কোচে ফিরেছে স্বস্তি ইঞ্জিন নিয়ে দুশ্চিন্তা

80

রেলওয়ের বহরে যুক্ত হওয়ার কথা নতুন ২৫০ কোচ ও ৭০টি ইঞ্জিন। ইতিমধ্যে ৫০টি ব্রডগেজ কোচ এসেছে। এর আগে আরও একটি প্রকল্পে ১৫০টি লাল-সবুজ কোচ আসে। সবমিলিয়ে কোচ সংকট কিছুটা কাটলেও ইঞ্জিন সংকটে আরও বছর দুয়েক ধুঁকতে হবে রেলকে।
বর্তমানে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ট্রেন পরিচালনায় আছে ১৫০টি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন)। এসব ইঞ্জিনের ৯৪টির বয়স ২০ বছরের ঊর্ধ্বে। বাকি ৫৬টির বয়স ২০ বছরের কম। মেয়াদোত্তীর্ণ এসব ইঞ্জিন দিয়েই চলছে রেলসেবা। এতে ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনি ওলটপালট হচ্ছে ট্রেন শিডিউল।
সূত্র জানায়, গত মে মাসে রেকর্ডসংখ্যক ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা ঘটেছে পূর্বাঞ্চলে। আন্তঃনগর, মেইল, লোকাল ও গুডস ট্রেন মিলিয়ে ২৯টি ইঞ্জিন বিকল হয়। প্রতিনিয়ত ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় কমপক্ষে ১৭টি ট্রেন বিভিন্ন সেকশনে বিলম্বিত হয়েছে। বিকল হওয়া ট্রেনগুলোর মধ্যে ১১টি আন্তঃনগর ট্রেনের ইঞ্জিন।
গত ২৪ জুলাই পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানা পরিদর্শনে এসে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেন, আগামী জুনের মধ্যে মিটারগেজের ২০০ যাত্রীবাহী কোচ আসবে। ১০টি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) আসবে। এগুলো পেলেই আরও ১২টি নতুন ট্রেন চালু করা যাবে। প্রথমধাপে আসা ২৬টি কোচ দিয়ে রংপুরে নতুন ট্রেন চালু করা হবে।
কোচ ক্রয় সংক্রান্ত প্রকল্পের পরিচালক হারুনুর রশিদ পূর্বদেশকে বলেন, নতুন কোচের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে ৫০টি ব্রডগেজ কোচ এসেছে। মিটার গেজ ২০০টি কোচের মধ্যে প্রথম ২৬টি আসছে। আগামী ৩১ তারিখে নতুন কোচগুলো আসবে বলে ধারণা করছি। ইঞ্জিন সহসা আসছে না। আরো দুই বছর পর ইঞ্জিন আসা শুরু হবে।
জানা যায়, ২০১৬-২০ সাল পর্যন্ত সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ৬৬ হাজার ৩৩৭ কোটি ৭১ লাখ টাকার একটি বৃহৎ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এ প্রকল্পে ১৪০টি নতুন ইঞ্জিন কেনা হবে। ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিটি ইঞ্জিন ক্রয় করা হবে। ২০১৮ সালের ১৭ মে রেলভবনে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেমের সঙ্গে ৭০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন কেনার চুক্তি সই হয়। প্রথমধাপে দক্ষিণ কোরিয়ার ১০টি নতুন ইঞ্জিন আগামী জুনের মধ্যে রেলবহরে যুক্ত হবে।
পরিবহন বিভাগ সূত্র জানায়, রেলওয়েতে প্রয়োজনের তুলনায় ইঞ্জিন কম। যে কারণে যান্ত্রিক বিভাগ থেকে সাবধানতা অবলম্বনের জন্য নির্দেশনা আছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ গতিতে ট্রেন চালনায় বাধ্যবাধকাত আরোপ হয়েছে। বর্তমানে যেসব ইঞ্জিন আছে তাতে অতিরিক্ত কোচ নিয়ে ট্রেন চালানো কঠিন। স্বাভাবিক সময়ে অতিরিক্ত কোচ লাগানোর প্রয়োজন না হলেও ছুটির দিনগুলোতে রেলে যাত্রীদের চাপ থাকে। এসময় অতিরিক্ত কোচ সংযোজনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এসব ইঞ্জিনে অতিরিক্ত কোচ লাগানোয় ঝুঁকি থাকে। আগামী ঈদুল আজহায় এর প্রভাব পড়বে।
টাইম টেবিল-৫১ অনুযায়ী ট্রেন ভেদে ইঞ্জিনের গতি ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার নির্ধারিত আছে। কিন্তু অনেক সময় পুরাতন ও ত্রæটিযুক্ত রেল লাইন, ব্রিজ কালভার্ট, এসিপি ইত্যাদি কারণে নির্ধারিত গতি কমিয়ে দেয়া হয়। পরে সময়ের প্রয়োজনে গতি বাড়িয়ে ট্রেন চালানো হলে ইঞ্জিন ট্রাকশন মোটরসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে পড়ছে। টাইম টেবিল মানতে গিয়ে নির্ধারিত লোডের চেয়ে অতিরিক্ত লোড ও সর্বোচ্চ গতিতে ট্রেন চালাতে গিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনগুলোর বিকলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়েতে ১৭৮টি মিটারগেজ ইঞ্জিন আছে। ২০১৭ সালের রেলওয়ে ইনফরমেশন বুকের তথ্যমতে, বর্তমানে কোচের সংখ্যা এক হাজার ৪১০টি।