কোচিং সেন্টার বন্ধের নির্দেশ

78

আগামী ২ ফেব্রæয়ারি ২০১৯ থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ছোঁয়ার এ পরীক্ষা নির্বিঘœ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের যেমন থাকে ব্যাপক প্রস্তুতি তেমনি শিক্ষার্থীর ভালো পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতির সাথে থাকে নানা ধরনের দুঃচিন্তা। বিশেষ করে, অভিভাবক মহলে একধরণের উদ্বেগ বিরাজ করতে থাকে। এ দুঃচিন্তা ও উদ্বেগের কারণ প্রশ্নফাঁস। যদিও গত এইচএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় সরকারের কঠোর অবস্থান ও প্রশ্নপত্রের সেট নির্ণয়-খোলার ক্ষেত্রে কৌশলী হওয়ার কারণে প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটেনি, কিন্তু পরীক্ষার আগে প্রশ্নফাঁস হবেনা-এমনটি গেরান্টি কে দিবে? এ নিয়েই যত উদ্বেগ। তবে ২০১৮ সালের তিনটি পাবলিক পরীক্ষায় যখন প্রশ্নফাঁস ঠেকানো সম্ভব হয়েছে তখন আমাদের বিশ্বাস এবারও এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস হবে না।
নতুন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষা মন্ত্রীদ্বয় ইতোমধ্যে প্রশ্নফাঁসরোধে সরকারের কঠোর অবস্থান, গোয়েন্দা নজরদারী ইত্যাদিও কথা বলেছেন। এছাড়া অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি ফয়েল পেপারের বিশেষ নিরাপত্তা প্যাকেটে প্রশ্ন পাঠানোর ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। এই প্যাকেট ট্রেজারি বা ব্যাংকের ভল্ট থেকে কেন্দ্রে নেয়ার পথে কেউ খুললে সহজেই ধরা পড়ে যাবে। প্রশ্ন পরীক্ষার্থীদের হাতে দেয়ার ২৫ মিনিট আগে লটারীর মাধ্যমে সেট নির্ণয় করার কথাও বলা হয়েছে। এসব ঘোষণার সাথে আগামী ২৭ জানুয়ারি থেকে এক মাস বন্ধ থাকছে দেশের সব কোচিং সেন্টার। প্রশ্নফাঁস রোধে সতর্কতামূলক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত রবিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। আপাতদৃষ্টিতে সরকারের এ উদ্যোগগুলো ইতিবাচক মনে করা যায়। বেশকিছু পদক্ষেপ ২০১৮ সালের এসএসসি, এইচএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় নেয়া হয়েছিল। যার সুফলও পাওয়া গিয়েছিল। আশা করা হচ্ছে, সরকার, বোর্ড ও পরীক্ষা পরিচালনাকারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ আন্তরিক হলে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের পলে অবশ্যই সুফল পাওয়া যাবে। উল্লেখ্য যে, এবারের এসএসসি পরীক্ষায় মাদ্রাসা ও কারিগরী শিক্ষাবোর্ডসহ ১০ শিক্ষা বোর্ডের অধিনে সর্বমোট ২১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬০ শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। তাদের মধ্যে দাখিলে অংশ নিচ্ছে ৩ লাখ ১০ হাজার ১৭২ জন। এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষায় ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৭২ জন। আর সারাদেশে মোট পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ৩ হাজার ৪৯২টি।
দেশে পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন সাধারণ ঘটনা। বিশেষ করে অতীতে এসএসসি পরীক্ষায় এর ভয়াবহতা বেশি দেখা যায়। আগেও বলেছি, ২০১৭ সালকে প্রশ্নফাঁসের বছর বলা হলেও গত বছর অবশ্য উল্লেখ করার মতো ঘটনা ঘটেনি। এটি ইতিবাচক দিক। মানুষ অতীতে নকলের উৎসব অবস্থা যেমন ভুলতে বসেছে আমরা আশা করি, সরকার প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে যে উদ্যোগগুলো নিয়েছে তা যথাযথ বাস্তাবায়ন করার ক্ষেত্রে কোনরকম কার্পণ্যতা না হলে দেশের মানুষ প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি একেবারে ভুলে যাবেন।
আমরা জানি, পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পরীক্ষার্থীদের ওপর, এমনকি তাদের অভিভাবকদের ওপর। শিক্ষিত মানুষই দেশ-জাতির নেতৃত্ব দেয়। অথচ শিক্ষার মতো একটি মৌলিক বিষয় বাংলাদেশে বিপর্যস্ত। প্রশ্নফাঁস, ভর্তি বাণিজ্য, দুর্নীতিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। আকাশ-সংস্কৃতির কল্যাণে জেএসসি, এসএসসি-এইচএসসিসহ সব পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন আজ ফাঁস হয়ে যাচ্ছে, যা আমাদের জাতীয় জীবনে গভীর অন্ধকার বয়ে আনছে।
এটা বাংলাদেশের জন্য এক অশনি সংকেত। সন্তানদের উচ্চ রেজাল্টের আশায় প্রশ্নফাঁসকারী দুর্বৃত্তদের খপ্পরে পড়েন এক শ্রেণির নৈতিকতাহীন অভিভাবকও। এই ক্ষেত্রে কিছু অভিভাবকের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। আমরা মনে করি, সরকার আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হলে প্রশ্নফাঁস ঠেকানো সম্ভব। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নীতি-নৈতিকতা ও শুদ্ধাচার বিষয়ে শিখন ও প্রশিক্ষণ জোরদার করতে হবে।