কে বলে আজ তুমি নেই?

71

২৭ জুন পূর্বদেশ ও স্মার্ট পরিবারের জন্য কালো অক্ষরে লেখা একটি দিন। পূর্বদেশ-এর স্বপ্নদ্রষ্টা, প্রতিষ্ঠাতা, স্মার্ট গ্রæপের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অন্যান্য পরিচালকদের প্রাণপ্রিয় পিতা মাস্টার নজির আহমদ এদিন সবাইকে কাঁদিয়ে, শোকসাগরে ভাসিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন তাঁর স্রষ্টার সান্নিধ্যে। ২৭ জুন ঘনিয়ে এলেই আমাদের হৃদয় বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। আজ আবার এসেছে সেই দিন-আমাদের কষ্টের, দুঃখের সেই দিন।
শোক, দুঃখ ও বেদনার মধ্যেও তাঁর জীবন থেকে আমাদের কিছু শিক্ষা নেবার বিষয় আছে। সবাই
শিক্ষক হন না। মাস্টার নজির আহমদ যেখানে শিক্ষক হয়েছিলেন, সেখানে সেকালে খুব মানুষই শিক্ষকতার পেশা গ্রহণ করতেন। যাঁরা চিন্তা-চেতনায় অগ্রসর, যাঁরা স্বপ্নবাজ, যাঁরা সমাজকে আলোকিত করার কথা ভাবতেন, তেমন লোকগুলোই শিক্ষকতার পেশা অবলম্বন করতেন। আর এসব শিক্ষকের জীবন হতো দুঃখের। অর্থকষ্ট, সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকতো তাঁদের। যাঁদের পেটে দিতে গেলে পিঠে থাকতো না, পিঠে দিলে পেটে পড়তো না-কখনো আধপেটা, কখনো ঠায় উপোস দিয়ে দিবসরজনী পার করে দিতেন মুখের হাসিটি ধরে রেখে। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা আধময়লা টুটা ফাটা জামা কাপড়ে আবৃত দেহের ওপর শতচ্ছিন্ন ছাতাটি ধরে এই নিরীহ প্রাণীগুলি রাজপথ বা গ্রাম্য মেঠো পথের এক প্রান্ত ধরে গম্ভীর মুখমÐলে নির্বিকার ঔদাসিন্য বজায় রেখে হেঁটে যেতেন অবিচলিত পদক্ষেপে। শিক্ষকের এই চিরায়ত মূর্তি দেখে দেখে বাঙালির জীবনে দিন মাস বছর যুগ কেটে যেতো।
তাঁর মতো শিক্ষক আরো অনেকেই ছিলেন, তাঁর সমকালে বাঁশখালীতে এবং চট্টগ্রামেও। কিন্তু তিনি যেখানে অন্যদের ছাড়িয়ে অনন্য হয়ে গেলেন, সেটা হলো তিনি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার কথা ভাবলেন। তাঁর সমসাময়িক, তাঁর সহকর্মী শিক্ষকদের মধ্যে আর কেউ তেমন করে ভাবলেন না। শুধু ভাবা নয়, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, প্রতিষ্ঠা করে ভাবনাকে বাস্তবে রূপান্তরিতও করে ফেললেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়লেন বটে তিনি; কিন্তু টাকা-পয়সা তো ছেলেদেরই; তারাই উপার্জন করে তাঁর সংসারকে স্বচ্ছল করে তুললো। কাঁচা পয়সা যখন হাতে আসে, অনেকের মাথা ঘুরে যায়। কোন্ পথে কিভাবে খরচ করবে দিশা খুঁজে পায় না। এ সময় কুসংসর্গে পড়ে বিপথগামী হয়ে অনেকের কপাল পোড়ে। টাকার গরম বেশিদিন থাকে না, অচিরেই লালবাতি জ্বালিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। চট্টগ্রামের ইতিহাসে এমন অনেক ধনীর খোঁজ পাওয়া যাবে, এক প্রজন্মে যাদের উত্থান এবং পতনও হয়ে যায়। দু’টি উদাহরণ দিই। বোয়ালখালীর পোপাদিয়া গ্রাম নিবাসী সারদা কৃপা লালা। তিনি বিশ শতকের গোড়ার দিকে চট্টগ্রাম শহরের একজন প্রধান জমিদার ছিলেন। চন্দনপুরায় বর্তমানে যে লাল বিন্ডিংয়ে ফায়ার ব্রিগেডের অফিস দেখা যায়, সেটি সারদা লালারই বাসভবন ছিলো। জমিদার হয়ে প্রভূত অর্থবিত্তের মালিক হয়েছিলেন সারদা লালা; নাচগান, মদ, মেয়ে মানুষের পেছনে তিনি টাকা-পয়সা উড়াতে লাগলেন। শোনা যায়, কলকাতা থেকেও তিনি বাঈজী এনে নাচিয়েছিলেন। তো এই সারদা লালার জমিদারি, ধন দৌলত, শান শওকত সব তাঁর দেহান্তের পর পর কর্পুরের মত উড়ে যায়।
আর একজন হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ধনীর নাম মফজল কেরানী। তিনি আনন্দীপুর মগ পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। সম্ভবত উনিশ শতকের মানুষ। নামের সঙ্গে কেরানী বিশেষণ থেকে ধারণা করা যায় তিনি হয়তো কেরানী ছিলেন। কিন্তু তাঁর অঢেল ধন সম্পদের উৎস কেরানীগিরি নয়। সেকালের অনেক চট্টগ্রামীর মত তিনিও বার্মায় গিয়ে কারবার করে বিপুল ঐশ্বর্যের মালিক হয়েছিলেন। তো হঠাৎ অতুল ঐশ্বর্য হাতে পেয়ে মফজল কেরানী হাওয়ায় উড়তে লাগলেন। শোনা যায় তিনি ১০০ টাকার নোট পুড়িয়ে টিক্কার মত জ্বালিয়ে তামাক খেতেন। তিনি এক বাড়ি তৈরি করলেন যেটি আজো চট্টগ্রামে ইতিহাস হয়ে আছে। এত লম্বা বাড়ি এখনো কেউ তৈরি করতে পারে নি। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক মোহাম্মদ ফেরদাউস খান, তাঁর কৈশোরে শোনা একটি ছড়ার কথা তাঁর আত্মচরিতে উল্লেখ করেছেন। সেখান থেকে ছড়াটি তুলে দিচ্ছি-
লাইল্যা হাটের বাকরখানী,
সিদ্দিক উল্লাহর চায়ের পানি
নূর আহমদ মাস্টারের দাড়ি,
মফজেল কেরানীর বাড়ি।
মফজল কেরানী হঠাৎ মারা গেলে তাঁর পরিবারের ওপর চরম বিপর্যয় নেমে আসে।
এসব কথা মাস্টার নজির আহমদ জানতেন। তাঁর ছেলেরা সোনার ছেলে, তাদের বিপথগামী হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। তবুও পিতা হিসেবে ছেলেদেরকে সৎ পথে ও সৎ কাজে অর্থ ব্যয়ের পথ দেখানো দরকার। তাদের উপার্জিত অর্থকে শিক্ষা দীক্ষায় একেবারে পিছিয়ে থাকা দক্ষিণ বাঁশখালীর শিশু-কিশোরদেরকে শিক্ষার সাথে, জ্ঞানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্য ছেলেদেরকে দিয়েই একে একে স্থাপন করালেন মাস্টার নজির আহমদ কলেজ (২০০৭), আম্বিয়া খাতুন মহিলা ক্যাডেট মাদ্রাসা (২০১২), জোবেদা খাতুন এতিমখানা ও হেফজখানা, মাস্টার নজির আহমদ রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এখানে মাস্টার নজির আহমদকে আমরা একজন আদর্শ পিতা হিসেবে পাচ্ছি। আম্বিয়া খাতুন মহিলা ক্যাডেট মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেছেন নারী শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে। যেখানে পুরষের শিক্ষার জন্যই কোনো স্কুল নেই, সেখানে নারীর শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠান থাকার তো প্রশ্নই ওঠে না। তাই মাস্টার সাহেব পুরুষের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠার পর নারীর জন্যও একটি স্কুল করলেন এবং সেটি আরেকজন নারীর নামে, যিনি ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর সহধর্মিনী ছিলেন, তাঁর নামে।
তাঁর প্রতিষ্ঠিত কলেজটি বর্তমানে স্নাতক স্তরে উপনীত হয়েছে। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে মাস্টার নজির আহমদ ডিগ্রি কলেজ ২১ তম অবস্থানে থাকার গৌরব অর্জন করে। একই সাথে বাঁশখালী উপজেলার শ্রেষ্ঠ কলেজ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
কলেজটি ছিলো নজির আহমদ মাস্টারের কাছে আপন সন্তানের মতো। তাঁর সন্তানরা সবাই শহরে থাকেন। পরিবারের অভিভাবক ও বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যটি শুধু গ্রাম ছেড়ে শহরবাসী হতে রাজি হননি। তার একটি কারণ হচ্ছে-গ্রামের মায়া-যে গ্রামে রয়েছে তাঁর পূর্ব পুরুষের ভিটেমাটি, যে গ্রামে তিনি জন্মেছেন, যে গ্রামে রয়েছে তার শৈশব-কৈশোর-যৌবনের অ¤ø-মধুর স্মৃতি, যে গ্রামে রয়েছে তার খেলার সাথী, তাঁর সহপাঠী-সতীর্থরা, সহকর্মী-আত্মীয়-বান্ধব-স্বজনরা, যে গ্রামের সোঁদা মৃত্তিকায় শান্তিতে ঘুমিয়ে আছেন তাঁর পিতা-মাতা ও অন্যান্য মুরুব্বিরা-সেই তাল-তমাল-হিজল, আম-কাঁঠাল-জাম, বাঁশ-বেতঝোপ, খাল-বিল, খোলা মাঠ-ঘাট-প্রান্তরের সবুজ-শ্যামল ল্যান্ডস্কেপ থেকে মুখ ফিরিয়ে ইট-কাঠ-কংক্রিট, লোহা-লক্কড়ের রুক্ষ-শুষ্ক, প্রাণহীন জঞ্জালের মধ্যে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠতো প্রকৃতির পুত্র নজির আহমদ মাস্টারের। পুত্র-পুত্রবধূদের নাছড়োবান্দা জেদের কাছে হার মেনে কখনো বা শহরে আসতে বাধ্য হলেও দু’দিনেই হাঁপিয়ে উঠতেন এবং গ্রামে ফিরে যাবার জন্য চঞ্চল হয়ে উঠতেন। যতক্ষণ গ্রামে ফিরে যেতে না পারতেন, ততক্ষণ ডাঙ্গায় তোলা মাছের মতো হাবি খেতেন।
এবার পুত্র-পুত্রবধূদের হার মানার পালা। অবশেষে প্রকৃতির পুত্র প্রকৃতির ক্রোড়ে ফিরে গিয়েই যেন প্রাণ ফিরে পেতেন। এই নাড়ির টান ছাড়াও মাস্টারের গ্রামে থেকে যাবার আরেকটি বিশেষ কারণ হলো তাঁর হাতে গড়া ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি দরদ। আগেই বলেছি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিলো তাঁর সন্তানের মতো। আগেই বলেছি কলেজ ছাড়াও একে একে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন আরো তিনটি প্রতিষ্ঠান।


৮৭ বছরের এক পরিপূর্ণ জীবন যাপন করে মাস্টার নজির আহমদ অনন্তের উদ্দেশে যাত্রা করেন। তাঁর জীবনের ভরা কলস কানায় কানায় ভরে উপচে পড়েছিলো পাকা ফসলে। সমস্ত প্রাপ্তি তার হাতের মুঠোয় ধরা দিয়েছিলো এবং ঐশ্বর্য্যে ভরিয়ে দিয়েছিলো। ব্যক্তি মানবের সীমায়িত জীবনের আধারে যখন সকল সদগুণ ও সুকুমার বৃত্তির সমাবেশ ঘটে, তখন তা পূর্ণ প্রস্ফুটিত পুষ্পসম পাপড়ি ছড়িয়ে চতুর্দিক সুরভিত করে তোলে, তখন সে মানুষকে বলতে হয় সম্পূর্ণ মানুষ। নজির আহমদ মাস্টার এমনি এক সম্পূর্ণ মানুষ হয়ে উঠেছিলেন।
স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে মাস্টার সাহেব যদি বাঁশখালীতে শিক্ষা বিস্তারের জন্য একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে থাকেন, তাহলে দৈনিক পূর্বদেশ প্রতিষ্ঠা করে তিনি সমগ্র চট্টগ্রামের মানুষের কল্যাণে একটি মহৎ ও বড়ো কাজ করেছেন। দৈনিক পত্রিকা শুধু মানুষকে খবরের জোগান দেয় না। শিক্ষিতও করে তোলে। মাস্টার মানুষ, তাঁর চিন্তায় সব সময় মানুষের শিক্ষার দিকটাই প্রাধান্য পেয়ে থাকে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত পূর্বদেশ চট্টগ্রামের সংবাদপত্র জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে পত্রিকাটি পাঠকপ্রিয়তায় যেমন চট্টগ্রামের নেতৃস্থানীয় দুটি পত্রিকার শুধু সমকক্ষতাই অর্জন করেনি, একই সঙ্গে স্বকীয় কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে জনসমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। একটি নির্ভুল ভালো পত্রিকা মানুষের ভাষাজ্ঞান বাড়াতে সাহায্য করে। পূর্বদেশও সে কাজটিই বিশ্বস্ততার সঙ্গে করে চলেছে।

পূর্বদেশ কার্যালয়ে দোয়া মাহফিল
আলোকিত সমাজ
গড়ার কারিগর ছিলেন
মাস্টার নজির আহমদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক আলহাজ মাস্টার নজির আহমদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বুধবার বিকেল ৫টায় পূর্বদেশ কার্যালয়ে ইছালে সওয়াব ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। পরে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান দৈনিক পূর্বদেশ এর জিএম ও বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল ইসলাম হোসাইনী।
স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, মাস্টার নজির আহমদ আলোকিত সমাজ গড়ার কারিগর ছিলেন, তিনি আজীবন একটি শিক্ষিত ও জ্ঞাননির্ভর মানবিক সমাজ গড়তে সংস্কারকের ভ‚মিকা পালন করেন। নিজের ভেতর লালিত মানবিকতাকে শিল্পে রূপ দিয়ে সমাজকে আলোকিত করে গেছেন।
বক্তারা বলেন, এক সময় বাঁশখালীতে শিক্ষার হার ছিল কম। ছিল না আধুনিকতার ছোঁয়া। যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অনুন্নত। ঠিক তখনই তিনি শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন, বাঁশখালীসহ দেশের মানুষকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে। জীবনের শেষ অধ্যায়ে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন স্কুল-মাদ্রাসা, এতিমখানা ও কলেজ। যেখানে যুগ যুগ ধরে আলোকিত মানুষ তৈরি হবে। এ ধারা অব্যাহত এবং তা আরও প্রসারিত করছেন তাঁর সুযোগ্য সন্তানরা। যতদিন বাঁশখালী থাকবে, যতদিন চট্টগ্রাম থাকবে, ততদিন মাস্টার নজির আহমদের অবদানের কথা মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবেন। তাঁর কর্ম ও সৃষ্টির কারণে তিনি সবার মাঝে বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল।
স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ফজলুল হক বলেন, পূর্বদেশ পত্রিকা দ্রæত সময়ের মধ্যে গণমানুষের মনে স্থান করে নিয়েছে। এটা মাস্টার নজির আহমদের সার্থকতা। তাঁকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। তাঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। তিনি শুধু আলোকিত সমাজ গড়ার কারিগর নন, ছিলেন শিল্পী। তিনি নিজে সমাজকে আলোকিত করে গেছেন। বর্তমানে মাস্টার নজির আহমদের মত কাজ করে যাচ্ছেন তাঁর রেখে যাওয়া সুসন্তানরা। তারা পিতাকে এমন সম্মান দিয়েছেন, যার কারণে তারা এখনও পিতার পরিচয়ে পরিচিত। তার পরিবারের মত সুসন্তান যদি প্রতিটি পিতার ঘরে থাকত, তাহলে দেশে কোনো বৃদ্ধাশ্রমের প্রয়োজন হত না। মাস্টার নজির আহমদের মত শিক্ষকের কাছ থেকে শেখার অনেক কিছু আছে। আমাদের উচিত হবে তাঁর আদর্শ ও কর্মকাÐ মানুষের মাঝে তুলে ধরা এবং ছড়িয়ে দেওয়া।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর আবু জাফর চৌধুরী বলেন, মাস্টার নজির আহমদ সম্পর্কে অনেক কথা বলার আছে। এত কম সময়ে তার কর্মযজ্ঞ বর্ণনা করা অসম্ভব। তিনি এত সুন্দর মনের মানুষ ছিলেন, যা না দেখলে বলা যাবে না। তিনি সাধারণ হয়ে জন্মেছিলেন ঠিকই কিন্তু অসাধারণ হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন কর্মগুণে। তাঁর মধ্যে লালিত আদর্শ সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়–ক এ প্রত্যাশা করছি।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামল বলেন, মাস্টার নজির আহমদের হাতে গড়া পূর্বদেশ পাঠকের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আজ হয়ত মানুষটি নেই। কিন্তু তার কর্ম সবার মাঝে আলো ছড়াচ্ছে। তিনি শিক্ষক ছিলেন আর শিক্ষকরা অন্ধকার সমাজের সূর্য। তিনি সত্যিকার অর্থে সূর্যের মত আলো ছড়িয়ে গেছেন। তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এটাই তাঁর জীবনের সার্থকতা।
বিএফইউজে’র সাবেক সহ সভাপতি শহীদ উল আলম বলেন, শিক্ষক হয়ে তিনি সবার মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। তার সন্তানরা সারা দেশে সুনামের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। মরহুমের জন্য আমরা দোয়া কামনা করছি।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ বলেন, মাস্টার নজির আহমদ নিজের সন্তানদের সুশিক্ষিত করেছেন। সেই সাথে আলোকিত করেছেন বাঁশখালীকেও। গড়ে তুলেছেন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেগুলো বাঁশখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে আলোকিত মানুষ তৈরি করছে। শেষ জীবনে পূর্বদেশ পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করে মানুষের সেবার দরজা আরও উন্মুক্ত করেন তিনি। যেখানে সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগের কথা প্রতিনিয়ত উচ্চারিত হচ্ছে। যতদিন বাঁশখালী থাকবে, যতদিন চট্টগ্রাম থাকবে, ততদিন মানুষ শ্রদ্ধার সাথে মাস্টার নজির আহমদকে স্মরণ করবেন।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের আশা-ভরসা মাস্টার নজির আহমদের হাতে গড়া পূর্বদেশ। তিনি শেষ জীবনে গণমানুষের জন্য বড় একটি কর্ম রেখে গেছেন, সেটি হল দৈনিক পূর্বদেশ।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক সবুর শুভ বলেন, পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা মাস্টার নজির আহমদের জীবনাদর্শ আমাদের ধারণ করা উচিত। তার হাতে গড়া পত্রিকা সমাজের অন্যায়-অবিচারের বিষয় তুলে ধরে জাতির সেবা করছে। তিনি ভালো মানুষ ছিলেন। তাই ভালো মানুষ দিয়ে তাঁর পত্রিকা পরিচালিত হচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত রাখার আহŸান জানান তিনি।
পূর্বদেশের জিএম কামরুল ইসলাম হোসাইনী অতিথিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সমাজের অন্যায়-অবিচার ও অনাচার তুলে ধরা গণমাধ্যমের কাজ। সে লক্ষ্যে মাস্টার নজির আহমদের হাতে গড়া পূর্বদেশ পত্রিকা গণমানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ফলে পাঠক সমাজে পূর্বদেশ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আগামী দিনে পূর্বদেশ আরও অনেকদূর এগিয়ে যাবে। তাই সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
পূর্বদেশ এর সহকারী সম্পাদক আবু তালেব বেলালের সঞ্চালনায় দোয়া মাহফিলে মোনাজাত পরিচালনা করেন অধ্যক্ষ কেএম মাহমুদুল ইসলাম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পূর্বদেশ এর যুগ্ম সম্পাদক কবি আবু তাহের মুহাম্মদ, লেখক ও প্রকাশক জামাল উদ্দিন, পত্রিকার বার্তা সম্পাদক আবু মোশাররফ রাসেল। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসিন কাজী, পূর্বদেশ এর সিনিয়র রিপোর্টার রতন কান্তি দেবাশীষ, সিনিয়র সহ সম্পাদক মো. ইউসুফ সবুর, লেখক মনসুর নাদিম, লেখক আবু তৈয়ব, ছড়াকার ইমরান চৌধুরী প্রমুখ।
এদিকে পূর্বদেশের প্রতিষ্ঠাতা মাস্টার নজির আহমদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার বাঁশখালীতে মাস্টার নজির আহমদ ট্রাস্ট পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খতমে কোরআন ও দোয়া মাহফিল এর আয়োজন করা হয়েছে।