কেন ভিয়েতনামকে বেছে নিলেন ট্রাম্প-কিম?

48

ভিয়েতনামে বেশ তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিলো আমেরিকার। যদিও সে যুদ্ধ শেষ হয়েছে ৪৪ বছর আগে। তারপর ভিয়েতনামকে কেনো নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবে নিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৯৬৫ সালের মার্চে ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নিতে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের দানাং শহরে নেমেছিলো মার্কিন সৈন্যদল। আর এর ৫৪ বছরের মাথায় সেই একই শহরে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে ভিয়েতনামের সাবেক শত্রু আমেরিকা আর আমেরিকার সাথে যুদ্ধের সময়কার মিত্র উত্তর কোরিয়া। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিশ্চিত করেছেন যে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং আন এর সাথে তার বৈঠক হবে ভিয়েতনামে আগামী ২৮ ও ২৮শে ফেব্রæয়ারি। এই ভেন্যু হতে পারে দানাং বা হ্যানয়।
কিন্তু ভিয়েতনাম কেন?
কমিউনিস্টরা শাসন করলেও ভিয়েতনাম কার্যত পুঁজিবাদী অর্থনীতি। আর দেশটি এখন একই সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মিত্র। দুপক্ষের চাহিদা পূরণে নিরপেক্ষ হোস্ট হিসেবেই দেশটিকে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে বলছেন নিউ সাউথ ওয়েলস ইউনিভার্সিটির ভিয়েতনাম বিশেষজ্ঞ কার্ল থ্যায়ার। ‘প্রথম বিষয় হলো শীর্ষ বৈঠকের সময় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার সক্ষমতা আছে দেশটির। আর দু পক্ষই মনে করছে দেশটি নিরপেক্ষ’।
কিম কেনো রাজী হলেন?
উত্তর কোরীয় নেতার জন্য চীনের ওপর দিয়ে ভিয়েতনাম উড়ে যাওয়া নিরাপদ বেশি। আর খুব অল্প কয়েকটি দেশের মধ্যে ভিয়েতনাম একটি যার সাথে একই সাথে ওয়াশিংটন ও পিয়ংইয়ং এর সুসম্পর্ক আছে। আর এর মাধ্যমে উত্তর কোরীয় নেতা প্রমাণ করতে চাইছেন যে তার দেশ বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। কিম জং আন ভিয়েতনাম ডেভেলপমেন্ট মডেল দিয়ে পড়ালেখা করেছেন এবং এবার নিজে থেকেই দেশটির রূপান্তর দেখার সুযোগ পাবেন। ‘ভিয়েতনামের সাথে যুদ্ধ আবার যুদ্ধের পর ক‚টনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করে নিয়ে আসা। মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা। এসব বিষয়ই এখন উত্তর কোরীয় নেতার জন্য আগ্রহের বিষয়,’ বলছিলেন অধ্যাপক থ্যায়ার।
ট্রাম্প কেনো রাজী হলেন?
যদি ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক সাফল্য কিম জং আনকে উৎসাহিত করে তাহলে সেই একই বিষয় হয়তো উদ্বুদ্ধ করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্টকেও। ‘দৈ মৈ’ নামে পরিচিত ১৯৮৬ সালে নেয়া সেই অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি ভিয়েতনামকে তৈরি করেছে এশিয়ার সবেচয়ে দ্রæত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে। অ্যাপেক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে ট্রাম্প ২০১৭ সালে ভিয়েতনাম সফর করেছেন এবং ভিয়েতনামকে একটি কমফোর্ট জোনই মনে হয়েছে তখন, বলছিলেন অধ্যাপক থ্যায়ার। এছাড়া ব্যাপক বিধ্বংসী মারণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধে সমর্থন দিয়ে যে সহযোগিতা ভিয়েতনাম করেছে তাও স্বীকার করে মার্কিন কর্মকর্তারা। নতুন ইতিহাস হবে ভিয়েতনামে?
ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্র- উত্তর কোরিয়া শীর্ষ বৈঠকের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। দক্ষিণ কোরীয় নেতার মুখপাত্র বলেছেন, ‘ভিয়েতনাম এক সময় লড়াই করলেও এখন দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু। আমরা মনে করি যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার নতুন ইতিহাস রচনার জন্য ভিয়েতনাম হবে চমৎকার একটি জায়গা’।