কোকিলের কুহুতান, বেগম আখতার এবং মেয়র নাছিরের নান্দনিক চট্টগ্রাম

147

চট্টগ্রামকে এক সময় বলা হতো ‘প্রাচ্যের রাণী’। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্যকর জলবায়ুর জন্য চট্টগ্রামকে ওই উপাধিতে ভ‚ষিত করা হয়েছিলো। সাহেবরা যখন এদেশ দখল করে প্রভু হিসেবে আবিভর্‚ত হলো, তখনো চট্টগ্রামের সৌন্দর্য্যরে খ্যাতি অটুট। না হলে এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা, বিচারপতি উইলিয়াম জোন্স স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য চট্টগ্রামে আসতেন না। সম্ভবত তিনি জাফরাবাদে অবস্থান করেছিলেন। সে সময় তাঁর জন্য যে বাংলো তৈরি করা হয়েছিলো, তার একটি স্কেচ আমি দেখেছি।
তারপরে চট্টগ্রামের সৌন্দর্য ¤øান হতে হতে পঞ্চাশ-ষাটের দশকে চট্টগ্রাম আবার কিছুটা সৌন্দর্য ফিরে পায়। গোটা বাংলাদেশ পিরিয়ডে চট্টগ্রামের অবনমন ঘটেছিলো। শহরের অভিভাবক সংস্থা চট্টগ্রাম পৌরসভার দেড়শ বছরের ইতিহাসে ১৯১৯ সাল থেকে নির্বাচিত চেয়ারম্যানের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাতঃস্মরণীয় নূর আহমদ চেয়ারম্যান একাই ৩৩ বছর পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর আমলে শহরের অবকাঠামো গড়ে উঠতে থাকে। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হচ্ছে, উপমহাদেশে সর্বপ্রথম চট্টগ্রাম পৌরসভায় বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন। তারপর স্বনামধন্য রফিক মিঞা (শেখ রফিউদ্দিন সিদ্দিকী), বখতেয়ার মিঞা, স্বনামধন্য ওআর নিজাম, ফজল করিম প্রমুখের হাতে পৌরসভা প্রশাসন পরিচালিত হতে থাকে। এর মধ্যে শুধু একবারই আওয়ামী লীগের সিরাজ মিঞা ভাইস-চেয়ারম্যান হয়ে বেশ কিছু সাহসী কর্মকান্ডের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। পৌরসভা ক্রমশ বড় হচ্ছিলো; পাঁচ ওয়ার্ড থেকে বর্তমানে ৪১ ওয়ার্ডে উন্নীত হয়েছে। পৌরসভার নামও পরিবর্তন হতে হতে অবশেষে সিটি কর্পোরেশনে স্থিত হয়েছে। ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর কর্পোরেশন সর্বপ্রথম আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীনে আসে। মহিউদ্দিনের আমলে প্রাচীন শহরটি আধুনিক যুগে প্রবেশ করে। মহিউদ্দিন চৌধুরী শহরকে নিয়ে অনেক এক্সপেরিমেন্ট করতে চেয়েছিলেন। তিনি বেশ কিছু স্কুলকে সিটি কর্পোরেশনের কলেজে রূপান্তরিত করেন। মেমন হসপিটালের আধুনিকায়ন করেন; প্রসূতি ও নবজাতকের জন্যও কিছু পদক্ষেপ নেন। স্বাস্থ্য সেবায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনয়ন করেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন। কিন্তু তিনি কিছু অপ্রয়োজনীয় কাজে হাত দিয়ে অনাবশ্যক বিতর্কের সৃষ্টি করেন। সর্বজনশ্রদ্ধেয় বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে অশ্রদ্ধেয় উক্তি এবং পশুসালায় হস্তক্ষেপের চেষ্টা তাঁকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিবোধপূর্ণ সম্পর্কে নিয়ে যায় যা’ তাঁর নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। শেষের দিকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সংস্কার কার্যক্রম থিতিয়ে এসেছিলো। এরপর কর্পোরেশনে যা হয়েছে তাকে বলা যায় রুটিন ওঅর্ক। মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে যিনি মেয়র হয়েছিলেন, তিনি, অত্যন্ত ভদ্র, ন¤্র, নিরীহ মানুষ। তিনি প্রকৃতই একজন ভদ্রসন্তান। উত্তর কাট্টলীর সফলতম কমিশনার তিনি, এলাকার মানুষ তাঁকে একাধিকবার নির্বাচিত করে তাঁর প্রতি তাদের আস্থা জ্ঞাপন করেছিলো। কিন্তু কর্পোরেশনটা ভদ্রলোকের জন্য বেশ বড় কর্মক্ষেত্র হয়ে উঠেছিলো। একজন জেনুইন সোশ্যাল ওয়ার্কার হিসেবে কর্পোরেশনের চেয়ারে তিনি তাঁর ওঅর্থ (ড়িৎঃয) প্রমাণ করার জন্য তাঁর কিছু সময়ের প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু কর্পোরেশনের মেয়াদ তো আর বাড়ানো যায় না।


অতঃপর কর্পোরেশনের কুরসিতে সেই দিগি¦জয়ী যুবরাজের অভিষেক ঘটলো, যার দুরাগত অশ্বক্ষুরধ্বনি বহুদিন ধরেই আমার কানে শ্রæত হচ্ছিলো। তিনি আসলেন, দেখলেন, তারপর বীরের মতো জয় করলেন। চট্টগ্রাম আরেকজন আওয়ামী লীগের মেয়র পেলো-তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম. নাছির উদ্দিন। কর্পোরেশনের অদূরে তাঁর পূর্বপুরুষের ভদ্রাসন বাটী। চট্টগ্রামে মুসলমানদের প্রধান আধ্যত্মিক তীর্থ-আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে আরাকানিদের হাত থেকে চট্টগ্রাম বিজয় করে শায়েস্তা খানের পুত্র বুজর্গ উমেদ খান যে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন, সেই মসজিদের সঙ্গে মেয়র নাছিরের পরিবার দেড়শো/দুশো বছছর ধরে নানাভাবে জড়িয়ে আছেন। তাঁর প্রপিতামহ মওলানা মোহাম্মদ হোসেন, যিনি বুড়া মাদ্রাসা ও ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে অধ্যাপনার সূত্রে ‘মোহাদ্দেস সাহেব’ নামে সমধিক খ্যাতিমান ছিলেন, তিনি শাহী জামে মসজিদের অবৈতনিক পেশ ইমাম ও খতিব ছিলেন। মোহাদ্দেম সাহেবের পুত্র হাফেজ আবু মোহাম্মদ শামসুদ্দিন জামে মসজিদের হাফেজ ছিলেন। রোজার সময় ‘খতম তারাবি’ পাঠের জন্য তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। মেয়র নাছিরের পিতা সৈয়দ মঈনুদ্দিন সাহেব আন্দরকিল্লা এলাকার বিশিষ্ট ভদ্রলোক ও সামাজিকভাবে মান্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
তো আ.জ.ম নাছির নিজেকে কর্পোরেশনের নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করছিলেন অনেক দিন থেকে। চট্টগ্রামে বাংলাদেশের প্রথম টি টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট প্রবর্তন, ব্রাদার্স চেয়ারম্যান, সিজেকেএস সেক্রেটারি, বিসিবির পরিচালকের পদ অলংকৃত করে সামাজিক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দানের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন। অন্যদিকে রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও তিনি ধীরে ধীরে উর্ধারোহন করতে থাকেন এবং নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে অধিষ্ঠিত হন। এরপর তাঁর জন্য কর্পোরেশন আর খুব বেশি দূরে ছিলো না।
মেয়র হয়ে তিনি যে ¯েøাগান দিলেন, সেটা তাঁর মতো তরুণতর মানুষের জন্যই শোভন। তিনি বললেন-“ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি”। অতঃপর তিনি খুব ক্যালকুলেটিভ ওয়েতে পরিচ্ছন্নতা, নালা-নর্দমা প্রশস্তকরণ ও পরিষ্কার করা, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট মেরামত এবং ফ‚টপাথ ও মোড়ের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করে চলেছিলেন একের পর এক। ঢাকঢোল পিটিয়ে নয়, নীরবে এসব কাজ এগিয়ে চললো। বছর তিনেক পর এখন দেখা যাচ্ছে, শহর যেন কোন শিল্পীর ছোঁয়ায় সেজে উঠছে, আয়ল্যান্ডে সূ² কাঁচিতে ছাটা তরুরাজি, তার পত্র-পল্লবের বিস্তর এবং রাস্তার দু’পাশে দেয়াল চুনকাম করে তাতে কোথাও মুরাল কোথাও টাইলস স্থাপন, ফ‚টপাথে পুরোনো ইট তুলে ফেলে নতুন ¯ø্যাব বসিয়ে এক মনোরম উদ্যান নগরীতে পরিণত করা হচ্ছে বুড়ি শহরটিকে। বিজলির আবিষ্কারের পূর্বে চতুষ্কোণ গ্যাস বাতি বসিয়ে সাঁঝবেলা জ্বালিয়ে দেয়ার পর যে ধূসর মায়াময় রোমাঞ্চকর পরিবেশ রচনা হতো, এখন সন্ধ্যার নগরীতে তেমনই শোভা দৃশ্যমান। চৈত্র সংক্রান্তির দিনে জামালখানে প্রাতঃভ্রমণ করতে গিয়ে কোকিলের কুহু কুহু তান শুনতে পেলাম। বেগম আখতারের কণ্ঠে জ্ঞান বাবু (জ্ঞান প্রকাশ ঘোষ) বললে কি হবে, আমার কানে মধু বর্ষণ করলো কোকিলের গান। বেগম আখতার গেয়েছেন-
কোয়েলিয়া গান থামা এবার
তোর ঐ কুহুতান ভালো
লাগে না আর।।
কখনো সান্ধ্য ভ্রমণে বেরিয়ে র‌্যাডিসন থেকে স্টেডিয়াম এলাকার দিকে দৃকপাত করলে সে কি নয়নাভিরাম দৃশ্য- আহা মরি মরি, কি হেরিলাম, নয়নমন সার্থক করিলাম। অপূর্ব দৃশ্য। যেন স্বর্গোদ্যান। এ দৃশ্য অবলোকনের পর আ.জ.ম. নাছিরকে প্রাণভরে আশির্বাদ না করলে কি চলে? নাছির ভাই একেত মেয়র তদুপরি সিজেকেএসএরও সাধারণ সম্পাদক, স্টেডিয়াম সিজেকেএস-এরই নিয়ন্ত্রণাধীন। নাছির ভাই সিজেকেএস-এর নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর স্টেডিয়াম পাড়ার সৌন্দর্য বর্ধনের প্রতি যত্নবান হন।
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশে আবর্জনা, মানুষের মল-মূত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে এমনভাবে থাকতো যে, দুর্গন্ধের ভয়ে পারতপক্ষে তার পাশ দিয়ে কেউ যেতে চাইতো না। তারপরও অনিচ্ছুক কোন পথচারীর সেদিক দিয়ে যাবার প্রয়োজন পড়লে তাকে নাকে রুমাল চেপে দুর্গন্ধের হামলা থেকে বাঁচতে হতো। মেয়র জনাব আ.জ.ম নাছির আউটার স্টেডিয়াম উন্নয়নে উত্তর ও পূর্ব পাশে নান্দনিক পরিসর নির্মাণ এবং ফুটপাথ ও সংশ্লিষ্ট নাগরিক সুবিধার সম্প্রসারণ করতে সেখানে বাগান সৃষ্টি করে ফাঁকে ফাঁকে বসার পাকা বেঞ্চি তৈরি করে দিয়েছেন। যেন মনোরম এক উদ্যান। যার দুনির্বার আকর্ষণে দিনান্তে হাঁপিয়ে ওঠা কর্মক্লান্ত মানুষ একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে সেখানে ভিড় করে। সাঁঝবাতি জ্বলে উঠার পর এক মায়াময় পরিবেশ তৈরি হয়। উত্তর পাশটা আরো মনোহর, দৃষ্টিনন্দন। সেখানে বসে গল্প-গুজব করা যায়, চা পান করা যায়। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবার ব্যবস্থাও আছে। সন্ধ্যা হলেই শহরের মানুষ যেন সেখানে ভেঙে পড়ে।
আ.জ.ম নাছির একজন সুন্দর মনের অধিকারী দুঃসাহসী তেজী পুরুষ। ছোটবেলা থেকে এই মানুষটার বেড়ে ওঠা দেখে এসেছি। পারিবারিক সূত্রে তিনি লাভ করেছেন ভদ্রতা ও ভব্যতা, রাজনীতির সূত্রে অদম্য সাহস ও অতুলনীয় সংগঠনী প্রতিভা। ছাত্রজীবনে তিনি একদল দুরন্ত সাহসী তরুণ পেয়েছিলেন। যাদেরকে দিয়ে তিনি ছাত্র শিবিরের মোকাবেলা করে চট্টগ্রাম শহরে ছাত্রলীগের প্রাধান্য সূচিত করেছিলেন। কাকতালীয়ভাবে মেয়র হওয়ার সময়ও তিনি কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে আসা সেই সাহসী তরুণদেরই একটি অংশকে তাঁর পাশে পেলেন। তাঁর হাত শক্তিশালী হলো। তিনি কর্পোরেশনকে নিয়ে তাঁর আধুনিক চিন্তাভাবনার প্রতিফলন ঘটাতে সাহস পেলেন। ফলে নগর জীবনের নানা সমস্যা সমাধান করে চট্টগ্রামকে একটি নান্দনিক নগরে রূপান্তরের বিভিন্ন পরিকল্পনা তিনি গ্রহণ করতে থাকলেন। তাঁর সহকর্মী কাউন্সিলররা সেসমস্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ শ্রম ও শক্তি দিয়ে জোর তৎপর চালালেন। সেইসব তরুণ, ছাত্রজীবনে আমি যাদের চোখেমুখে দেখেছি সারল্য আর দৃঢ়তা, উদ্দাম তারুণ্য আর আদর্শবাদিতা; বহুদিন আমি পেশা থেকে বিচ্ছিন্ন, তবুও তাদের নাম এক নিঃশ্বাসে উচ্চারণ করতে পারি- চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনি, নাজমুল হক ডিউক, হাসান মুরাদ বিপ্লব, জহুরুল আলম জসিম, এইচ এম সোহেল, শাহেদ ইকবাল বাবু, আবদুল কাদের, শৈবাল দাশ সুমন প্রভৃতি। কাউন্সিলর হননি, কিন্তু আ.জ.ম নাছিরের সঙ্গে পুরোনো সম্পর্কে জড়িয়ে আছেন এমন নেতা কর্মীর সংখ্যাও কম নয়। যেমন ফিরিঙ্গী বাজারের বাচ্চু, শফিক আদনান, ফারুক আহমদ, রায়হান ইউসুফ, নোমান আল মাহমুদ, ঈশা, মনজুর, চেম্বার পরিচালক অহীদ সিরাজ স্বপন, নগর যুবলীগের আহবায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুর ভাই রাজনীতিক-ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন, রফিউল হায়দার রফি, দিদারুল আলম, আমার ভাই মিলন সেনের ভগ্নিপতি ডা. তিমির বরণ ইত্যাদি।
মধু যামিনীর প্রথম প্রহরে স্টেডিয়াম পাড়ার আলো ঝলমলে মনোরম দৃশ্য দেখলে মনে হয় হয় না এটি আমাদের চিরচেনা চট্টগ্রাম। বরং ব্যাংকক শহর বলেই ভ্রম হয়। জামালখানে তো আরো ধুন্ধুমার কাÐ ! সেখানে ডা. এমএ হাশেম চত্বরের রঙিন ফোয়ারার রঙধনু রঙে ফোটায় ফোটায় ঝরে পড়া জলবিন্দু শতধা বিদীর্ণ হয়ে যেন স্বপ্নেরা পাখা মেলে উড়ে উড়ে বেড়ায়। ওদিকে চেরাগী পাহাড়ের চ‚ড়ায় প্রজ্জ্বলিত চাটির আলোর ছায়ায় প্রাগৈতিহাসিক জ্বীনপরীরা ঘুরে বেড়ায়। এসবই জামালখানের কাউন্সিলর শৈবালের কীর্তি। তার নিশ্চয়ই একটা শিল্পীমন আছে। হয়তো অনেক আইডিয়া গিজ গিজ করছে তার মাথায়। শৈবালেরই প্ররোচনায় শুক্রবারে সন্ধ্যায় খাস্তগীর স্কুলের দেয়াল ঘেঁষা ফুটপাথে দেখছি গানের আসর বসে যায়। ঠিক ব্যাংককের মতো। এখন শুধু কারাওকে (কধৎধড়শব) বাকি।
আ.জ.ম নাছির তাঁর প্রিয় জন্মভ‚মি শহর চট্টগ্রামকে পরিচ্ছন্ন ও নান্দনিক শহরে পরিণত করার জন্য আরো কত কাজই না করেছেন এবং প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছেন।
প্রথমেই তাঁর চোখ পড়েছিলো পরিচ্ছন্নতার প্রতি। শহরের আদি বাসিন্দা হিসেবে চিরকাল তিনি যা’ দেখে এসেছেন তা হলো রাজপথে ফেলে রাখা উন্মুক্ত বিশাল ডাস্টবিনে ময়লা জমছে তো জমছেই, নেয়ার নামগন্ধ নেই। তারপর এক সময় ডাস্টবিন উপচে পড়া আবর্জনায় রাস্তা সয়লাব হয়ে যায়। উৎকট দুর্গন্ধে পথচারী নাকে রুমাল নিস্তার পায় না। মাছি ভ্যান ভ্যান করে। অবশেষে কর্পোরেশনের কর্মীরা কোন এক সময় সরিয়ে নিয়ে যায়। নাছির ভাই এসে ঘোষণা দিলেন ডোর টু ডোর আবর্জনা অপসরণ করা হবে। ঘরে ঘরে ছোট ছোট ডাস্টবিন সরবরাহ করা হল। দিনের বেলা ময়লা অপসারণ বন্ধ হয়ে গেল।
পতেঙ্গা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে বিদেশিরা যাতায়াত করেন। প্রথমে তাদের চোখে চট্টগ্রাম শহরের রমনীয় রূপ তুলে ধরার জন্য এয়ারপোর্ট রোডে পরিকল্পিতভাবে গাছ লাগিয়ে সবুজ বেস্টনী গড়ে তুললেন। ক্রমান্বয়ে সমস্ত শহরের সব রাস্তায় বৃক্ষরোপন করে সবুজের অপরূপ সমারোহ গড়ে তুললেন।
এই সবুজে সাজিয়ে তোলা নগরীকে আমিরাতের আল আইন নগরীর সঙ্গে তুলনা করতে ইচ্ছে করে। আল আইনকে বলা হয় ‘গার্ডেন সিটি’। আ.জ.ম নাছির চট্টগ্রামকেও গার্ডেন নগরীতে পরিণত প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন বলে আমাদের প্রতীতি হয়।