কে হচ্ছেন সভাপতি ফজলে করিম নাকি এম এ সালাম?

156

সভাপতি কে হচ্ছেন? উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে এ প্রশ্নটিই বারবার সামনে আসছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে এ পদ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। আলোচনায় আছেন দুইজন। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমএ সালাম।
এ দুই নেতার মধ্যে যে কেউ হতে পারেন সভাপতি। আবার সমঝোতার কমিটি হলে এ দুইজনই পুনরায় সভাপতি-সম্পাদক হতে পারেন। অন্যথায় সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে পারেন নতুন মুখ।
পদ-পদবীর লবিংয়ে সাত প্রার্থীর তৎপরতা থাকলেও সম্মেলন আয়োজন করার মধ্যদিয়ে বড় সফলতার পরিচয় দিয়েছে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ। চট্টগ্রামে উত্তর জেলার সম্মেলনের কারণে কেন্দ্রের কাছে মহানগর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করতে না পারার ব্যর্থতা কেটেছে বলেও মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
লালদীঘি ময়দানে আজ সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছে।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘সাতটি উপজেলায় ধারাবাহিকভাবে সম্মেলন শেষ করেই উত্তর জেলার সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সবার জন্য উন্মুক্ত সম্মেলনে ১০-১২ হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ বিরাজ করছে।’
দলীয় সূত্র জানায়, সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু এমপি, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, প্রচার সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী ও সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন।
নেতাকর্মীরা জানান, সমঝোতা না হলে সভাপতি পদে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ও এমএ সালামের মধ্যেই হবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা। অথবা এ দুই নেতার মধ্যেই সমঝোতার কমিটি হতে পারে। এক্ষেত্রে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় দুই নেতা স্থান পেতে পারেন। বিগত সময়ে দুই নেতা সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনে সফলতা দেখিয়েছেন। ওয়ার্ড-উপজেলা পর্যন্ত দলের সম্মেলন করা, দোস্তবিল্ডিংয়ে দলীয় কার্যালয়ে সৌন্দর্যবর্ধন, গ্রূপিং কমিয়ে আনার মধ্যদিয়ে পুরো জেলার রাজনীতিতে গতিশীলতা বাড়ে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ও এমএ সালামের নেতৃত্বে। যে কারণে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বাদ পড়লে সভাপতি হতে পারেন এমএ সালাম। এক্ষেত্রে সাধারণ সম্পাদক পদে চমক থাকবে।
মিরসরাই আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শেখ আতাউর রহমান, মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইউনুছ গণি চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও রাউজানের পৌর মেয়র দেবাশীষ পালিত, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এটিএম পেয়ারুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন।
নেতা-কর্মীসহ অনেকের ধারণা, এখনও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের একছত্র আধিপত্য আছে। যে কারণে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে মোশাররফের আস্থাভাজন যে কেউ আসতে পারেন। এক্ষেত্রে সাধারণ সম্পাদক পদে মিরসরাই আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শেখ আতাউর রহমানের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তিনি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ঘনিষ্টজন হিসেবেই পরিচিত। সমঝোতা কিংবা কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ না থাকলে ৩৬৬জন কাউন্সিলরের মতামতই নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টিতে প্রাধান্য পাবে বলে জানা গেছে।
তবে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, সম্মেলনের পর কাউন্সিল অধিবেশন না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যদিও কাউন্সিল অধিবেশনের জন্য কাজীর দেউড়ি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সম্মেলনে সমঝোতা না হলে কেন্দ্রীয় নেতারাই আগামীর নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন।
তারা বলেন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ লালদীঘিতে সম্মেলন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। দ্রæত সময়ে সব উপজেলার সম্মেলন শেষ করে জেলা সম্মেলন আয়োজনের মধ্যদিয়ে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নিজেদের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। যা নগর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ পারেনি।
এদিকে সম্মেলন সফল করতে লালদীঘি মাঠ সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। মাঠে টাঙানো হয়েছে সামিয়ানা। ব্যানার-ফেস্টুনে ভরে গেছে মাঠের চারপাশ। বিশৃঙ্খলা এড়াতে ও সম্মেলন সফল করতে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অনুষ্ঠানস্থলে থাকবে দলীয় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী।
এছাড়া পুরো উত্তর জেলায় সম্মেলনকে ঘিরে উচ্ছ¡াস বইছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে জোরেশোরে। ইতোমধ্যে সম্মেলনস্থল পরিদর্শন করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমএ সালামসহ জেলার নেতারা। সাতটি উপ-কমিটি সম্মেলন সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে একমাত্র উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ায় আজ পুরো চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ লালদীঘি ময়দানে উজ্জীবিত থাকবে। এ সম্মেলন আয়োজনে কেন্দ্রের কাছে উত্তর জেলার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে বলেই মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।