-এর চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এ পণ্যগুলো রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ২৯০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ যা প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক ভালো। শীতকালে এবং বড়দিনকে সামনে রেখে আশা করা যায়- ডিসেম্বরের মধ্যে আরো নতুন অনেক ক্রয় আদেশ আসবে এবং স্থগিতাদেশগুলো পুনরায় ফিরে আসবে। ফলে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। তাই এই খাতের সক্ষমতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
তৈরি পোশাক খাতের প্রাণ-ই হলো শ্রমিক। এই খাতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে অবশ্যই শ্রমিকদের দিকেও নজর দিতে হবে। করোনা সংক্রমণ থেকে তাদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য তাদেরকে অবশ্যই মালিক পক্ষ থেকে ফ্রি সুরক্ষা সামগ্রী যেমনÑ মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, পিপিই সরবরাহ করা উচিত এবং কর্মস্থলে যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করা যায়- সে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার ওপর নির্ভর করে শীর্ষ রপ্তানি খাতের অনেকাংশ। প্রতিটি পোশাক কারখানার পরিছন্নতা, শ্রমিকদের অসুস্থতা জনিত ছুটি, ফ্রি মেডিকেল সার্ভিস ছাড়াও সংশ্লিষ্ট সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য সরকারকে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। শ্রমিক ছাঁটাই ও বেতন বন্ধ যেন না হয় সেদিকে অবশ্যই বিজিএমইএকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তথ্যসূত্র: বিজিএমইএ

লেখক : প্রভাষক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বন্দর মহিলা কলেজ