কেপিএম বাঁচানোর দাবিতে মানববন্ধন

21

এক সময়ের এশিয়ার বিখ্যাত সর্ববৃহৎ কাগজ কল কর্ণফুলী পেপার মিলের (কেপিএম) আধুনিয়কায়নের মাধ্যমে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে মানববন্ধন করেছেন কারখানাটির সাবেক শ্রমিক-কর্মচারী, কর্মকর্তা ও তাদের সন্তানেরা। একইসাথে বেলুনে বেঁধে আকাশে উড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠিও দিয়েছেন তারা।
গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে ‘আসুন কেপিএম বাঁচাই’ সংগঠনের ব্যানারে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে কেপিএম’র সাবেক শ্রমিক-কর্মচারী, কর্মকর্তা ও তাদের সন্তানেরা। কর্মসূচির সমন্বয়ক সাংবাদিক জালালউদ্দিন সাগরের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মুক্তির লড়াইয়ে স্বাধীনতার পর এই প্রতিষ্ঠানটি সরকারি কোষাগারে প্রায় এক হাজার চারশত কোটি টাকা রাজস্ব জমার পাশাপাশি বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। কাগজের গুণগত মানের কারণে বহির্বিশে^ বাংলাদেশকে সম্ভাবনাময় রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত করেছে। অথচ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ঘোষিত ছয়দফা ও স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতি বিজড়িত কর্ণফুলী কাগজ কল দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাবে বন্ধ হতে বসেছে।
কেপিএম বন্ধ হয়ে গেলে খোলাবাজারে তার বিরুপ প্রভাব পড়বে দাবি করে কেপিএম হাইস্কুল ও কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল সুবিমল চৌধুরী বলেন, সরকারি নিয়ন্ত্রাণাধীন এই কাগজ কলের কারণে ব্যক্তি মালিকানাধীন কাগজ কলের মালিকরা কাগজের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে বাধ্য হচ্ছে। আজকে যদি কেপিএম বন্ধ হয়ে যায় তাহলে কাগজের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। সেক্ষেত্রে নি¤œ আয়ের মানুষের সন্তানদের পড়ালেখা হুমকির মুখে পড়বে।
মাকসুদুল রুমি বলেন, কেপিএম বন্ধ হয়ে গেলে কারখানার নিজস্ব ও লিজপ্রাপ্ত ১,২৭,৫২৯.৬ একর ভ‚সম্পত্তি পুরোটাই বেদখল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভাবনাময় উর্বর এই ভূসম্পতি কাজে লাগিয়ে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে আধুনিকায়নের মাধ্যমে কেপিএমকে পুরোপুরি সচল করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ^াস করি, আপনার সরকারের ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ এর শিল্প সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে কেপিএমও হতে পারে অন্যতম অংশীদার। এজন্যে দক্ষ ব্যবস্থাপনায় কেপিএমকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করে মাহবুব মজিদ সোমি বলেন, সংস্কারের নামে কেপিএম’র সাথে শুধুই মশকরা করা হয়েছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। কার্যত কোনো সংস্কার হয়নি। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কেপিএমকে বাঁচানো সম্ভব বলে দাবি করেন ‘আসুন কেপিএম বাঁচাই’ কর্মসূচি পালনকারীরা।
কেপিএম স্কুলের সাবেক ছাত্র কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, একসময়ের এশিয়ার বিখ্যাত এই কাগজ কলকে লোকসানি প্রতিষ্ঠানের তকমা দিয়ে বন্ধ করে দিতে পরিকল্পিত ভাবে কেপিএম’র দক্ষ শ্রমিক কর্মচারীদের বিসিআইসি’র অন্য প্রতিষ্ঠানে বদলী করা হয়েছে।
অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কর্ণফুলি কাগজ কলকে কেন্দ্র করে তিন পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে সম্প্রীতির যে সোহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে সে পরিবেশ ও ভারসাম্য টিকিয়ে রাখতে হলেও কর্ণফুলি কাগজ কলকে বন্ধ হওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে।
মানববন্ধনের সমন্বয়ক জালালউদ্দিন সাগর বলেন, আমরা কোনো প্রকার আন্দোলন করতে আসিনি কিংবা দাবি নিয়েও আসিনি। আমরা এসেছি কেপিএম কে বাঁচাতে মায়ের (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কাছে ফরিয়াদ জানাতে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি আমাদের সক্ষমতায় পদ্মাসেতু নির্মাণ করতে পারি, দশ লক্ষ রোহিঙ্গার পেটে ভাত দিতে পারি তবে কেন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত এই কারখানাটিকে বাঁচাতে পারবো না কেনো?
মানববন্ধনে সফিউল করিম খোকন, প্রকৌশলী সেলিম উল্লাহ, প্রফেসর মো. শাহাব উদ্দিন, আহসান হাবিব শুভ্র, শাখের হোসাইন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বিজ্ঞপ্তি