কেন দিল, কেনই বা কেড়ে নিল : রইজ উদ্দিন

47

নগরকেন্দ্রীক সাহিত্যাঙ্গনে ‘অপরিচিত’ এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদ স্বাধীনতা পদকের তালিকায় নিজের নাম দেখে যেমন বিস্মিত হয়েছিলেন, তেমনি তার কাছে বিস্ময় হয়ে দেখা দিয়েছে নাম বাদ পড়াটাও। কেন তাকে এই পদকের জন্য মনোনীত করা হল, আর কেনই বা বাদ দেওয়া হল- সেই প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছেন না তৃণমূলে সাহিত্য চর্চায় নিবেদিত সদ্য সাবেক এই সরকারি কর্মকর্তা। গত বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীতদের তালিকায় সাহিত্যে রইজ উদ্দিনের নাম বাদ দিয়ে সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। খবর বিডিনিউজের
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রইজ উদ্দিন গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘তখনও যেমন বিস্মিত হয়েছিলাম, এখনও বিস্মিত হলাম। কেন দিল, কেন (কেড়ে) নিল? এটা তো সরকারের সিদ্ধান্ত।’
গাঙচিল সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রইজ উদ্দিন বলছেন, তার পদকপ্রাপ্তিতে সমালোচনার যে ঢেউ বয়ে গেছে, তাতে তার কাছে মনে হয়েছে বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গনে হাতে গোনা কিছু ‘কৌলিন্যের দাবিদার’ রয়েছেন। তাদের ভাবটা এমন যে, তাদের বাইরে আর কেউ এই ধরনের পদক পেতে পারেন না।
গত ২০ ফেব্রূয়ারি নয় ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে এবারের স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীত করা হয়। সেখানে সাহিত্যে রইজ উদ্দিনের নাম দেখে অনেক কবি-সাহিত্যিক বিস্ময় প্রকাশ করেন।
বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘এবার সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেন রইজ উদ্দীন, ইনি কে? চিনি না তো। নিতাই দাসই বা কে! হায়! স্বাধীনতা পুরস্কার!’
বিষয়টি নিয়ে সমালোচনামুখর হয়েছিলেন সাহিত্যের আরও অনেক পরিচিত মুখ। সে সময় প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রইজ উদ্দিন বলেছিলেন, ‘প্রথমে আমি বুঝতেই পারিনি এত বড় পুরস্কারের জন্য আমাকে মনোনীত করা হয়েছে। পরে যখন বুঝতে পারলাম সত্যি সত্যি এটা করা হয়েছে, তখন আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। বুঝতে পারছেন এতবড় একটা পুরস্কার পেলে কেমন হয়! আমি খুবই খুশি যে, গ্রাম-বাংলার শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করলে স্বাধীনতা পদকের মতো এত বড় পুরস্কার পাওয়া যায়।’
বেসামরিক সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পাওয়ায় উচ্ছ¡সিত রইজ উদ্দিন বলেছিলেন, ‘জাতীয় পুরস্কার পেলে কেমন লাগে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।’
রইজ উদ্দিন ২৫টির বেশি বই লিখলেও তিনি ও তার লেখা এর আগে কখনও আলোচনায় আসেনি। আকস্মিক সর্বোচ্চ পদকপ্রাপ্তদের তালিকায় তার নাম বিস্ময় জন্ম দিয়েছিল সাহিত্য অনুরাগীদের মধ্যেও। সোশাল মিডিয়ায় বিভিন্ন জনের সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি টেলিভিশন টক শোর আলোচনার বিষয়বস্তুও হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
বিষয়টি তার জন্য এক ধরনের চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বলে জানালেন গত ১৫ জানুয়ারি খুলনা বিভাগীয় উপ-ভূমি সংস্কার কমিশনারের পদ থেকে অবসরে যাওয়া রইজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে আসলে যেভাবে আমাদের বুদ্ধিজীবীরা সমালোচনা করছিল এখন বরং মনে করছি, একটা চাপ কমল।’
এভাবে তার সমালোচনার পেছনে অনেকের ‘না পাওয়ার বেদনার’ বহিঃপ্রকাশ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘আমি কাজ করি তৃণমূলের কবি-সাহিত্যিক নিয়ে, হাজার হাজার কবি-সাহিত্যিক নিয়ে, তাদের লেখা কীভাবে মানোন্নয়ন করা যায় তা নিয়ে। লেখক সমাজের কীভাবে উপকার করা যায়। এখন না পাইলে যা হয়। তারা পায়নি এজন্য (সমালোচনা করেছেন)। পুরস্কারের জন্য তো প্রস্তাব লাগে।’
নিজের পদকপ্রাপ্তি নিয়ে রইজ উদ্দিন বলেন, ‘আপনাকে যদি দিতে হয় প্রস্তাব দিতে হবে। যারা দিয়েছিল তারাই বলতে পারেন কেন দিয়েছিল। আমরা যে তৃণমূল পর্যায়ে এটা একটা মফস্বল শহরে কাজ করি, তারা বিবেচনায় এনেছিল। কিন্তু কৌলিন্যের দাবিদাররা ছাড়া এটা পাবে না এ রকম। ওই হাতে গোনা যারা আছে এ রকম একটা ভাব।’
বিষয়টি নিয়ে অনেকে ‘আজেবাজে’ কথা বলছেন, যাতে লাগাম টানা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রইজ উদ্দিনের জন্ম ১৯৬০ সালের ১৫ জানুয়ারি, নড়াইলের লোহাগড়া থানার কুমড়ী গ্রামে। স্বাধীনতা পুরস্কারের ঘোষণা অনুযায়ী, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা।